পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : এই বৈশাখে শীতের রাজ্য কাশ্মীরে গরম পড়েছে। এই গরমে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সেখানকার ভূ-রাজনীতি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে গত বছর গ্রীষ্মে স্বাধীনতাকামী একশ’ তরুণ প্রাণ হারিয়েছে। মাসের পর মাস জ্বলেছে ঘর-বাড়ি পথ প্রান্তর, রাজপথে ঝরেছে রক্ত। এবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সেখানকার মাটি। কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যায়নি প্রতিবাদ করেই। গত বছর তরুণরা স্বাধীনতার দাবিতে রাজপথে রক্ত দিয়েছে। তরুণদের পাশাপাশি এবার তরুণীরাও পথে নেমেছে। অন্যদিকে মোদী সরকার পুরনো ‘দমনপীড়ন নীতি’তে অটল। ভারতের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমানের মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কেন্দ্র তথা দিল্লী এসব প্রস্তাব-উপদেশকে পাত্তাই দিচ্ছে না। উল্টো কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের উপর জুলুম-নির্যাতন এবং হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী নীতি চলছেই। কাশ্মীরের এই চালচিত্র নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। আন্তর্জাতিক ওই গণমাধ্যমটি আশঙ্কা করেছে এই বলে যে, কাশ্মীর কি শেষ পর্যন্ত ভারতের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে? বিবিসির ওই প্রতিবেদন ইনকিলাব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
ভারতের সবচেয়ে অশান্ত এলাকা কাশ্মীরে আবারও এসেছে গ্রীষ্মকাল। ভাষ্যকাররা যাকে দেখছেন ‘সহিংসতার আরেকটি গ্রীষ্মকাল’ হিসেবে। আর একই সাথে আবার ফিরে এসেছে সেই প্রশ্নটি; কাশ্মীর কি ভারতের হাতছাড়া হতে চলেছে? আর এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন বিবিসি নিউজ অনলাইনের ভারত সংবাদদাতা সৌতিক বিশ্বাস।
মুসলমান-অধ্যুষিত কাশ্মীর উপত্যকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী গ্রীষ্ম ছিল গতবারেরটি (২০১৬)। জুলাই মাসে ভারতীয় বাহিনীর হাতে প্রভাবশালী নেতা বুরহান ওয়ানী খুন হওয়ার পর সেখানে চার মাস ধরে যে অচলাবস্থা চলেছে, তখন সংঘাতে ১০০ জনেরও বেশী বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। চলতি গ্রীষ্মকালটিও খুব একটা ভালো যাবে বলে মনে হচ্ছে না। এই মাসে শ্রীনগরে সংসদীয় যে নির্বাচন হয়েছে, তাতে সহিংসতা হয়েছে আর ভোট পড়েছে রেকর্ড পরিমাণ কম। এমন কিছু ভিডিও বেরিয়েছে যাতে দেখা গেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতীয় শাসনের বিরোধী তরুণদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেকে। ফলে আগুনে আরও ঘি পড়েছে। বিক্ষোভ আরও ছড়িয়েছে, ছাত্ররা রাস্তায় নেমে এসেছে। আর খুব বিরল একটা দৃশ্যও চোখে পড়ছে স্কুলের মেয়েরা পাথর ছুড়ছে, আর তা আঘাত করছে পুলিশের গাড়িকে (অতীতে মেয়েদের পাথর ছোঁড়ার এমন দৃশ্য দেখা যায়নি)।
কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বেখাপ্পা ধরনের একটি জোট সরকার চালাচ্ছেন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি দলের সঙ্গে। সোমবারে তিনি দিল্লি ছুটে যান কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই আর্জি নিয়ে যাতে ‘একটি সংলাপের ডাক আর মিটমাটের ইঙ্গিত দেয়া হয়’। রাজনীতিবিদরা বলছেন কাশ্মীরের জন্য সামরিক নয় বরং একটি রাজনৈতিক সমাধান দরকার। খবরে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং তাকে বলেছেন যে প্রচন্ড সহিংসতা এবং জঙ্গি আক্রমণ চলতে থাকা অবস্থায় তাঁরা ‘উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী ও অবাধ্য গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কোন আলোচনায় সম্মতি’ দিতে পারেন না। কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আঞ্চলিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লাহ এই বলে সতর্ক করে দিয়েছেন যে ভারত ‘কাশ্মীর হারাচ্ছে’। মি. আবদুল্লাহ যে পরামর্শ দিয়েছেন, তা দারুণ প্রশংসনীয়। তার পরামর্শ হলো, ভারতের উচিত সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা। পাকিস্তান, বিচ্ছিন্নতাবাদী, মূলধারার রাজনৈতিক দল, কাশ্মীরের সংখ্যালঘু হিন্দু স¤প্রদায় এবং কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে ‘সামরিক নয় বরং একটি রাজনৈতিক পথ’ খুঁজে বের করার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করা।
কাশ্মীর অঞ্চলে এখন ভারতের ৫ লাখ সৈন্য রয়েছে, ফলে এলাকাটি তাদের হাতছাড়া হবে না। কিন্তু বিশ্লেষক শেখর গুপ্ত বলছেন যে ‘কাশ্মীর ভূ-খন্ডগতভাবে নিরাপদ, কিন্তু আমরা একে অনুভূতিগত আর মানসিকভাবে হারিয়ে ফেলছি’। শ্রীনগরের নির্বাচনে মাত্র ৭ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে কাশ্মীরের ‘ভূখন্ডের ওপর আপনার কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকলেও আপনি এর মানুষদের হারাচ্ছেন’ বলছিলেন মি. গুপ্ত। দেখা যায় ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তাড়িত করছে কাশ্মীরের তরুণদের। তাহলে কাশ্মীরে এমন নতুন কী ঘটছে যা ভারতকে উদ্বিগ্ন করছে, আর সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের এটা স্বীকার করতে বাধ্য করছে যে পরিস্থিতি সেখানে সত্যিই ভঙ্গুর? একটি হলো- আরও বেশী বেপরোয়া ও বিচ্ছিন্ন একটি তরুণ প্রজন্ম (বিসিসির ভাষায় বিচ্ছিন্ন হলেও ওরা সবাই স্বাধীনতাকামী ভূমিপুত্র) এখন কাশ্মীরে ভারতবিরোধী প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছে। উপত্যকার ৬০ শতাংশেরও বেশী পুরুষের বয়স ৩০ বছরের নিচে। এদের বেশিরভাগই বিক্ষুব্ধ।
আয়াজাজ বাডগামের ১৯ বছরের তরুণ। তিনি বলছেন যে ‘ভারতীয় নিপীড়নের মুখে’ তাদের প্রজন্ম সব আশা হারিয়েছে, আর তিনি ও তাঁর বন্ধুরা (কাশ্মীরের স্বাধীনতার প্রশ্নে) ‘মৃত্যুকে আর ভয় করেন না’। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো যে তাঁর জীবনের লক্ষ্য কী ছিলো, তখন তিনি জানালেন যে তিনি একজন আমলা হয়ে কাশ্মীরে সেবা করতে চেয়েছিলেন। ‘এটা বলা ভুল যে কাশ্মীরের ওই যুবক নির্ভীক হয়ে উঠেছে। সে আসলে (ভারতীয় সেনাবাহিনীর জুলুম-নির্যাতনে) বিচ্ছিন্ন বোধ করছে, অপমানিত বোধ করছে। তিনি যখন এমনটা বোধ করেন, তখন ভয় আর কাজ করে না। তিনি হয়ে ওঠেন (বিবিসির ভাষায়) অপরিণামদর্শী (মূলত স্বাধীনতাকামী)। এটা বিচার-শক্তিহীন আচরণ, ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা জুনায়েদ আজিম মাত্তু বলছিলেন বিবিসি সংবাদদাতাকে।
দ্বিতীয়ত; নতুন প্রজন্মের তরুণরা শিক্ষিত এবং তুলনামূলকভাবে ধনী পরিবার থেকে আসা। বিবিসির ভাষায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর যে নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, সেই বুরহান ওয়ানী একটি উচ্চ-শিক্ষিত উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে এসেছিলেন। তাঁর পিতা সরকারি স্কুলের একজন শিক্ষক। আর তাঁর ভাই খালিদ যাকে নিরাপত্তা বাহিনী ২০১৩ সালে হত্যা করে তিনি ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র। ওই গোষ্ঠীর বর্তমান নেতা জাকির রশীদ ভাট উত্তর ভারতীয় শহর চন্ডীগড় থেকে প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন।
তৃতীয়ত; কাশ্মীরের দুই বছর বয়সী জোট সরকার প্রতিশ্রæতি পূরণ করতে পারছে না। জোটটি হয়েছে এমন দুটো দলের মধ্যে যাদের একটি পিডিপি, যারা মসৃণ বিচ্ছিন্নতাবাদকে (মূলত হবে স্বাধীনতাকামী) সমর্থন করে, আর অন্যটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী। তাদের রয়েছে ভিন্ন রকমের আদর্শ, কিন্তু কাজ করছে বিরোধপূর্ণ একটি এলাকায়।
চতুর্থত; কাশ্মীরের বিষয়ে সরকারের বার্তা উল্টো ফল দিচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। কিছুদিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন বললেন যে কাশ্মীরি যুবকদেরকে হয় সন্ত্রাস নয়তো পর্যটনকে বেছে নিতে হবে; তখন অনেক কাশ্মীরি তাকে এই বলে অভিযুক্ত করেছেন যে তিনি তাদের দীর্ঘ সংগ্রামকে পাত্তা দিচ্ছেন না।
পঞ্চমত; কট্টর হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর মুসলমানবিরোধী উগ্র বক্তব্য এবং ভারতের অন্যান্য এলাকায় মুসলিম গবাদি পশু ব্যবসায়ীদের ওপর তথাকথিত গো-রক্ষকদের হামলা উপত্যকার মানুষদের আরও বেশী ভিন্ন মেরুতে ঠেলে দিচ্ছে।
কাশ্মীর বিষয়ে পাঁচটি তথ্য; এক. ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর গত ৭০ বছর ধরে ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে বিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। দুই. দুটো দেশই পুরো কাশ্মীরের মালিকানা দাবি করে, কিন্তু দখলে রেখেছে আংশিক ভূখন্ড। তিন. ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার তিনটি যুদ্ধের দুটোই হয়েছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। চার. ভারত শাসিত মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরে ১৯৯৮ সাল থেকে (স্বাধীনতার দাবিতে) সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে। পাঁচ. উঁচু বেকারত্ব ও রাস্তার বিক্ষোভ ঠেকাতে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর (সেনাবাহিনী) কঠোর আচরণ নিয়ে অভিযোগ সেখানে সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী অবশ্য বলেছে যে কাশ্মীর উপত্যকার তরুণরা ‘ধর্মীয় মৌলবাদ’-এর দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে তারা উদ্বিগ্ন। কাশ্মীরে একজন শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তা, লে. জেনারেল জেএস সাধু, একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন যে উদ্বেগের বিষয়গুলো হলো ‘সন্ত্রাসীদের প্রতি জনসমর্থন, তাদের গুণকীর্তন এবং মৌলবাদের ক্রমশ: ঝুঁকে পড়া’। একজন সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন ধর্মীয় চরমপন্থা ‘পাথর নিক্ষেপকারীদের চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ’। তিনি বলেন, গত এক দশকে কাশ্মীরে সউদী-অনুপ্রাণিত ওয়াহাবী মতাদর্শের প্রায় তিন হাজার মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তবে কাশ্মীরের বেশিরভাগ মানুষের মতে, সরকার উচিত তরুণদের ‘রাজনৈতিক চরমপন্থায়’ জড়িত হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া এবং ধর্মীয় চরমপন্থা নিয়ে আতঙ্কের বিষয়টি অতিরঞ্জিত এবং ফোলানো-ফাঁপানো।
অন্যদিকে, চলতি মাসের ভোটে খুব কম ভোটারের উপস্থিতি ঐ অঞ্চলের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। ‘যদি মূলধারার রাজনীতিবিদদের মানুষ ভোট দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে মাঠ খালি থাকবে না,’ বলছেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের মি. মাত্তু। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র’-এর সাবেক প্রধান অমরজিৎ সিং দৌলত তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন ‘কোন কিছুই ধ্রুব নয়, বিশেষ করে কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তো নয়ই’। কিন্তু এখন তরুণদের অরাজকতা ও ক্ষোভ, আর উদ্বিগ্ন জনতার ভারতীয় শাসনের প্রতি বিদ্রোহ মনে হচ্ছে কাশ্মীরে একমাত্র ধ্রুব বিষয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।