পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে কলহ-বিরোধ নিরসনে গতি আসছে। বৈরিতা ভুলে এক কাতারে আসছেন নেতারা। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে। জাতীয় নির্বাচনের আগে গৃহবিবাধের অবসানে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্যোগ তৃণমূলে প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তার উপস্থিতিতে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় সংগঠন ও মাঠ রাজনীতির চালচিত্র স্পষ্ট হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় দেয়া ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে ব্যাপক সমর্থন পাওয়া গেছে। ‘দল ক্ষমতায় না থাকলে এখন যারা টাকা পয়সা রোজগার করছেন তা নিয়ে তাদের পালাতে হবে’ এমন হুঁশিয়ারি দেন তিনি। অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজের এক জরিপে তার বক্তব্যে প্রতি ৯২ শতাংশ সমর্থন মিলেছে। অপরদিকে তার এমন হুঁশিয়ারীতে নড়েচড়ে বসছেন দলের সুবিধাবাদি নেতারা। পক্ষান্তরে উজ্জীবিত দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। ওইদিনের সভায় তিনি দ্রæত দলে কলহ-বিরোধ মিটিয়ে ফেলারও নির্দেশনা দেন।
বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকে মাঠে নেই বিএনপি। স্থানীয় সরকারের প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। মাঠবিরোধী দল শূন্য হলেও নিজেদের মধ্যে কলহ-বিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উপজেলায় সহিংসতায় অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এতে করে কোন কোন এলাকায় সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়ে। দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের ঘিরে একেকটি বলয় তৈরি হয়েছে। এ বলয় থেকে অনেক দূরে রয়েছে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। এতে করে তৃণমূলের সাথে নেতাদের বন্ধন শিথিল হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিনটি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় জেলা নেতাদের মধ্যে তেমন বিরোধ না থাকলেও প্রায় প্রতিটি উপজেলায় চরম কোন্দল রয়েছে। কোথায় মন্ত্রী-নেতা, কোথাও এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্ব›েদ্ব বিভক্ত আওয়ামী লীগ। তবে মহানগরীতে বিরোধ ক্ষণে ক্ষণে সংঘাত-সহিংসতায়ও রূপ নিচ্ছে। বিরোধের একদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আর অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। আর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় তৃণমূল পর্যন্ত কোন্দলে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জেলা সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরোধ এখন প্রকাশ্যে।
জাতীয় কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পরপর চট্টগ্রাম এসে দলের অভ্যন্তরে কলহ-বিরোধ নিরসনের উদ্যোগ নেন ওবায়দুল কাদের। এ ধারাবাহিকতায় আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ় করতে মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিন জানতে প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের কলহ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীনের বাহাস নগরীর রাজনীতিতে উত্তাপের সৃষ্টি করে। এমন উত্তেজনার মধ্যে গত শনিবার অনুষ্ঠিত হয় প্রতিনিধি সভা। ওই সভায় ওবায়দুল কাদের দুই নেতাকে বিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান জানান। তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সবার মুরুব্বি উল্লেখ করে বলেন, মেয়র নাছির কোন দোষ করলে তাকে বাড়িতে নিয়ে সংশোধন করবেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী থাকতে এসব বিরোধ নিরসনে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপেরও প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘আমি কোন বিরোধ দেখতে চাই না।’
ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা অকুণ্ঠ সমর্থন দেন। নগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতাও ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গিকার পুনর্ব্যক্ত করেন। মে দিবসে লালদীঘি ময়দানের শ্রমিক সমাবেশে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গিকার করেন ওই দুই নেতা। প্রতিনিধি সভায় দল ও জোটের শরিক দলের তিনজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন তৃণমূলের নেতারা। আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন না দেয়ারও দাবি করেন অনেকে।
দলের নেতাকর্মীরা জানান, নিজেদের মধ্যে দূরত্ব থাকলেও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে সার্বক্ষণিক সক্রিয় রয়েছেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন। তাদেরকে ঘিরেই নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। মন্ত্রী-এমপিসহ মহানগরের অনেক নেতার বিরুদ্ধে দলীয় কর্মকান্ডে অংশ না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, এসব নেতারা ক্ষমতা উপভোগ করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। তাদের বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করারও অভিযোগ রয়েছে। প্রতিনিধি সভায় দেয়া ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে এসব সুবিধাবাদী নেতারা নড়েবড়ে বসেছেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে কোন্দল এখন প্রকট। ইউনিয়ন পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নকে ঘিরে মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও প্রতিমন্ত্রী জাবেদের বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। জাবেদ সরাসরি জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন। জেলা নেতাদের অনেকে একজোট হয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ পাঠান। তবে শেষ পর্যন্ত সাংগঠনিক কোন ব্যবস্থার খবর পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে কলহ-বিরোধ চরমে ওঠে। বিভিন্ন উপজেলাতেও দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রথম চট্টগ্রাম আসার পর সার্কিট হাউসে ওবায়দুল কাদেরকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পটিয়াকেন্দ্রিক দুই গ্রæপ। দলের নেতারা জানান, ওই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনও কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রতিনিধি সভায় এসব বিষয়ে উত্তাপ ছড়াতে পারেন তৃণমূলের নেতারা। আগামীকাল শনিবার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও তা এখন আর হচ্ছে না। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান জানান ঈদের পর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।