Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাম্প্রতিক বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলে ফসলের ক্ষতি হাজার কোটি টাকারও বেশী

| প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে থাকা- মুগডাল, মরিচ, তিল, মিষ্টি আলু, ফেলন ডাল, চিনা বাদাম, আউশ ও বোরো ধানসহ গ্রীষ্মকালীন সবজি ও সূর্যমুখির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে তুলনামূলকভাবে দক্ষিণাঞ্চলে বোরো ধানের ক্ষতির পরিমাণ খুবই সীমিত। আউশ ধানের ক্ষতি যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হতে পারে। আবাদকৃত প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমির অন্তত ৩৫%ই প্রবল বর্ষণের আকস্মিক প্লাবনের শিকার।
এছাড়া প্রায় ১২ হাজার হেক্টরে আবাদকৃত সয়াবিনের প্রায় ৬৪% ফসল গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে। ১৯ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ৩৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকারও বেশী। দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলায় দেড় লক্ষাধিক হেক্টর জমির ফসল সাম্প্রতিক ভয়াবহ বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে। তার মধ্যে শুধু ভোলাতেই ৭৭ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির সম্মুখীন। এছাড়া পটুয়াখালীতে ৩৯ হাজার হেক্টর ও বরিশালে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির সম্মুখীন। বরগুনাতেও ১৫ হাজার ২০২ হেক্টর জমির ফসল প্লাবিত হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি পল্লীগুলোতে এখন কান পাতলেই কৃষকের হাহাকার শোনা যাচ্ছে।
তবে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফ্তর-ডিএই এখনো ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন না পেলেও মাঠে থাকা ফসলের প্রায় ৩০% সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কা করছেন দায়িত্বশীল মহল। গতবছর একই সময়ে সারাদেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে যথেষ্ট কম। চলতি বছর গত মার্চ মাসে বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫২% বেশী। চলতি মাসে দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৩২ মিলিমিটার উল্লেখ করে কিছু বেশী বৃষ্টিপাতের কথা আবহাওয়া বিভাগ তার দীর্ঘ মেয়াদী বুলেটিনে জানিয়েছিল। কিন্তু ইতোমধ্যে সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৩৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। তবে গত দু’দিন দক্ষিণাঞ্চলে কোন বৃষ্টি হয়নি। রোদের ঝলকানীতে গতকাল তাপমাত্রার পারদও অনেকটাই ওপরে উঠে গেছে। গতকাল বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগেই ছিল ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আপতত বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনার কথাও যায়নি আবহাওয়া বিভাগ।
সর্বশেষ হিসেবে অনুযায়ী মাঠে থাকা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমির মুগ ডালের ৪৫.৫৩%, প্রায় ৪৮ হাজার হেক্টর জমির মরিচের ৬১.৫৩%, প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমির তিল বীজের ৫৮.২১%, ও ২ হাজার ১৩৫ হেক্টরের সূর্যমুখির প্রায় ৪৭%ই আংশিকভাবে প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
ডিএইর দায়িত্বশীল মহলের মতে, বর্তমানে বরিশাল অঞ্চলের কৃষি জমিতে ৫ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে মুগডাল, মরিচ, তিল, মিষ্টি আলু, ফেলন ডাল, চিনা বাদাম, গ্রীষ্মকালীন সবজি ও সূর্যমুখিসহ সয়াবিন, কলা, পেঁপে ও পানসহ বিভিন্ন ধরনের অথকরি ফসল রয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনের বিরামহীন প্রবলবর্ষণে এসব ফসলের গড় ক্ষতির পরিমাণ ৩০%-এর বেশী বলে জানা গেছে।
গত মার্চের প্রবল বর্ষণেও দক্ষিণাঞ্চলের জমিতে থাকা তরমুজ ও গোল আলুর ব্যাপক ক্ষতি হয়। এরমধ্যে শুধুমাত্র তরমুজের ক্ষতির পরিমাণই ছিল প্রায় ৩৪৫ কোটি টাকা। এছাড়াও আরো শতাধিক কোটির টাকার গোল আলুও বিনষ্ট হয় ওই বর্ষণে। ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে অনেক কৃষকই মাঠ থেকে গোল আলু তুলতে পারেননি।
১৯ এপ্রিল দুপুরে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে। সা¤প্রতিক ঐ মাঝারী থেকে ভাড়ী বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের দেড় লক্ষাধিক হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। যার বেশিরভাগ ফসলই আর কৃষকের গোলায় উঠবে না। ফলে সারা দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিÑ অর্থনীতিতে ভয়াবহ বিপর্যয় আসন্ন বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল মহল। ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল অবশ্য পানি সরে যাবার পরে দ্রæত জমি ও ফসলের পরিচর্যার আহŸান জানিয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে নতুন করে ফসল আবাদে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণেরও পরামর্শ দিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ