Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রক্ষায় নেই উদ্যোগ

হারিয়ে যাচ্ছে ফাগুনে আগুন ঝরানো শিমুল গাছ

প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ফাগুনে আগুন ঝরানো উপকারী শিমুল গাছ। দামুড়হুদার গ্রামাঞ্চলে এ গাছকে অনেকে পাকড়া গাছও থাকে। আগুন ঝরা ফাগুনে চোখ ধাঁধাঁনো গাড় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ আগের মতো এখন আর চোখে পড়ে না। এ গাছ হারিয়ে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপর। এ গাছ রক্ষায় উদ্যোগ নেয় প্রয়োজন। জানা গেছে, দেশের প্রায় সব এলাকায়ই শিমুল গাছের প্রচলিত নাম শিমুল বা তূলা গাছ। ইউনানী নাম সেম্ভল। আয়ুর্বেদিক নাম শিমুল বা শেম্ভল, ইংরেজি নাম ঝরষশপড়ঃঃড়হ ঃৎবব. আর এর বৈজ্ঞানিক নাম ইড়সনধী পবরনধ খরহহ (বোমবাক্স সাইবা লিন)। এটি ইড়সনধপধপবধপ (বোমবাকাসিয়াক) পরিবারের অন্তর্গত উদ্ভিদ। শিমুল গাছ বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই কম বেশি দেখা যায়। সাধারণত বীজ ও কা-ের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। রোপণের ৫-৬ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। প্রাকৃতিকভাবে তুলার সাথে উড়ে উড়ে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়। আগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ধার, মাঠ ও বসতবাড়ির পাশে বড় বড় শিমুল গাছ দেখা গেলেও বর্তমানে বড় গাছ তেমন একটা চোখে পড়ে না। অন্যান্য গাছের মতো এ গাছ কখনো কেউ শখ করে লাগায় না। নেয়া হয় না কোন যতœ। সাধারণত অযতেœ অনাদরে প্রাকৃতিকভাবেই এ গাছ বেড়ে ওঠে। জ্বালানি, নির্মাণ কাজ, নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যাপক ব্যবহার হওয়ায় এলাকা থেকে শিমুল গাছ ক্রমান্বয়ে উজাড় হচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন দামুড়হুদা উপজেলাসহ চুয়াডাঙ্গার জেলার সর্বত্রই এ গাছ চোখে পড়তো। সুদুর অতীতেও বসন্তের শুরুতেই গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে জন্ম নেয়া ও অনাদরে বেড়ে ওঠা শিমুল গাছের শাখাগুলো ঘোমটা পরা গ্রাম্য নববধূর সাজে সজ্জিত দেখা যেত। অন্যান্য গাছের তুলনায় শিমুল গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় বহু দূর থেকে এ মনোরম দৃশ্য চোখে পড়তো। সবুজ বনানীর ভেতরে আগুন রাঙা শিমুল ফুলের বাহারে চোখ জুড়িয়ে যেত। আদিকাল থেকে দামুড়হুদাসহ আশপাশ এলাকায় বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে শিমুল ফুল প্রকৃতির শোভাবর্ধন করে আসছে। অথচ বর্তমানে মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে কারণে-অকারণে কেটে ফেলছে। দৃষ্টিনন্দন শিমুল ফুলের টকটকে লাল পাঁপড়িগুলো মানুষের নজর না কেড়ে পারে না। কেবল সৌন্দর্যই নয় শিমুল গাছের রয়েছে নানা উপকারিতা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব¡। এ গাছের কাঠ দিয়ে এক সময় ম্যাচের খোল, টুথপিক তৈরি হতো। বর্তমানে ব্যাপক হারে ইমারত নির্মাণ কাজে সাটারিংয়ের পাটাতন, নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদি পশুর খুব প্রিয় খাদ্য। এ গাছের ছাল, শিকড় ও বীজ ঔষধি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষ করে পুরুষের শুক্রবর্ধক হিসাবে এবং মেয়েদের প্রদর ও অতিরিক্ত রক্ত¯্রাবে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে থাকে বলে এখনও গ্রামাঞ্চলে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। শিমুল গাছ ৯০ থেকে ১০০ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে দেখা যায়। সেই তুলনায় মোটাও হয় বেশ। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে শিমুল গাছ এক দেড়শ’ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই শিমুল গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে তুলায় আটকে থাকা বীজ বেরিয়ে বাতাসে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। আর তুলার সাহায্যে বীজ উড়ে গিয়ে এর বংশ বিস্তার হয়। তাই ফল ফাটার আগেই গাছ থেকে পড়ে এ থেকে তুলা ছাড়িয়ে রোদ্রে ভালভাবে শুকিয়ে নিলে বীজ ও তুলা আলাদা হয়ে যায় এবং এ তুলা ব্যবহার উপযোগী হয়। একটি বড় আকারের শিমুল গাছ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ১০-১২ হাজার টাকার তুলা পাওয়া যায়। এ গাছ উজাড় হওয়ার ফলে পরিবেশের উপরেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। এ গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় কাক, কোকিল, চিল, বক, কাঠ ঠোকরাসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি বাসা বেঁধে বসবাস করতো। এ গাছ উজাড় হওয়ার ফলে এসব পাখিরাও আবাসস্থল হারিয়ে পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। গাছ না থাকায় আবাসস্থলের অভাবে ধীরে ধীরে এসব পাখিরা হারিয়ে যাচ্ছে এলাকা থেকে। উপজেলার দর্শনা পুরাতন বাজারের লেপ-তোষক ব্যবসায়ী আঃ রব জানান, সত্তরের দশকেও প্রতি মণ শিমুল তুলা ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু বর্তমান বাজারে শিমুল তুলা প্রায় নয় হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সারা বছর নানা কাজে ব্যবহারের জন্য ব্যাপকহারে এ গাছ কাটা হলেও সেই তুলনায় রোপণ না হওয়ায় গাছের সংখ্যা কমছেই। বর্তমানে বড় গাছ সচরাচর চোখে পড়ে না। সচেতনমহল মনে করেন, সরকারি ও বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে রাস্তার ধার, পুকুর পাড়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পতিত জমিতে অন্যান্য গাছের পাশাপাশি আমাদের প্রয়োজনেই প্রতি বছর কিছু কিছু শিমুল গাছ রোপণ করা উচিৎ। বর্তমানে যেভাবে শিমুল গাছ উজাড় হচ্ছে তাতে করে এ গাছ রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা না নিলে এক সময় উপকারী গাছের তালিকা থেকে এ গাছটি হারিয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো জানতেও পারবে না বাংলার মাটিতে শিমুল নামের কোন গাছ ছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রক্ষায় নেই উদ্যোগ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->