Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এলাকাবাসীর বিক্ষোভ শ্রমিক, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের পলায়ন

কুড়িগ্রামের এলজিইডির নির্মাণাধীন সেতুতে অনিয়মের অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম : স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি কুড়িগ্রামের আওতায় জেলার ৯টি উপজেলায় ব্রীজ,কালর্ভাট,সড়ক,বিদ্যালয়.গ্রোসেন্টার নির্মান কাজে চলছে ব্যাপক অনিয়ম।প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর অসততায় জেলা ব্যাপি গতানুগতিক নির্মানাধীন প্রকল্পগুলোতে তদারকি নেই বললেই চলে।আর এ সুযোগ গ্রহণ করছেন  নির্বাহী প্রকৌশলীর আর্শিবাদপুষ্ট অসাধু ও ক্ষমোতাসীন দলের কতিপয় ঠিকাদাররা। জেলা ও উপজেলা প্রকৌশল বিভাগে অভিযোগ দায়ের করলেও নি¤œœমানের কাজ রোধ কারা সম্ভব না হওয়ায় স্থানীয় জনগনই এখন বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। এরই প্রতিফলন ঘটেছে ভূরুঙ্গামারীতে। রাতের আধারে চলছে সেতু নির্মাণে নি¤œমানের কাজ। ভোরে ব্রিজের কাজে অনিয়ম দেখতে পেয়ে শত-শত বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী উপস্থিত হলে শ্রমিক ও এলজিইডির প্রকৌশলী কাজ বন্ধ করে পালিয়ে যায়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়। তিনি এলজিইডির কুড়িগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানান। নির্বাহী প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে নাটকীয়তার আশ্রয় নিয়ে ঠিকাদারের শাস্তি ও সেতুর কাজ পুনরায় করার ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জানাগেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের রংপুর ডিভিশন রুরাল ইনফেকশন ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের থানাঘাট এলাকায় ফুলকুমর নদের উপর ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি সেতুর কাজ চলছে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৬০টাকা। এরমধ্যে এক কোটি ৬৩ লাখ চার হাজার টাকা চুক্তির টেন্ডারে কুড়িগ্রামের উজ্জল কুমার দে নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির নামে সেতুটির নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। বর্তমানে পাইলিং এর কাজ চলছে।এলজিইডি কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকেীশলী মোঃ রুহুল আমীন এর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রকল্পটি ক্রয় করে সেতুটির নির্মাণ কাজ করছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা ওয়াহেদুজ্জামান। এ পর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাতে পাইলিং এর কাজ করা হলে কাজ নি¤œমানের অভিযোগ তোলে স্থানীয়রা। পরে ভোরে এসে তারা দেখতে পায় ৮১ ফুট পাইলিং হওয়ার কথা। কিন্তুু রাতের আঁধারে ৮১ ফিটের গর্তে ৩টি রডের খাঁচা ব্যবহার করার কথা থাকলেও সেখানে ৩০ফিট উচ্চতার একটি রডের খাচাঁ ফেলানো হয়। খাচাঁতে সিমেন্ট ব্যবহার না করে শুধু বালু আর পাথর দিয়ে পাইলিংয়ের কাজ  করে। সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করা হয় মাত্র উপরের অংশের ছয় ফিট। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা কাজে বাধা দেয়। পরে কাজ ফেলে পালিয়ে যায় শ্রমিক ও এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোবাইদুল ইসলাম।।
ব্রিজের পাইলিং কাজে নিয়োজিত শ্রমিক রহিম সাদু ব্রিজের পাইলিংয়ের কাজে নি¤œমানের কাজ করার কথা স্বীকার করে বলেন,আমাদেরকে যে ভাবে কাজ করার জন্য ঠিকাদার নির্দেশনা দিয়েছে সেভাবে আমরা কাজ করেছি। এরআগে আরো ১৭টি পাইলিংয়ের কাজ করা হয়েছে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী, আয়নাল হক জানান, আমাদের থানাঘাট ফুলকুমরের উপর একটি ব্রিজের কাজ চলছে। এখানে ব্রিজের কাজের জন্য কোন সাইনবোর্ড নেই। ঠিকাদারের প্রতিনিধি ওয়াহেদুজ্জামান দলীয় প্রভাবে এলজিইডি’র অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ব্রিজের নি¤œমানের কাজ করছেন তার খেয়াল খুশি মত।তারা রাতে কাজ করেন। গত বৃহস্পতিবার ভোরে একটি পাইলিংয়ের কাজ মাত্র দশ মিনিটে শেষ করেন। এব্যাপারে প্রকল্পটির ঠিকাদার উজ্জল কুমার দের সংঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, কে কোথায় কিভাবে করছে আমি জানিনা।নিউজ করে কি হবে।বরং না করাটাই ভাল হবে।  
এ বিষয়ে ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ব্রিজের কাজ ঠিকই চলছিল। কিছু লোক সমস্যাটা তৈরী করেছে। এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
এ ঘটনার পর তথ্য জানতে উপজেলা এলজিইডি অফিসে গেলে তথ্য দিতে গরিমসি করেন । দায়িত্বরত উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোবাইদুল ইসলাম গা-ঢাকা দিয়েছেন। তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।।
এ বিষয়ে এলজিইডির ভুরুঙ্গামারী উপজেলা প্রকৌশলী এন্তাজুর রহমান বলেন, ঠিকাদার চোর করতে গেছে ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া। তাহলে তো এমন হবে। কাজ একটু কমবেশি হয়। তবে উক্ত উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোবাইদুল ইসলাম কে শোকজ ও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা আমি জানিনা।
এলজিইডির কুড়িগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী  রুহুল আমিন বলেন, সরেজমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অফিসিয়ালি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সত্য নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিক্ষোভ শ্রমিক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ