ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মো. ওসমান গনি : ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ নবদিগন্ত উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশ আর ওষুধ আমদানিকারক দেশ নয়, রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক ওষুধ কোম্পানি উন্নত দেশগুলোর বিখ্যাত সনদ লাভ করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৬০ দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। এই খাতের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। সংশিষ্টরা বলছেন, বিগত চার দশকে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের অনুন্নত ৪৮ দেশের মধ্যে ওষুধ উৎপাদনে শীর্ষে বাংলাদেশ। ২৫৭ কোম্পানির ২৪ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ বিদেশে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে একসময় বার্ষিক ৮০ শতাংশ ওষুধ বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হতো, সেখানে এখন আমদানি হয় মাত্র ৩ শতাংশ। একসময় বিদেশি কোম্পানিগুলো এ দেশের ওষুধের বাজারের ৭৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করত। সেখানে এখন তারা নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র ৭ শতাংশ। অদূর ভবিষ্যতে এ হার আরো কমে আসবে বলে মনে করেন আমাদের দেশের সচেতন মহল। ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর ওষুধ রফতানি বাড়ছে। আমরা আশা করছি, এই ধারা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে এ খাত বিকাশে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
একটি জাতীয় দৈনিকের সূত্রমতে, ২০২১ সাল নাগাদ ওষুধ রফতানি থেকে বাংলাদেশের আয় প্রায় একশ গুণ বেড়ে ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। সরকার সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাজার ও পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওষুধ রফতানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রেখেছে সরকার। ইতিমধ্যেই কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি আমেরিকায় ওষুধ রফতানি শুরু করেছে। এ সুযোগকে ‘দেশের রফতানি বাণিজ্যের জন্য খুব ইতিবাচক’ উল্লেখ করে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের রফতানির পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা। প্রতি বছরই রফতানির ও দেশের সংখ্যা বাড়ছে। বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতের সাথে নতুন করে ওষুধ রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা বিশাল প্রাপ্তি। বেক্সিমকো ফার্মার মতো আমাদের দেশে আরো যে সমস্ত ওষুধ কোম্পানি রয়েছে তাদেরও উচিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে আলাপ-আলোচনা করে ওষুধ রফতানির ব্যবস্থা করা। এতে করে ওষুধ কোম্পানিরও লাভ হবে, সাথে সাথে জাতীয় আয়ের পরিমাণও বেড়ে যাবে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করবে সারা বিশ্বে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অধীনে থাকা ৪৩টি ওষুধের কাঁচামাল পেলে রফতানি আগামী ৪ বছরে ১০ গুণ বাড়বে। দেশীয় চাহিদার ৯৮ ভাগ ওষুধই এখন উৎপাদন হচ্ছে দেশে। বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি খাতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ওষুধ রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ কোটি ডলারেরও বেশি। আশা করা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ ওষুধ রফতানি আয় সাড়ে ৮ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ওষুধ শিল্প সমিতি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অধীনে থাকা ৪৩টি ওষুধের কাঁচামাল সহজপ্রাপ্য হলে রফতানির পরিমাণ আগামী চার বছরে ১০ গুণ বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অনেক কোম্পানিই এখন আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ তৈরি করছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সার্টিফিকেশন সনদও পেয়েছে বেশ কিছু কোম্পানি। এ কারণে ওইসব দেশসহ অন্যান্য দেশে ওষুধ রফতানি পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। তাদের মতে, বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিøউটিও) ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকেও ওষুধ শিল্প বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তারা জানান, বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা আর বিশ্ববাজারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ওষুধ রফতানিতে এশিয়ার শীর্ষে উঠে আসবে বাংলাদেশ।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) পৃথিবীর ৮৭টি দেশে ৪২১ কোটি ২২ লাখ টাকার ওষুধ রফতানি করা হয়। পরের বছর একই সংখ্যক দেশে রফতানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ রফতানির পরিমাণ বাড়ে ১১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৩ সালেও দেশে ৬০৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা রফতানি বাড়ে ৬৪ কোটি ৫ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ৯৫টি ৭১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এক বছরেই বেড়েছে ১১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে ১০২টি দেশে ৭৩৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। আগের চেয়ে বেড়েছে ২৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর চলতি অর্থবছরে ১১৭টি দেশে লক্ষ্যমাত্রা ৮ কোটি ডলার ধরা হলেও এটা সাড়ে ৮ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করে যাচ্ছে। অর্থাৎ বিগত ৬ বছরের ব্যবধানে রফতানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থ বছরে দেশীয় ৪৬টি ওষুধ কোম্পানি ওষুধ রফতানি করে এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। রফতানিতে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড, নোভারটিস (বিডি) লিমিটেড, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড, ইনসেপ্টা ফার্মা লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মা লিমিটেড, দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, এরিস্টো ফার্মা লিমিটেড, রেনেটা লিমিটেড, এসকেএফ ফার্মা বাংলাদেশ লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড, পপুলার ফার্মা, পপুলার ইনফিউশন, বায়ো ফার্মা, অপসোনিন, গেøাব ফার্মা, বিকন ফার্মা, ড্রাগস ইন্টারন্যাশনাল, হেলথকেয়ার ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা, জেসন, নাভানা, জেনারেল, ডেলটা, গাস্কো, ইবনেসিনা, রেডিয়ান্ট, নভো হেলথকেয়ার ফার্মাসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি। সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওষুধ রফতানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।
ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্য মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, ইতালি, কানাডা, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, ইরান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, মরক্কো, আলজেরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হচ্ছে। বিশ্বের আরো যে সমস্ত দেশ রয়েছে সেসব দেশের সাথে আলাপ-আলোচনা করে ওষুধ রফতানির পরিমাণ বাড়াতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সাথে সাথে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে তাদের উৎপাদিত ওষুধের গুণগত মান বজায় রেখে উৎপাদন বাড়াতে হবে। কোম্পানির পক্ষ হতে বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করে তাদের ওষুধ রফতানির পরিমাণ বাড়াতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।