পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল বিরোধী ঘেরাও কর্মসূচি : এখানেই তৈরি হয় আকরাম নান্নু তামিম আফতাব আশীষ ইকবাল
চট্টগ্রাম ব্যুরো : নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্মাণাধীন সুইমিংপুল কমপ্লেক্স ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ৭ পুলিশসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ২ পুলিশ ও গুলিবিদ্ধ ৩ ছাত্রলীগ কর্মীসহ ৭ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষে ছাত্রলীগ কর্মীদের লাঠি ও পাথরের জবাবে বেধড়ক লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল ছুড়েছে পুলিশ। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা আউটার স্টেডিয়াম, কাজির দেউড়ি ও নুর আহমদ সড়ক এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। অগ্নি সংযোগ করা হয় আউটার স্টেডিয়ামের বিভিন্ন স্থাপনা ও দোকানপাটের মালামালে।
সিটি মেয়র ও সিজেকেএস’র সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। গত ১০ এপ্রিল লালদীঘির সমাবেশ থেকে তিনি শিশু-কিশোরদের খেলার জায়গা বন্ধ করে সুইমিংপুল নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করতে আলটিমেটাম দেন।
তিনি ওইদিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন সুইমিংপুল নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ করা না হলে তার ছেলেরা (ছাত্রলীগ) তা ভেঙে দেবে। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সমর্থিত মহানগর ছাত্রলীগও গত ১৬ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়ে সুইমিংপুল নির্মাণ বন্ধ করতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। এ ধারাবাহিকতায় গতকাল বিকেলে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ৫ শতাধিক নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় সমাবেশ করে।
সমাবেশের একপর্যায়ে তারা নির্মাণাধীন সুইমিং পুলে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশের উপরও হামলা করে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সদস্যরা জানান, ছাত্রলীগ কর্মীরা সুইমিংপুল নির্মাণের জন্য দেয়া টিনের ঘেরাও ভাঙচুর করে কয়েকটি পয়েন্টে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় তারা পুলিশের প্রতি বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী পুলিশের কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে বন্দুকের বাঁট দিয়ে পুলিশকে পেটাতে থাকে। কেউ আবার পুলিশের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে পুলিশকে আঘাত করে।
সুইমিংপুল নির্মাণের জন্য মাঠে জড়ো করে রাখা কাঠ ও ইট নিয়ে তারা পুলিশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেখানে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ পর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে আমরা রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল ছুড়তে বাধ্য হই। এ সময় শতাধিক পুলিশ সদস্য লাঠি নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের ঘেরাও করে বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে। ছাত্রলীগ কর্মীরাও পুলিশের উপর ইট ছুড়ে মারে। দীর্ঘক্ষণ দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগ নেতাদের হস্তক্ষেপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কর্মীরা আউটার স্টেডিয়াম থেকে মূল সড়কে চলে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা কয়েকভাগে ভাগ হয়ে বিভিন্ন সড়কে বেপরোয়া ভাঙচুর শুরু করে। ছাত্রলীগের হামলায় নুর আহমদ সড়ক, কাজির দেউড়ি মোড়, আলমাস সিনেমা মোড়, স্টেডিয়াম এলাকায় ১৫-২০টি যানবাহন ভাঙচুর হয়। কাজির দেউড়ি মোড়ের যাত্রী ছাউনির পাশের একটি দোকানসহ কয়েকটি ফলের দোকানে ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় আতঙ্কে দোকানিরা পালিয়ে গেলে কিছু কিছু দোকানে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। কাজির দেউড়ি মোড়ে কয়েকটি ফলের দোকানের মালামাল ও চেয়ার-টেবিল রাস্তায় জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। সংঘর্ষ চলাকালে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা দৃশ্যত রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। লোকজন দোকান-পাট বন্ধ করে দিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নেয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ছাত্রলীগ কর্মীরা এলাকা ছেড়ে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে সেখান থেকে ছাত্রলীগ সন্দেহে এক কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি অভিযোগ করেন, নগরীর শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ উন্মুক্ত রাখার দাবিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে যে আন্দোলন করে আসছেন তার ধারাবাহিক কর্মসূচি হিসেবে আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে আসে তারা। তিনি অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলাকালে পুলিশ তাদের উপর হামলা করেছে। ২ কর্মী গুলিবিদ্ধসহ আহত ৬ কর্মীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান রনি।
সংঘর্ষের পর আউটার স্টেডিয়ামে সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসাইন বলেন, সরকারি সংস্থা সিজেকেএস’র উদ্যোগে আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ চলছে। সিজেকেএস’র সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ৫-৬শ’ কর্মী মিছিল নিয়ে আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় আসে। এখানে কোনো কর্মসূচি পালনের পূর্ব অনুমতি নেয়নি তারা। তারপরও আমরা তাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
কিন্তু সমাবেশের একপর্যায়ে তারা সুইমিংপুল প্রকল্পে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় তারা পুলিশের উপরও হামলা চালায়। পুলিশ বাধ্য হয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে লাঠিচার্জ, শটগানের গুলি ও টিয়ারসেল ছুঁড়েছে। তিনি বলেন, এটি সরকারি প্রকল্প, তারাও সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। তাদের কোনো আপত্তি থাকলে তারা দলীয়ভাবে উত্থাপন করতে পারে। কিন্তু তা না করে সরকারি স্থাপনায় হামলা করার ঘটনা আমরা প্রতিহত করেছি। ভিডিও ফুটেজ আছে কারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হবে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হবে।
এদিকে আহতদের মধ্যে এস আই শহীদুল ইসলাম ও কনস্টেবল পিপলু বড়–য়াকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আবদুল হান্নান জানান, শহীদুল ইসলামের মাথা ফেটে গেছে আর পিপলু বড়–য়ার অন্ডকোষ থেতলে গেছে। তাদের দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চমেক হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ২ ছাত্রলীগ কর্মীসহ ৫ জনকে ভর্তি করা হয়। তাদের অবস্থাও গুরুতর বলে জানান চিকিৎসকরা।
আউটার স্টেডিয়াম উন্মুক্ত রাখার দাবি
এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের পাশে আউটার স্টেডিয়াম খেলোয়াড় তৈরির নার্সারি হিসেবে পরিচিত নগরবাসীর কাছে। এ মাঠে খেলে জাতীয় দলে ঠাঁই পেয়েছে সাবেক ক্রিকেটার আকরাম হোসেন, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার আফতাব আহমেদ, বর্তমান জাতীয় দলের তামিম ইকবাল, ফুটবলার আশীষ ভদ্র ও ইকবাল খানসহ নামি-দামি আরও অনেক খেলোয়াড়। আউটার স্টেডিয়ামকে ঘিরে ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সুইমিংপুল কমপ্লেক্স নির্মাণে তোড়জোড় শুরু হলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে মহিউদ্দিন চৌধুরীর চলমান বিরোধের অন্যতম ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় এ সুইমিংপুল। মহিউদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ করেন, একদিকে শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ রুদ্ধ করা হচ্ছে, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আয়োজনকেও বাধাগ্রস্ত করতে এ সুইমিংপুল নির্মাণ করা হচ্ছে। নগরবাসীও চায় উন্মুক্ত থাকুক। ৬০ লাখ মানুষের এ মহানগরীতে খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। এ কারণে আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন ক্রিকেট একাডেমির কয়েকশ’ শিক্ষার্থী অনুশীলন করে। সুইমিংপুল কমপ্লেক্স হলে অনুশীলনের জায়গা আর থাকবে না এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।