পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের অনুমোদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিলেও হাইকোর্ট তা স্থগিত করে দেয়। অথচ আউট সোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগের নামে বাণিজ্য শুরু করেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কর্মচারী সমিতির একটি অংশ। জনপ্রতি লাখ টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর চাকরি প্রত্যাশীরাও প্রহর গুনছেন চাকরি পাবেন এই আশায়। এই চক্রটি আগেও একাধিকবার এভাবে কর্মচারী নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সূত্র মতে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আউট সোর্সিং হিসেবে পাঁচটি পদে ১৭৬ জন লোক নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অনুমোদনের পরপরই চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে জনপ্রতি লাখ টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ সরকারি চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল শাখার সভাপতি আব্দুল খালেক ও হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, আউট সোর্সিং জনবল নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন মো. পারভেজ রানা গং। ওই রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আউট সোর্সিং জনবল নিয়োগের উপর ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন। ফলে আটকে যায় আউট সোর্সিং জনবল নিয়োগের কার্যক্রম।
হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২০১৬-২০১৭ অর্থ-বছরের জন্য ওয়ার্ডবয়-আয়া পদে ১৬২ জনসহ পাঁচটি পদে মোট ১৭৬ জন লোক নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। অনুমোদিত জনবল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়োগ করার কথা। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই জনবল সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজু এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। যেটির সঙ্গে কর্মচারী সমিতির নেতা আব্দুল খালেক ও তার ছেলে শাহীন খান জড়িত। তারা চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১ লাখ করে টাকা আদায় করেছেন। কর্মচারীদের প্রথম ৪ মাসের জন্য নিয়োগ করা হলেও পরবর্তীতে তাদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হবে এমন প্রলোভনে টাকা আদায় করা হয়েছে।
টেন্ডার প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের টেন্ডার শাখার ইনচার্জ মতিউর রহমান বলেন, আউট সোর্সিং জনবল নিয়োগের বিষয়ে কোনো টেন্ডার হয়েছে কিনা আমি জানি না। কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে কিনা তাও আমার জানা নেই।
হাসপাতালে উপ-পরিচালক ডা. খাজা আব্দুল গফুর বলেন, জনবল নিয়োগের বিষয়ে এখনো ঠিকাদারি বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করার কারণে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আউটসোর্সিং হিসেবে জনবল নিয়োগের অনুমোদন চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয় হাসপাতাল পরিচালকের দপ্তর থেকে। ওই চিঠির পর আউট সোর্সিং হিসেবে পাঁচটি পদে ১৭৬ জন লোক নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়। এরপরই জনবল নিয়োগের বিষয়টি অবহিত করতে চলতি বছরের ৮ ফেব্রæয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালকের দপ্তরে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (প্রশাসন-১) মো. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (স্মারক নং-ঢামেকহা/প্রশা/২৯২. তারিখ: ২০/০১/২০১৭) চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৭৬ জন লোক ২০১৬-১৭ অর্থ-বছরের জন্য আউট সোর্সিং সংক্রান্ত নীতিমালা ও সর্বশেষ বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণের শর্তে আউট সোর্সিং হিসেবে নিয়োগের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হলো। চিঠিতে কিচেন সুপারভাইজার পদে ১ জন, অ্যাম্বুলেন্স হেলপার ৮ জন, ওয়ার্ডবয় ও আয়া ১৬২ জন, ওয়েলডার ২ জন এবং মালি ৩ জনসহ মোট ১৭৬ জনের কথা উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে, আউট সোর্সিং হিসেবে যে ১৭৬ জন কর্মচারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করবেন তাদের জন্য মার্চ মাস থেকে জুন পর্যন্ত ৪ মাসের বেতন ও ভাতা খাতে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯২ টাকা ব্যয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন চেয়ে ১৩ ফেব্রæয়ারি স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। চিঠিতে তিনি ওয়ার্ডবয়, আয়া, অ্যাম্বুলেন্স হেলপার ও মালির মাসিক বেতন বাবদ জনপ্রতি ১৯ হাজার ৪৩৮ টাকা, কিচেন সুপারভাইজারের ১৯ হাজার ৭৫০ টাকা এবং ওয়েল্ডারের ২০ হাজার ২৫০ টাকা হারে মোট ১ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা, একটি উৎসব ভাতা বাবদ ১৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০ টাকা এবং নববর্ষ ভাতা বাবদ ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৭০ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৫৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯২ ব্যয়ের অনুমোদন চেয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জনবল নিয়োগের অনুমোদন সংক্রান্ত চিঠি ঢামেক হাসপাতালে পৌঁছার পরই কাজ হাতিয়ে নিতে নানা চেষ্টা ও তদবির শুরু করেন কর্মচারী সমিতির নেতা আব্দুল খালেক। এক পর্যায়ে হাসপাতাল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তিনি কাজটি হস্তগত করেন। এরপরই তিনি লোক নিয়োগের বিষয়টি প্রকাশ করেন এবং হাসপাতাল সাবেক ও বর্তমান কর্মচারীরা তাদের আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতজনদের আউট সোর্সিং হিসেবে চাকরিতে ঢোকানোর জন্য কর্মচারী সমিতির নেতা আব্দুল খালেক ও তার ছেলে শাহীন খানের দ্বারস্থ হন। সুযোগ বুঝে তারা চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে জনপ্রতি লাখ টাকা করে আদায় করেন।
কিন্তু নিয়োগ কার্যক্রম বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন (যার নম্বর-৪৩৩৭/১৭) দায়ের করেন মো. পারভেজ রানা গং। আর ওই রিট পিটিশনের পর আদালত ১৭৬ কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় আউট সোর্সিং জনবল নিয়োগ কার্যক্রম। তবে চাকরি প্রত্যাশীরা চাকরি পাবেন এই আশায় এখন অপেক্ষা করছেন।
রিট পিটিশনার মো. পারভেজ রানা বলেন, ২০১০ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৫৪ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্তদের কর্মস্থলে যোগদান করতে না দেয়ায় হাইকোর্টে রিট করে চাকরিপ্রাপ্তরা। ওই রিট আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রিট আবেদনকারীদের মধ্যে ৩১৫ কর্মস্থলে যোগদানের সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের আদেশ থাকা সত্তে¡ও ৩৮ জনকে কর্মস্থলে যোগদান করতে দেয়া হয়নি। অথচ আউট সোর্সিং হিসেবে ১৬২ জন ওয়ার্ডবয় ও আয়াসহ ১৭৬ জন নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা ৩৮ জন আউট সোর্সিং পদে জনবল নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করি। উচ্চ আদালত ওই রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে আউট সোর্সিং নিয়োগের কার্যক্রমের ওপর ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন।
কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, ২০১০ সালে যেসব কর্মচারীদের নিয়োগপত্র হয়েছিল তাদের অনেকেই উচ্চ আদালতের আদেশে কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। এর মধ্যে ৩৮ জন আছে, যাদের নিয়োগপত্র নিয়ে সন্দেহ থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের যোগদান নেয়নি। তাদের নিয়োগপত্র নীলক্ষেত থেকে বানিয়ে আনা হয়েছে। তারা ঢামেক হাসপাতালে যোগদান করতে না পেরে এসব অপপ্রচার করছে। যে নিয়োগ কার্যক্রম মাত্র শুরু হয়েছে, সেখানে টাকা নেয়ার প্রশ্নই আসে না। খামাখা আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।