Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদ্যুৎহীন অর্ধেক দেশ

| প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


কারণ খুঁজতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি
স্টাফ রিপোর্টার : অসময়ে বন্যা ও কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ জনপদের অন্তত ৩২ জেলার মানুষকে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়েছে। দেশের অর্ধেক জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। গত রবিবার থেকে সুনামগঞ্জ জেলায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম।
পাওয়া গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সহকারী ম্যানেজার (জনসংযোগ) এ বিএম বদরুদ্দোজা খান সাংবাদিকদের জানান, ঘোড়াশাল-ঈশ্বরদী সঞ্চালন লাইনে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘœ দেখা দেয়। এতে পিজিসিবির রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল জোনে বিদ্যুৎ সরবাহ বন্ধ হয়ে যায়। একই সাথে ওইসব এলাকার সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। এলাকাভেদে দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।     পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী ইনকিলাবকে বলেন, আমরা দ্রæত সিস্টেম রিস্টোর করার  চেষ্টা করছি। এখন অবস্থা খানিকটা ভালো, অধিকাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ এসে গেছে। বাকি জায়গাগুলোতেও শিগগিরই চলে আসবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ২ হাজার ২৪৯  মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার মোট ২৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া আন্তঃদেশীয় গ্রিড লাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে। পিজিসিবির ওই চার  জোনে মোট ৩২টি জেলা রয়েছে, যেখানে দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর বসবাস। এর বাইরে সুনামগঞ্জ ও  ফরিদপুরে জেলায়  বেশ কয়েকটি উপজেলায় গত রবিবার রাত থেকে বিদুৎ না থাকার খবর পাওয়া গেছে। আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এমডি সাজ্জাদুর রহমান জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে সোমবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কালীপুরে একটি বিদ্যুতের টাওয়ার ভেঙে পড়ে ২৩০ কিলোভোল্টের সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৩০ কেভি লাইন হাই ভোল্টেজ সঞ্চালন লাইনের মধ্যে পড়ে। সারাদেশে পিজিসিবির ৩ হাজার ১৮৫ সার্কিট কিলোমিটার ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন রয়েছে। আশুগঞ্জের ওই লাইন মেরামত করার মধ্যেই গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঘোড়াশাল-ঈশ্বরদী সঞ্চালন লাইন ট্রিপ করলে দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশের জেলাগুলো বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে বলে পিজিসিবির এমডি বদরুদ্দোজা খান জানান। তিনি বলেন, জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ পাঠানোর জন্য দুটি ২৩০ কেভির লাইন আছে। একটি আশুগঞ্জ থেকে সিরাজগঞ্জে, আরেকটি  ঘোড়াশাল  থেকে ঈশ্বরদীতে। ঝড়ে আশুগঞ্জ থেকে সিরাজগঞ্জ লাইনের টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঘোড়াশাল থেকে ঈশ্বরদী লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ লাইনটি ওভারলোডের কারণে ট্রিপ করে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওয়েস্টার্ন গ্রিড আমাদের ইস্টার্ন গ্রিড থেকে আলাদা হয়ে যায়। এতে ওই এলাকার প্রায় সব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করতেও কিছুটা বিদ্যুৎ লাগে। আবার  কোনো কারণে কোনো সঞ্চালন লাইনে লোড বেড়ে গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।  সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় উৎপাদিত বিদ্যুত সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কোনো কারণে কোনো কেন্দ্র বা সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো সিস্টেমে সরবরাহের ঘাটতি তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে কিছু এলাকা বিদ্যুৎহীন রেখে অথবা অন্য কোনো গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ এনে  লোড সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা করা না গেলে অর্থাৎ লোড সমন্বয় না হলে অন্য কেন্দ্রগুলোর ওপর চাপ বাড়ে। এভাবে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেনারেটর বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর নতুন করে কোনো কেন্দ্র বন্ধ হলে সরবরাহে ঘাটতি আরও বাড়ে এবং একইভাবে অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রও বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সঞ্চালন কেন্দ্রে বির্পযয় দেখা দিলে ভারতের সঙ্গে সঞ্চালন লাইন বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ভারতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রক্রিয়া। একই সময় দেশের উৎপাদনে থাকা সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র একযোগে বন্ধ হয়ে গেলে, ধস নামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এতে সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। এদিকে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ জনপদের জেলাগুলোর বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পিডিবির আবাসিক প্রকৌশলী (বিতরণ) আলমগীর মাহফুজুর রহমান জানান, তার এলাকায় বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বেলা পৌনে ৩টার দিকে বিদ্যুৎ এলেও সরবরাহ কম থাকায় বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনেক এলাকায় লোড শেডিং চলছিল। পিজিসিবি ঝিনাইদহ সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম কুমার সাধু ইনকিলাবকে বলেন, পদ্মার পশ্চিম পাশের সবগুলো  জেলার মানুষকেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়তে হয়েছে। ওজোপাডিকোর তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, বরিশালে সকালের দিকে ট্রিপ করে। এর কিছুক্ষণ পরে ভোলা থেকে ২২-২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাও বন্ধ হয়ে যায়। দেড়টার পর থেকে জাতীয় গ্রিড থেকে পাঁচ  মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ায় তা দিয়ে সাবস্টেশনগুলো সচল রাখার চেষ্টা করা হয়। পরে ধীরে ধীরে সরবরাহ বাড়তে থাকে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান কালবৈশাখীর কারণে সুনামঞ্জ জেলায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে আজ না হলে কাল স্বাভাবিক হ¦েব।
চার সদস্যের তদন্ত কমিটি
দেশের অর্ধেক জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। প্রতিষ্ঠানের সহকারী ম্যানেজার (জনসংযোগ) এ বিএম বদরুদ্দোজা খান ইনকিলাবকে জানান, তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পাঁচ দিন সময় দেয়া হয়েছে। পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী (ট্রান্সিমিশন-২) মো. কামরুল হাসান এ তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ