পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রিক দেবী মূর্তি অবিলম্বে অপসারণের দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের গতকালের মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। জনসমুদ্রে আগামী রমজানের পূর্বেই গ্রিক দেবী মূর্তি অপসারণের দাবি করে দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম রমজানের পূর্বে মূর্তি অপসারণ না করলে আগামী ১৭ রমজান বদর দিবসের জেহাদের চেতনায় সারা দেশে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে এবং ঈদের পর দেশবাসীকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হবে।
মহাসমাবেশের গণজমায়েতের উদ্দেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, মুসলমানদের ঈমান, ধর্ম-বিশ^াস এবং স্বকীয় সংস্কৃতির উপর জাতীয়ভাবে আঘাত করা হচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এবং জাতীয় ঈদগাহের পাশে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন করে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনার উপর সবচেয়ে বড় আঘাত হানা হয়েছে। পীর সাহেব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূর্তি কিভাবে এলো, কোথায় থেকে এলো, কে বসাল তিনি তা জানেন না? আমরা শুনেছি প্রধান বিচারপতির একক সিদ্ধান্তেই মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। তিনি বলেন, কাদের স্বার্থে বা কী প্রয়োজনে বিতর্কিত গ্রিক মূর্তি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হলো। এটা জনতার প্রশ্ন। পীর সাহেব বলেন, প্রধান বিচারপতির গ্রিক দেবীর প্রতি কোনো ভক্তি বা অনুরাগ থাকলে এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। তার এ পছন্দকে তিনি জাতীয়ভাবে চাপিয়ে দিতে পারেন না। মূর্তিস্থাপন করে তিনি দেশের সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে সংবিধান লংঘন করে গণ-মানুষের আস্থা এবং নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। অতএব এমন একজন বিতর্কিত ও অবিবেচক বিচারপতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির আসনে থাকতে পারেন না। বিতর্কিত বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগ করা উচিত।
গতকাল বাদ জুম’আ বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়কে আয়োজিত বিশাল জনসমুদ্রে সভাপতির বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘তোমরা মূর্তি থেকে পরিপূূর্ণরূপে দূরে থাকো।’ সূরা হজ :আয়াত ৩০। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মূর্তিপূজা ও শিরক কখনো ক্ষমা করবেন না।’ সূরা নিছা :আয়াত ৪৮। আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন মূর্তি ভাঙার জন্য। রাসূল সা. বলেছেন, আমি আবির্ভূত হয়েছি মূর্তি ও বাদ্যযন্ত্র ধ্বংসের জন্য।
অনেক বাধা বিপত্তি সত্তে¡ও গতকাল বাদ জুম’আ অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে যোগ দিতে ফজর নামাজের পর থেকেই ঢাকার বাহির থেকে নেতাকর্মীরা পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও আশপাশের এলাকায় সমবেত হতে থাকেন। জুম’আর নামাজের আগেই একের পর এক মিছিল যুক্ত হয়ে সমগ্র এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে এবং বাইতুল মোকাররম ছাড়িয়ে পল্টন, দৈনিক বাংলা, ফকিরাপুল পানির ট্যাংকি, জিপিও, প্রেসক্লাব, রাজউক এলাকায় জনতা অবস্থান নেয়। রাস্তায় জায়গা না পেয়ে অনেক মানুষ বিল্ডিংয়ের ছাদে ও উঁচু গাছে অবস্থান নেয়।
পূর্ব ঘোষিত এই মহাসমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুমতি না দিয়ে বৃহস্পতিবার গভীররাতে মাত্র ৪টি হর্নের অনুমতিসহ বায়তুল মোকাররম উত্তর সড়ক নির্ধারণ করে দেয় প্রশাসন। এটি সুস্পষ্ট নাগরিক অধিকার হরণ বলে মহাসমাবেশে উল্লেখ করা হয়।
মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, মাওলানা আব্দুল হক আজাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব- অধ্যাপক এ টি এম হেমায়েত উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কাদের ও আলহাজ আমিনুল ইসলাম, নগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, যুবনেতা কে এম আতিকুর রহমান, উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ ফজলে বারী মাসউদ, শায়খুল হাদীস মাওলানা মকবুল হোসাইন, শ্রমিকনেতা আলহাজ আব্দুর রহমান, শিক্ষকনেতা এ বি এম জাকারিয়া, এ্যাডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, আলহাজ জান্নাতুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনায় ছিলেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, মাওলানা নেছার উদ্দিন ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী।
তিনি কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ সনদের স্বীকৃতি ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে কওমি সনদের স্বীকৃতি দ্রæত বাস্তবায়নের দাবি জানান।
পীর সাহেব ভারত সফর করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জন্য কি অর্জন করেছেন এবং স্পর্শকাতর প্রতিরক্ষা সমঝোতার বিষয়ে কি আছে, দেশবাসীর সামনে তা স্পষ্ট করার আহŸান জানান। পীর সাহেব আইন বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধসহ আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য পরিবেশ তৈরি করার আহŸান জানান। তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ গ্যাস, বিদ্যুৎ পানির দাম বৃদ্ধি না করার দাবি জানান। জঙ্গিবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীরা ইসলাম বিরোধীদের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রিন্সিপাল মাওলানা মাদানী বলেন, মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। মূর্তির পক্ষে ইনু, মেনন ও বাদলরা উলামাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজেদের নাস্তিক্যবাদী ও ইসলামবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করল। সময়মতো এদের সমুচিত জবাব দেয়া হবে।
মুফতি ফয়জুল করীম আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে জঙ্গিবাদ উত্থান হয়েছিল, সফরের পর জঙ্গিদের কোনো হদিস নেই। এটা কিসের ইঙ্গিত বহন করে, জাতি জানতে চায়? তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখে গরুর গোস্ত রান্নার জন্য বাবুর্চিকে মারধর, নারায়ণগঞ্জেও গরুর গোস্তের জন্য একজন মুসলমানকে প্রহার করা হয়েছে। এটা দেশের জন্য অশনিসঙ্কেত। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই বলে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের জন্য যুদ্ধ করিনি। এ প্রসঙ্গে আমিও বলতে চাই ইসলাম নিয়ে বেঁচে থাকা যাবে না, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে জানলে মুসলমানরা মুক্তিযুদ্ধ করত না। মূর্তি সা¤প্রদায়িকতার প্রতীক, এর জায়গা মন্দিরে। মূর্তিবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে, মূর্তি অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত মুসলমানরা ঘরে ফিরবে না। রক্ত ও জীবন দিয়ে হলেও মূর্তি রুখে দিবে।
মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষের ঈমান-আকিদা ও বোধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মূর্তি স্থাপন করে প্রধান বিচারপতি অনুচিত কাজ করে তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। সময় থাকতে মূর্তি সরান না হলে ঈমানদার জনতা উত্তেজিত হলে আখের রক্ষা হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।