Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার করাতি সম্প্রদায়

| প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাহেদুল হক,আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে : করাতি সম্প্রদায় আজ আর তেমন নেই। কালের বিবর্তন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা পেশা বদল করেছেন। তাই আগের মতো তেমন আর চোখে পড়ে না করাতিদের গাছ কাটতে। এক সময় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার প্রায় গ্রামেই করাতি সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করতো। তারা প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুম এলেই বিভিন্ন জেলা থেকে দল বেঁধে এসে এ উপজেলার কয়েকটি স্থানে ঘাঁটি করতো। তাদের পেশাই ছিল গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করে গাছ কাটার কাজ নেওয়া। তৎকালীন সময়ে গাছ কাটতে হলে করাতিদের অপেক্ষায় থাকতে হতো গৃহস্থালীদের। বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে লাভজনক অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় করাতিরা আজ বিলুপ্ত প্রায়। তবুও জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে এখনো দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এ পেশাকে ধরে রেখেছে কেউ কেউ। নব্বই দশকের আগেও করাতিদের গাছ কাটার দৃশ্য দেখতে পাড়ার ছেলেরা ভিড় করতো। গানের সুরে তাল মিলিয়ে তাদের কাজে হাত বাড়াতো। করাতিরা সকাল সকাল গুড়-পান্তা খেয়ে কাজে নেমে পড়তেন। ওই সময় করাতি দলের তিন সদস্য গাছ কাটায় নিয়োজিত থাকলেও অন্যজন ব্যস্ত হয়ে পড়তেন রান্না-বান্নার কাজে। এভাবে পুরো মৌসুম কাটিয়ে দিতেন তারা। কয়েক মাস পরে গ্রামের সব কয়টি গাছ কেটে চিরে করাতিরা বাড়ি ফিরতেন। জানা যায়,তখনকার সময়ে করাতিরা মাটিতে গর্ত করে বা কাঠের কাঠামো তৈরি করে করাত চালিয়ে গাছ কাটতেন। এই ধরনের করাত চালাতে উপরে আর নিচে অন্তত দুই বা ততোধিক মানুষের প্রয়োজন হয়। হাতলযুক্ত করাত দিয়ে উপর-নিচ টেনে একটি গাছ থেকে বিভিন্ন সাইজের কাঠ চিরানো হয়। তৈরিকৃত বিম আর তক্তা দিয়ে ঘরের ছাউনি ও নানা রকম আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। সে সময় কাঠ চিরতে আকার ও প্রকার ভেদে বর্গফুট হিসেবে মজুরি নিতেন করাতিরা। একটি মাঝারি সাইজের গাছ কাটা ও চিরানোতে এক দেড় হাজার টাকা খরচ পড়তো। আর তাতে সময় লাগতো তিন দিনেরও বেশি। বর্তমানে আধুনিকতার উৎকর্ষের দাপটের কাছে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এক সময়ের করাতি। আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব এগিয়ে চলেছে। প্রগতি ও প্রযুক্তির যুগে কর্মব্যস্ত মানুষের ব্যস্ততা যেমন বেড়েছে তেমনি যে কোনো কাজ স্বল্প সময়ে কম খরচে দ্রæত সম্পন্ন করতে পারলেই মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচে বলে ধারণা জন্মেছে। গ্রাম-গঞ্জেও এখন পুরোপুরি করাতকলের যান্ত্রিক ঢেউ লেগেছে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে করাতের ছন্দময় শব্দ। বিভিন্ন হাট-বাজারের অগণিত করাতকল অতি কম খরচে অল্প সময়ের মধ্যে চাহিদা মাফিক কাঠ চিরানো হচ্ছে। সেই সাথে আসবাবপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় যান্ত্রিক করাতকলের কদর বেড়েছে। নরসিংদী জেলার প্রবীণ করাতি মুন্সী মিয়া ইনকিলাবকে জানান,পঞ্চাশ থেকে ষাট বছর ধরে আমরা এ পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে আমার বাবা তা করতেন। বাবার মৃত্যুর পর থেকে আমি এ কাজ করে আসছি। তবে শুধু এ পেশার উপর নির্ভর করে টিকে থাকা এখন আর কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ