Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সিরিয়ার যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নয়া ভ‚মিকা রাশিয়া ও মিত্রদের সমস্যা বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দি আরব উইকলি : মৃত্যুর ১৭ বছর পর শত্রæরা তার সম্পর্কে যাই বলুক, সিরিয়ার সাবেক পেসিডেন্ট হাফেজ আল আসাদ একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছিলেন। যখন তিনি বুঝতে পারলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে তিনি সন্তর্পণে মার্কসবাদী সমাজতন্ত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। সে সাথে সিরিয়ার টুটাফাটা সোভিয়েত সমর্থিত অর্থনীতির উদ্ধারে বিনিয়োগ আইন প্রবর্তন করেন।
কয়েক মাস পর তিনি বুঝতে পারেন সাদ্দাম হোসেনের থাবা থেকে কুয়েতকে মুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র একটি আন্তর্জাতিক জোট গঠন ও তার নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছে। অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে পড়ছে ও যুক্তরাষ্ট্রকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা তার নেই। আসাদ তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্ব›দ্বীর (সাদ্দাম হোসেন) বিরুদ্ধে জর্জ এইচ ডবিøউ বুশের পক্ষ নেয়ার অস্বাভাবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন। একই বছর তিনি মাদ্রিদ সম্মেলনে ইসরাইলের সাথে মুখোমুখি আলোচনায় বসতে রাজি হলেন। ’৯০-এর দশকে আসাদ কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা আবদুল্লাহ ওসালানকে দামেস্কের পৃষ্ঠপাষকতা প্রদান নিয়ে তুরস্কের সাথে যুদ্ধ বাধার উপক্রম হলে আসাদ চুপচাপ তাকে সব গুটিয়ে নিয়ে দামেস্ক ছাড়ার নির্দেশ দেন। সিরিয়ায় সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্টিন ইনডাইক এক সময় বলেছিলেন, চতুর আসাদ কম্পিউটারের মতই ঝুঁকি ও সুযোগের হিসাব করেন।
৪ এপ্রিল ইদলিবের খান শেয়খুন শহরে সরকারি বাহিনীর কথিত গ্যাস হামলা চালানোর পর ৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার একটি বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। সিরিয়া সরকার গ্যাস হামলার কথা অস্বীকার করেছে ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে। বহু সিরীয়ই ভাবছেন যে আসাদ বুশের সাথে যা করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আসন্ন সংঘাত এড়াতে তার পুত্র বাশারও ট্রাম্পের সাথে তা করবেন কিনা।
সিরিয়া ২০১৩ সালে তার রাসায়নিক অস্ত্র ভাÐার সমর্পণ করে মার্কিন বিমান হামলা এড়িয়েছিল। তা করার মূল্য হিসেবে আজ  ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে দরকষাকষি চলছে। বাশারের সাথে সাক্ষাৎ অর্ধপথে থাকা অবস্থায় ট্রাম্প প্রাথমিকভাবে তাকে পদত্যাগের আহবান জানানোর মধ্য দিয়ে তার ব্যাপারে সুর নরম করেছেন।
মধ্য এপ্রিলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কথা বলার সময় বাশারের অপসারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে ট্রাম্প বলেন, আমরা কি এ ব্যাপারে জোর দিচ্ছি? না। কিন্তু জানা যায় যে ট্রাম্প পুতিনের সামনে বিবেচনার জন্য তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছেন।
প্রথমত, তিনি একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে চান যা যুদ্ধ বন্ধ করবে এবং একটি অন্তর্বর্তী সময়ের পর বাশারের অপসারণ ঘটবে। এর পর একটি সংবিধান প্রণীত হবে এবং একটি নয়া পার্লামেন্ট গঠিত হবে যার ফলে সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোসহ সকল প্রতিষ্ঠান অটুট থাকবে।  
পুতিন সিরিয়ার ভৌগোলিক অখÐতা রক্ষা ও এ প্রশাসনকে বহাল রাখতে পারবেন, শুধু একজনকে বাদ দিয়ে। মার্কিনিরা তাকে তেল সমৃদ্ধ দেইর এজ জোহর ও কুর্দি এলাকাসহ ফোরাত নদীর পূর্বে সকল এলাকায় অগ্রসর হতে দেবে। তেহরান, দামেস্ক ও মস্কো এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
দ্বিতীয়ত, রাশিয়া বাশারকে ক্ষমতায় রাখতে পারবে ও যেসব এলাকা তার নিয়ন্ত্রণে আছে সেগুলোও তিনি রাখতে পারবেন, অন্যদিকে ফোরাতের পূর্বের সব এলাকা যেখানে সিরিয়ার কৃষি খামার, প্রাকৃতিক সম্পদ ও তেল অবস্থিত, তা সিরিয়ায় মার্কিন ছিটমহলে পরিণত হবে যা পরিচালনা করবে কুর্দি ও অন্য মার্কিন মিত্ররা।
সিরিয়া তখন প্রভাব নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে ভাগ হয়ে যাবে। উত্তরে তুর্কি ক্যান্টন ও দক্ষিণে জর্দানি ক্যান্টনসহ ফোরাতের পশ্চিম তীরে রুশ অঞ্চল অন্যদিকে সিরিয়ার উত্তরপশ্চিম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবাধীনে থাকবে কুর্দি ছিটমহল। তুরস্ক ও জর্দানে থাকা সিরীয় উদ্বাস্তুরা এসব এলাকায় পুনর্বাসিত হবে এবং সিরীয় সেনাবাহিনী তাদের উপর হামলা চালাতে পারবে না।
এ প্রস্তাবে দামেস্ক ও মস্কোর দেশটির খÐিত অংশ শাসনের সুযোগ রয়েছে। সিরিয়া ইতোমধ্যেই ব্যাপক ধ্বংসের সম্মুখীন ও দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের আশা নেই বললেই চলে। এ প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যাত হয়।
তৃতীয়ত, বাশার ক্ষমতায় থাকতে পারবেন এবং রাশিয়ার সাহায্যে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও পুনঃবৈধতা পাবেন যদি তিনি ইরান ও হিজবুল্লাহকে ত্যাগ করেন।
যদি লেবানন ও ইসরাইলের মধ্যে আগামী গ্রীষ্মে যুদ্ধ লাগে, এ অঞ্চলের অনেকেই তা ধারণা করছেন,  তাহলে এই প্রস্তাব টেবিলে উত্থাপনের পর তা নিয়ে ভালোমত আলোচনা হতে পারে।
যদি তা হয় তবে সেটা হবে প্রলয় দিনের যুদ্ধ, যে যুদ্ধে ইসরাইল হিজবুল্লাহের চির-নির্মূল করবে যা সে ’৮০-র দশক থেকে করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য যদি লেবানন ও সিরিয়ার অংশ বিশেষ ধ্বংস করতে হয়, তবু।
২০০৬ সালে হেজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধে ইসরাইলি বিমান হামলার লক্ষ্য ছিল হেজবুল্লাহ প্রাধান্য বিস্তৃত বৈরুতের দক্ষিণ এলাকা ও দক্ষিণ লেবাননে পার্টি অব গডের শক্ত ঘাঁটি।
ইসরাইল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, লেবানন দেশটি যখন হিজবুল্লাহ ও ইরান চালায় তখন পরের বার হামলায় তারা গোটা লেবাননে আঘাত হেনে দেশটিকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
এপ্রিলে ইরানি, সিরীয় ও হেজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা মোতায়েন সম্পন্ন করেছে ইসরাঈল।
সিরিয়া এ যুদ্ধে কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, বিশ^ সেদিকে লক্ষ্য রাখবে। হিজবুল্লাহ দামেস্কের কাছ থেকে ২০০৬ সালের যুদ্ধের সময় দেয়া লজিস্টিক সমর্থনের পরিবর্তে অনেক বেশি সক্রিয় সম্পৃক্ততা আশা করছে।
তবে এটা অবশ্যই যথেষ্ট নয়। অন্তত ২০১২ সালে বাশারকে ক্ষমতায় রাখতে হিজবুল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা আশা করছে যে সিরিয়া তাদের অস্ত্র, খাদ্য ও অর্থ পাঠাবে অথবা তাদের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রে কেউই আশা করে না যে, সিরিয়ার দুর্বল সরকার এতে সম্পৃক্ত হবে। অন্তত যেখানে আমেরিকানরা জড়িত সেখানে তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করলে তা হবে তাদের কাছে সন্তোষজনকের চেয়েও বেশি। তবে দামেস্ক কোনোভাবেই তা করবে বলে মনে হয় না।  



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিরিয়া

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ