পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় যে বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ছিল সেই বাড়ির মালিক একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। তার নাম আবদুল্লাহ। দেশজুড়ে এত সতর্কতা জারির পরও আব্দুল্লাহ নিজের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তোলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করেছে সে নিজেও জঙ্গি। তবে তাকে এখনও ধরা সম্ভব হয়নি। পুলিশ বাড়িটি ঘিরে রাখার আগেই সে পরিবারসহ পালিয়েছে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকেই সে মোটামুটি বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করছে। ঠনঠনেপাড়ায় বসবাস করলেও এলাকাবাসীর সঙ্গে তার খুব একটা সম্পর্ক ছিল না।
স্থানীয়রা জানান, আবদুল্লাহর বয়স প্রায় ৪০ বছরের মতো হবে। পাঁচ বছর আগে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এর আগে তার নাম ছিল প্রভাত কুমার। তার বাবার নাম চৈতন্য বাউতি। মা সন্ধ্যা রানী। আবদুল্লাহরা তিন ভাই। বড় ভাই দিলীপ বিশ্বাস, মেঝ ভাই বিপুল বিশ্বাস ও সবার ছোট আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহ তিনটি বিয়ে করেছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে প্রভাত একটি বিয়ে করে। সেই ঘরে তার একটি মেয়ে রয়েছে। এরপর সে স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়। পরে মেঝ ভাই বিপুল বিশ্বাসের শ্যালিকাকে প্রেম করে বিয়ে করে। সেই ঘরে দু’টি ছেলে সন্তান হয়। পরে তাকেও ছেড়ে দেয় প্রভাত। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর সদর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল লতিফের মেয়ে ফাতেমা ওরফে রুবিনাকে বিয়ে করে আবদুল্লাহ। এ ঘরে তার আয়েশা (২) নামের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
প্রতিবেশী আসলাম, ইউসুফ আলী ও চাঁদ আলী জানান, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার পর আবদুল্লাহ পোড়াহাটির ঠনঠনেপাড়ায় ওয়াহেদ নামের একজনের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকায় মাঠের মধ্যে এই জমি কেনেন। সেখানে একটি দুই রুমের টিনশেড বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করেন। প্রতিবেশীরা দাবি করেন, আবদুল্লাহর বাড়িতে কেউ যেত না। মাঝে মধ্যে মোটরসাইকেলে অচেনা কিছু লোক তার বাড়িতে যাওয়া-আসা করত। বাড়িটি টিন দিয়ে চারদিক ঘেরা ছিল। বাইরে থেকে কিছুই দেখা যেত না। বাড়িতে থাকলেও কেউ ডাকলে আবদুল্লাহ সাড়া দিত না। সে সবার থেকে আলাদা ও বিচ্ছিন্নভাবে চলাফেরা করত।
প্রতিবেশী শিরিনা খাতুন বলেন, ‘আবুদল্লাহর স্ত্রী ফাতেমা ওরফে রুবিনা কারো সঙ্গেই কথা বলত না। সবসময় মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখত। তার স্ত্রীকে কেউ দেখতে পারত না। সব সময় বাড়ির গেট তালা লাগিয়ে রাখত।’
একই গ্রামের টিপু জোয়ার্দার জানান, ‘ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে আবুদল্লাহ পোড়াহাটির শরিফুল ইসলামের তেল পাম্পে ১৪-১৫ বছর শ্রমিকের কাজ করেছে। বর্তমানে সে আলমসাধু (স্যালো ইঞ্জিনচালিত যান) গাড়ি চালাতো। আলমসাধুতে সে কাঠের গুঁড়ি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত। মাঝে মধ্যে মোটরসাইকেলে ঘুরত। বিভিন্ন সময় তার সঙ্গে মোটরসাইকেলে অপরিচিত লোকদের আসতে দেখা যেত।’
জামিরুল ইসলাম নামে গ্রামের আরেক ব্যক্তি জানান, ‘আবদুল্লাহ গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়ত না। গ্রামের মসজিদে নাকি তার নামাজ হবে না এ কথা বলত। তাই সে শহরের মারকাজ মসজিদে নামাজ পড়তে যেত। গ্রামের কোনো লোকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এমন আমরা দেখিনি।’ তবে আবদুল্লাহ জঙ্গি হতে পারেন এই কথা জানার পর গ্রামের লোকজন বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন। আসলেই দোষী হলে তাকে গ্রেফতার করা উচিত বলে মনে করেন তারা।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় আবদুল্লাহর বাড়িটি ঘিরে রাখে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ রাতের জন্য অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেন। পরদিন শনিবার সকাল সোয়া ৯টা থেকে অপারেশন ‘সাউথ প’ (দক্ষিণে থাবা) শুরু হয়। অপারেশন চলাকালে ওই বাড়ি থেকে ২০ ড্রাম হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ১০০ প্যাকেট লোহার বল, ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ৯টি সুইসাইডাল বেল্ট, বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রিক সার্কিট, ১৫টি জিহাদী বই, ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৭ রাউন্ড গুলি, ১টি মোটরসাইকেল, ১টি চাপাতি, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, ৬টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে। এর মধ্যে ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট ও ২টি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয় বলে ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি শেখ দিদার আহম্মেদ জানান। অপারেশনে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি), র্যাব, পুলিশ, পিবিআই, এলআইসি, বোমা ডিসপোজাল ইউনিট, খুলনা রেঞ্জ পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চার শতাধিক সদস্য অংশ নেন। ডিআইজি দিদার আহমেদ আরো জানান, বাড়িটিকে জঙ্গিদের বোমা তৈরির কারখানা বলা যেতে পারে। এই বাড়িতে তিন-চার জন জঙ্গি ছিল। তারা আগেই পালিয়ে গেছে। এই জঙ্গিদের সবাই জেএমবি ও নব্য জেএমবির সদস্য। এই বাড়িতে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিভাগীয় পর্যায়ের লোকজন আসা-যাওয়া করত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।