পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : একশ’ দুই বছর পার করল ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চালুর মাধ্যমে এই সেতু উদ্বোধন করা হয়। পাবনা জেলার পাকশী পদ্মা নদীর ওপর স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা-একটি ইতিহাস। ব্রিজটির একশ’ বছর পূর্তি উপলক্ষে রেলমন্ত্রী মো: মুজিবুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রেলভবনে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এ উপলক্ষে ২৫ টাকা মূল্যমানের দু’টি স্মারক ডাকটিকিট, ৫০ টাকা মূল্যমানের একটি স্যুভিনির শিট, ১০ টাকা মূল্যমানের দু’টি উদ্বোধনী খাম ও ৫ টাকা মূল্যমানের ডাটা কার্ড প্রকাশ করেছে। গতকাল থেকে উদ্বোধনী খাম ও ডাটা কার্ড ঢাকা জিপিওর ফিলাটেলিক ব্যুরো থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত অনেক স্থাপত্যের মধ্যে অন্যতম হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি তাৎপর্যপূর্ণ অংশ এই ব্রিজ। মহান মুক্তিযুদ্ধেরও সাক্ষ্য ধারণ করে আছে ব্রিজটি। শৈল্পিক কারুকাজের দৃষ্টিনন্দন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশের গৌরব ও অহঙ্কারের প্রতীক। ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন ও এশিয়ার অন্যতম এই রেলওয়ে সেতুর ১০২ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। আজ এটি একশ’ তিন বছরে পা রাখল। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: ফিরোজ সালাহ উদ্দিন এ প্রসঙ্গে গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, এই ব্রিজ আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নও ধারণ করছে ব্রিজটি। তিনি বলেন, দেশ-বিদেশের ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ একটি আইকন। সফট আইরন দিয়ে তৈরি ব্রিজটি সংরক্ষণের জন্য নিয়মিত এটির পরিচর্যা করা হয় উল্লেখ করে রেলসচিব বলেন, এটি আরো ২৫ বছর কার্যকর রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। এই ব্রিজের পাশেই আরেকটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, তারপরও ব্রিজটি আমাদের কাছে ‘ওলড ইজ গোল্ড’।
রেলওয়ের ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার মি. গেইল ব্রিজটি নির্মাণ কাজের ইনচার্জ ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ রেলওয়ের অধীনে ১৯১০ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু করেন। শেষ হয় ১৯১২ সালে। ১৯১৫ সালের পয়লা জানুয়ারি ব্রিজটির ওপর দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়। এরপর একই বছরের ৪ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিজটির উদ্বোধন করা হয়। ব্রিজটি নির্মাণে ১৫টি প্রিফেব্রিকেট ইস্পাত ট্রাস এবং কংক্রিটের তৈরি ১৬টি পিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। ব্রিজটির মৌলিক কাঠামো এক প্রকার মাইল্ড ইস্পাত দিয়ে তৈরি। এটাকে সুরক্ষা করার জন্য ব্রিজের দুই পাশে নদী শাসনের জন্য ব্রিজ থেকে উজানে ৯১০ মিটার এবং ভাটিতে ৩শ’ মিটার করে গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ৫ মাইল দক্ষিণে এবং সাঁড়াঘাট স্টেশন থেকে ৩-৪ মাইল পূর্ব-দক্ষিণে পাকশী নামক স্থানে তৎকালীন পাবনা ও নদীয়া জেলার মধ্যে বিস্তৃত পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত এই প্রসিদ্ধ রেল সেতুটি পুরনো কাগজপত্রে ‘লোয়ার গ্যাঞ্জেস ব্রিজ, সাঁড়া’ নামে পরিচিত হলেও পরে তা হার্ডিঞ্জ রেল সেতু হিসেবেই ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আকাশ থেকে নিক্ষেপিত বোমার আঘাতে ব্রিজটি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে জাপান সরকারের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া রেলওয়ে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের যৌথ ব্যবস্থাপনায় একটি প্রকল্পের অধীনে ব্রিজটি মেরামত করা হয়। নির্মাণকালে ব্রিজটির কোনো আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয়নিÑ যদিও এটি একশ’ বছর ধরে কার্যকর রয়েছে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য একটি ইতিহাস। একটি অমর কীর্তি। ব্রিটিশ আমলে এই ব্রিজটি নির্মাণের সূত্র ধরে হাজার হাজার মানুষের রেলওয়েতে চাকরির সুযোগ হয়। সে সময় ২৪ হাজার লোকবল দিয়ে পদ্মা নদীর ওপর এই ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয় ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার ভারতীয় রুপি। এই ব্রিজ দিয়ে চাকরি শুরু করেছিলেন এমন অনেকেই এখনও জীবিত আছেন। তাদের একজন অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার মো: ময়েজ উদ্দিন বলেন, এই ব্রিজ আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ, আমাদের গৌরব। পাকিস্তান আমলে ব্রিজটি মাঝে মধ্যে পরিষ্কার করে ধোয়ামোছা করা হতো, রঙ করা হতো। কিন্তু এখন তা দেখা যায় না। এ কারণে এর গুণগত মান নষ্ট হওয়া নিয়ে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। তবে পশ্চিমাঞ্চল পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম বলেন, সেতু বিভাগ থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য করণীয় সবকিছুই নিয়মিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্রিজের স্থায়িত্ব আরো কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়েও রেল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
১ দশমিক ৮১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের অর্ধেক অংশ পাবনার পাকশী অংশে এবং বাকি অংশ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা অংশের মধ্যে অবস্থিত। ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে এ ব্রিজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন ভারতের গভর্নর জেনারেল ভাইস রয় লর্ড চার্লস হার্ডিঞ্জ। তার নামেই এর নামকরণ করা হয় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ভারবহন ক্ষমতা ১ হাজার ৯২৭ টন। ব্রিজের ওপর দিয়ে দু’টি ব্রডগেজ রেললাইন গেছে। এই ব্রিজটি খুলনা থেকে পার্বতীপুর হয়ে চিলাহাটি পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথকে সংযুক্ত করেছে।
বর্তমানে প্রতিদিন এই ব্রিজের ওপর দিয়ে ২৪টি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে আন্তঃনগর ১৬টি, মেইল ট্রেন ৬টি এবং লোকাল ২টি। এছাড়া নিয়মিত তেল ও মালবাহী ট্রেনও চলাচল করে এই ব্রিজের ওপর দিয়ে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল সকালে রেলভবনে অনুষ্ঠিত স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী ছাড়াও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: ফিরোজ সালাহ উদ্দিন, মহাপরিচালক মো: আমজাদ হোসেনসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।