Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২০ ডলার যায় কোথায়?

অধ্যাপক রেহমান সোবহানের প্রশ্ন

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের মধ্যে অন্যতম অধ্যাপক রেহমান সোবহান। প্রখ্যাত এবং প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ তৈরি পোশাক শিল্প গার্মেন্টসের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে তিনি বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের ঘামে নির্মিত তৈরি পোশাকের ‘লাভের গুড় পিঁপড়ায়’ খাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো মালিকের একার পক্ষে গ্রার্মেন্টসে টেকসই শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা অসম্ভব। কারণ বাংলাদেশে তৈরি একটি পোশাক ৫ ডলারে ক্রয় করে বিশ্বের দেশে দেশে ২৫ ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। গার্মেন্টস পণ্যের মাঝখানের এই ২০ ডলারে শ্রমিক-মালিক কারও সংশ্লেষ থাকছে না। প্রশ্ন হলো এই ২০ ডলার যায় কোথায়?
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৪ বছর পূর্তিতে গত রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সামাজিক সংলাপে তিনি এ প্রশ্ন উত্থাপন করেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও)-এর উদ্যোগে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে অনুকরণীয়’ শীর্ষক এ সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম। সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সংলাপে রেহমান সোবহান বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনা জাতি হিসাবে আমাদের লজ্জার কারণ। তাই খতিয়ে দেখা দরকার- এই দুর্ঘটনার পর পোশাক খাতে কী পরিবর্তন এনেছে, শ্রমিকদের ভাগ্যের কতটা উন্নতি ঘটেছে। সেটি না হলে আমরা এর কলঙ্ক মোচন করতে পারব না।’ তিনি আরো ‘শঙ্কার কারণ হচ্ছে এই পোশাক খাতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আমাদের রাজনীতিবিদ ও সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনা কম। যারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন, তারা এ নিয়ে খুব একটা ভাবেন না।’ শ্রমিক অধিকারের টেকসই পরিবর্তন আনার জন্য বিশ্ববাজারে রফতানি হওয়া বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের মূল্যস্তরে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, শুধু মালিকের একার উদ্যোগে শ্রম অধিকার কখনোই টেকসই হবে না। এই শ্রমের সুফল ভোগকারী বিদেশি বায়ার এবং রিটেইলারদেরও পোশাকের দামের সঙ্গে আপস করতে হবে।
 রেহমান সোবহানের এই প্রশ্ন প্রসঙ্গে ওই সংলাপে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন বলেন, ‘পোশাকের দাম বাড়ানোর বিষয়টি ইইউর পলিসিগত সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ে না। এটি মালিক এবং ক্রেতার দর কষাকষির বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, শ্রম অধিকার রক্ষা ছাড়া ইউরোপে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সামনেই ইইউ কমিশনের রিভিউ মিটিং রয়েছে। সেখানে সন্তোষজনক অবস্থান তুলে ধরতে ব্যর্থ হলে সাময়িক সময়ের জন্য ইইউ’র বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার হতে পারে। একই সুরে কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনেইত পিয়েরে লারামি বলেন, পোশাকের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে বায়ারদের সঙ্গে দর কষাকষি করা যেতেই পারে। কিন্তু সেটি চাওয়ার আগে কারখানাটি কতটা কমপ্লায়েন্ট এবং সেখানে কতটা শ্রম অধিকার রক্ষা হচ্ছে, ট্রেড ইউনিয়ন আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। আইএলও প্রতিনিধি মাহেন্দ্র নাইডু বলেন, বাংলাদেশে শ্রম পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে, এটি এখনও চলছে। বায়ারদের উচিত শ্রমিকের স্বার্থে তাদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে পোশাকের দাম পুনর্বিবেচনা করা।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ৯:০৩ পিএম says : 0
    অধ্যাপক রেহমান সোবহান অবশ্যই দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের মধ্যে অন্যতম এবং প্রখ্যাত এবং প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ এটা মানতেই হবে। এখানে আমি তারমত একজনকে দেশের জন্য মানে তৈরি পোশাক শিল্প গার্মেন্টসের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে দেখে খুশি হয়েছি। আমি দেখেছি তিনি দেশের চেয়ে আবার অন্য দেশের প্রতি দরদী সেটা বাদ দিয়ে তিনি যদি প্রকৃতই দেশের মঙ্গলের জন্য এই খাতের দিকে নজর দিয়ে থাকেন তবে আমি নিশ্চিত এবার এই খাতে উন্নতি হলে হতেও পারে। কিন্তু যেহেতু এই খাতের উপর দেশের ভবিষত অনেকটা নির্ভরশীল তাই এটাকে একটু টুইষ্ট করে সরকারের মানে এএল এর রারটা বাজান সম্ভব সেটা ভেবে যদি তিনি কিছু করেন তবে আমি নিশ্চিত আল্লাহ্‌ এবার ওনাকে ক্ষমা করবেন না। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের ঘামে নির্মিত তৈরি পোশাকের ‘লাভের গুড় পিঁপড়ায়’ খাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো মালিকের একার পক্ষে গ্রার্মেন্টসে টেকসই শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা অসম্ভব। এই কথাটা আমি মানিনা কারন কারখানার মালিকই হচ্ছে শ্রমিকদের অভিভাবক এটা দুনিয়া এবং আখেরাতেরও আইন। মালিক চাইলেই শ্রমিকদের জীবনের পরিবর্তন আসতে পারে এটাই সত্য মানে মহা সত্য। আমরা মালিকের পয়সা চাঁদা বাবত পাই এসব বড় বড় হোটেলে ভাল ভাল খেয়ে বড় বড় কথা বলতে কাজেই মালিকের পক্ষে কথা না বললে আবার পয়সা হজম হবে না তাই তিনি বলেছেন আমি কিছু মনে করি না। ৫ ডলারে কিনে সেটা ২৫ ডলারে বেঁচে নাকি ৩০ ডলারে বেঁচে সেটা ক্রেতা বিক্রেতাদের খেলা এটা নিয়ে মাথা ঘামালে এর শেষ বের করা যাবেনা। প্রশ্ন হচ্ছে ৫ ডলার যেনাকি আমাদের ফ্যাক্টরির মালিকেরা বিক্রয় করছে সেই খানে। কাজেই আমি মনে করি রেহমান সোবহান সাহেব আসল দিকে মননিবেশ করুক। ‘রানা প্লাজার দুর্ঘটনা উপর সংলাপে রেহমান সোবহান বলেন, এ ঘটনায় জাতী লজ্জিত তাই খতিয়ে দেখা দরকার- এই দুর্ঘটনার পর পোশাক খাতে কী পরিবর্তন এনেছে, শ্রমিকদের ভাগ্যের কতটা উন্নতি ঘটেছে। সেটি না হলে আমরা এর কলঙ্ক মোচন করতে পারব না’ কথাটা সঠিক। কিন্তু এরজন্য দায়ী একমাত্র এবং একমাত্র মালিক পক্ষ এবং এই খাতের শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা যাদেরকে আড়াল করতে চাচ্ছেন এই প্রবীন ব্যাক্তি। এখানে বায়ারের কথা আনা হচ্ছে এবং এর উপর প্রচুর সভা সমাবেশ ইত্যাদি করা হয়েছে কিন্তু ফল কি হয়েছে সেটা কি এসব তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা দেখছেন না নাকি দেখেও না দেখার ভান করছেন। তাই যদি হয় তাহলে কার স্বার্থে এই ভান করা হচ্ছে এটাই ভাববার বিষয় নয় কি সোবহান সাহেব??? এসব বায়ারা আমাদের এসব কথা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয় কারন এরা ব্যবসাযী এদের কোন নীতি নেই এদের একটাই নীতি পয়সা খাটাবে তার উপর মুনাফা করবে। মুনাফা নেইত সেখানে তারাও নেই এটাই তাদের নীতি। তাই এর কম দাম পাচ্ছে বলে আজ বাংলাদেশের পোশাক নিচ্ছে আবার কম দামে না পেলে অন্য দেশ থেকে কিনবে এটাই স্বাভাবিক তাই না??? তিনি আরো বলেন ‘শঙ্কার কারণ হচ্ছে এই পোশাক খাতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আমাদের রাজনীতিবিদ ও সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনা কম এটাও সঠিক। রেহমান সোবহানের এই প্রশ্ন প্রসঙ্গে ওই সংলাপে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন বলেন, ‘পোশাকের দাম বাড়ানোর বিষয়টি ইইউর পলিসিগত সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ে না। এটি মালিক এবং ক্রেতার দর কষাকষির বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, শ্রম অধিকার রক্ষা ছাড়া ইউরোপে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার হতে পারে। একই সুরে কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনেইত পিয়েরে লারামি বলেন, পোশাকের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে বায়ারদের সঙ্গে দর কষাকষি করা যেতেই পারে। কিন্তু সেটি চাওয়ার আগে কারখানাটি কতটা কমপ্লায়েন্ট এবং সেখানে কতটা শ্রম অধিকার রক্ষা হচ্ছে, ট্রেড ইউনিয়ন আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। আমি ইইউ রাষ্ট্রদূত ও কানাডার হাইকমিশনারের সাথে একমত। আর এই শ্রমিক সুবিধা দিতে হবে মালিককে এবং এর ব্যবস্থা করবে সরকার। এটা পরিষ্কার কিন্তু এই বিষয়টা বার বার অন্যভাবে সামনে আনা হচ্ছে মালিক ও শ্রমিক নেতাদের স্বার্থে এটাই সত্য। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে কুটুবুদ্ধি থেকে দূরে থাকার ক্ষমতা দান করুন আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গার্মেন্টস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ