Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিন তালাক প্রথা বাতিলে প্রভাবশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান মোদির

| প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আবারো তিন তালাক প্রথা বিলুপ্তির প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, তিন তালাকের হাত থেকে মুসলমান নারীদের মুক্তি দেয়ার জন্য ওই সমাজের মধ্যে থেকেই কিছু শক্তিশালী ব্যক্তির এগিয়ে আসতে হবে। গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি মুসলমানদের তিন তালাকের ইস্যুটিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখারও আহ্বান জানিয়েছেন। তার এই সর্বশেষ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মুসলমান সমাজ থেকে দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত প্রতিক্রিয়া এসেছে। মোদির এই বক্তব্যের পরে মুসলমান সমাজের মধ্যে থেকেই দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। আবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তিন তালাক ইস্যুকে রাজনীতির বাইরে রাখার কথা বললেও মোদি এবং তার দল এটাকে নিজের রাজনৈতিক লাভের জন্যই ব্যবহার করছে। ভারত সরকার যে মুসলমানদের তিন তালাক প্রথা বিলোপ করতে চায়, তা কিছু দিন আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে আইন কমিশনকে জানিয়েছে তারা। ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারাও বারে বারে এই প্রথা তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করছেন। এরকমই একটা সময়ে তিন তালাকের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং। দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময়ে তিনি বলেছেন, তিন তালাক নিয়ে এত বড় বিতর্ক চলছে এখন। ভারতের পুরনো পরম্পরা দেখে আমার একটা উপলব্ধি হয়েছে যে, সমাজের মধ্যে থেকেই এমন শক্তিশালী মানুষের জন্ম হয়, যারা পুরনো প্রথাগুলো ভেঙে দিয়ে আধুনিক ব্যবস্থার প্রচলন ঘটান। মুসলমান সমাজেও এ ধরনের মানুষ নিশ্চয়ই এগিয়ে আসবেন যারা মুসলমান মা-বোনেদের ওপরে যা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে তারা নিজেরাই লড়াই করবেন এবং কোনো না কোনো সময়ে রাস্তায় বের হবেই, বলেন তিনি। মোদির এই বক্তব্যের পরে মুসলমান সমাজের মধ্যে থেকেই দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের প্রধান ইমাম নুরুর রহমান বরকতি বলেছেন মোদির উচিত ভালোবাসার সঙ্গে কোরআন পড়া, ঘৃণা নিয়ে পড়লে হবে না। তাহলেই তিনি বুঝতে পারবেন যে কোরআন কেউ বদলাতে পারে না, কোরান তৈরিই হয়েছিল পৃথিবী বদলাতে। আর মুসলমানদের ব্যাপারে মোদি কেন নাক গলাচ্ছেন? তিনি সরকারটা ভালো করে চালান না! মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করুন, চাকরি দিন! শরিয়তের ব্যাপারটা মুসলমানদের ওপরেই ছেড়ে দিন বলে উল্লেখ করেন তিনি। অন্যদিকে, মুসলমান নারীদের যে সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে তিন তালাক প্রথা বিলোপের দাবিতে সরব, সেই ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের প্রধান জাকিয়া সোমান জানালেন, আজ যেটা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সেই কথাটাই অনেক দিন ধরে আমরা বলে আসছি যে শিক্ষিত মুসলমানরা, সমাজের আলোকপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এগিয়ে আসুন তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে। যেভাবে প্রধানমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেছেন যে, মুসলমান সমাজের মধ্যে থেকেই কেউ কেউ এগিয়ে আসবেন তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে, সকলেই সেই একই আশা করছে। আর ইতোমধ্যেই আমরা তিন তালাক বিলোপের দাবির পক্ষে প্রচুর সমর্থনও পাচ্ছি, যাদের মধ্যে বহু মুসলিম নারী রয়েছেন। মোদি তার ভাষণে এটাও বলেন যে, তিন তালাক প্রথাকে রাজনীতির চোখ দিয়ে না দেখতে। কিন্তু ঘটনাচক্রে তার দল বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই তিন তালাক আর অভিন্ন দেওয়ানী বিধি প্রচলনের প্রসঙ্গটা রাজনৈতিক দাবি হিসেবে তুলে ধরেছে। এমনকি সদ্য-সমাপ্ত উত্তর প্রদেশ নির্বাচনেও তিন তালাক তুলে দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন দলের নেতারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশিস ঘোষ বলেন, নরেন্দ্র মোদি যতই বলুন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা তিন তালাক নিঃসন্দেহে একটা রাজনৈতিক ইস্যু। তার দল এবং আর এস এস এটাকে নিজেরাই ব্যবহার করেছে, এখনো করছে। তিনি বলেন, স¤প্রতি উত্তর প্রদেশ নির্বাচনেও এটা একটা রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে তারাই তুলে এনেছিল। আসলে তারা মুসলমান সমাজের মধ্যে একটা বিভাজন ঘটানোর চেষ্টা করছে। উত্তর প্রদেশে একজনও মুসলমান প্রার্থী না থাকা সত্তে¡ও যেভাবে অনেক মুসলমান প্রধান এলাকায় তারা জিতেছে, তাদের নিজেদের স্ট্র্যাটেজিস্টদের মতেই তিন তালাক ইস্যুর কারণে সেটা সম্ভব হয়েছে। বিবিসি।



 

Show all comments
  • S. Anwar ১ মে, ২০১৭, ১০:১৯ এএম says : 0
    "মার চেয়ে মাসীর দরদ বেশী" দেখানোর মতই হয়। মুসলিমদের ধর্মীয় ব্যপারে ............র নাক গলানো শোভা পায় না। ..................... সে কেমন করে বুঝবে মহান আল্লাহর বিধান সম্পর্কে? ইসলামে তিন তালাকের বিধান হলো স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের সর্বশেষ ব্যবস্থা, যখন একটা সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার জন্য আর কোন পথই খোলা থাকবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • ওবাইদুল ইসলাম ১ মে, ২০১৭, ৮:১২ পিএম says : 0
    এখন সারা দুনিয়ায় ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতায় থাকার জন্য ইসলাম ধর্মের পক্ষে অথবা বিপক্ষে ভাষণ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই !
    Total Reply(0) Reply
  • shihab ahmed ১ মে, ২০১৭, ১১:৪৯ পিএম says : 0
    ‌তালাক বিবাহ বিচ্ছেদের একটি বৈধ ইসলামী পদ্ধতি যা তিন মাসে তিনটি তালাক দ্বারা কার্যকর হয়। স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই তালাকের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। রাগের মাথায় যাতে কেহ একসাথে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নিয়ে না নেয় সেজন্যই তিন তালাকের ব্যবস্থা। তালাক চূড়ান্ত করার পূর্বে যাতে চিন্তাভাবনার যৌক্তিক সময় এবং পারিবারিক সালিশীর সুযোগ পাওয়া যায় সেজন্য তিন মাসে তিন বারে এ সিদ্ধান্তটি কার্যকর করতে হয়। তালাকের এর চেয়ে উত্তম পদ্ধতি আর কি হতে পারে? তালাককে ইসলাম নিরুৎসাহিত করে বলেই হাদীসে বলা হয়েছে বৈধ কাজগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরের কাজ হলো তালাক।
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ২ মে, ২০১৭, ৭:০৬ এএম says : 0
    r.why you have to interfare other religious matter, what do think your self,god has given such authority to you?
    Total Reply(0) Reply
  • S. Anwar ২ মে, ২০১৭, ৭:৫৫ এএম says : 0
    হে .........., যাহা তোমার কাছে অবোধ্য তাহাতে নাক গলাতে যেয়ো না। কারন তোমার জ্ঞানের সীমা অতিশয় সংকীর্ণ, আর তাহা দৃশ্যমান একটি সাকার মৃত্তিকা-ঢেলাতেই সীমাবদ্ধ। আর ইসলামের কোন সীমা-পরিসীমা নাই। এই দৃশ্যমান বিশ্ব-ব্রম্মান্ড, এই মহাকাশসহ আরো সপ্ত মহাকাশ ছাড়িয়ে আরো অন্তহীন মহাসুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত এই ইসলাম। যেখানে তোমার দৃষ্টিশক্তিতো নয়ই, এমন কি তোমার কল্পনাশক্তিও কোনদিন পৌঁছাতে পারবে না। কোন্ সাহসে তুমি ইসলামের বিধান রদ করতে উদ্যত হও.??তুমিতো নগণ্য ........... মাত্র। তোমার চেয়েও শতগুন শক্তিধর ..........................ও ইসলাম রদের চেষ্টায় ব্যর্থ-মনোরথ হয়ে .................তে পরিনত হয়ে আছে। তুমি যাহা প্রথা বলছো তাহা আদৌ কোন প্রথা নয়, তাহা ইসলামের বিধান। প্রথা - যাহা কারনে-অকারনে এক অঞ্চলের লোকে ভক্তিভরে মানলেও ভিন্ন অঞ্চলের সমধর্মী লোকেরা আদৌ মানে না কিংবা ভিন্নভাবে মানে। এই মানা বা না-মানার পেছনে সুনির্দিষ্ট ঐশ্বরিক কোন যুক্তি বা নির্দেশ নাই। বিধান - যাহা সুনির্দিষ্ট কারনে সুনির্দিষ্ট নিয়মে সর্বাঞ্চলের সমধর্মী সর্বলোকের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। ইহাতে ঐশ্বরিক নির্দেশ নিহিত আছে। প্রথা আর বিধান সম্পর্কে আরো জ্ঞানার্জনে সচেষ্ট হও।................................ অতএব তোমার ধর্ম নিয়া তুমি থাকো আর আমার ধর্ম নিয়া আমাকে থাকতে দাও। আমার ধর্ম নিয়া তুমি গলদ-ঘর্ম হয়ো না।
    Total Reply(1) Reply
    • Abdul Quaiyum Chowdhury ২ মে, ২০১৭, ৬:৫৮ পিএম says : 4
      আমি S Anwar সাহেবের সাত সম্পুর্ণ একমত।

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ