Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৪০ লাখ অনাহারি মানুষ দুর্ভিক্ষ কবলিত

| প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধে ত্রাণ কার্যক্রমে স্থবিরতা, লুটতরাজে নেমেছে সেনাবাহিনীও। ঘাস-শাপলা খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে ক্ষুধার্তরা
ইনকিলাব ডেস্ক : ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে দুর্ভিক্ষ পীড়িত দক্ষিণ সুদানের চল্লিশ লাখ মানুষ। ফেব্রæয়ারিতে ইউনিটি স্টেটের ২টি কাউন্টিতে সম্মিলিতভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে দেশটির সরকার ও জাতিসংঘের তিনটি সংস্থা। তবে গৃহযুদ্ধ থামেনি। বরং যুদ্ধরত দুই পক্ষই ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত করছে। বাধা সৃষ্টির পাশাপাশি চলছে সেনাবাহিনীর অবাধ লুটতরাজ। এই বাস্তবতায় ঘাস আর শাপলা খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন ক্ষুধার্ত মানুষেরা। সরকার আর সরকার-বিরোধীদের লড়াইয়ের শিকারও হচ্ছেন তারা। বাধ্য হচ্ছেন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে। বিস্ফোরক থেকে রক্ষা পেতে পালাতে গিয়ে কেউ কেউ লাফিয়ে পড়ছেন নদীতে। ঘটছে প্রাণহানি। সা¤প্রতিক সময়ে প্রাণ হারানো মানুষের বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। পাঁচ বছর আগে বিশ্বের নবীনতম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল দক্ষিণ সুদান। ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় সুদানের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে দ. সুদানের মানুষ। তবে ২০১৩ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই সংঘর্ষ আজকে এসে ভয়ঙ্কর গৃহযুদ্ধের রূপ নেয়। এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ হাজার মানুষ। আর ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের ৪০ শতাংশই এখন রয়েছে খাদ্য সংকটে। ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউনিটি স্টেটের বাসিন্দা। ওই স্টেটের ২টি কাউন্টিতে আনুষ্ঠানিক দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে ফেব্রæয়ারিতে। দেশটির সরকার ও জাতিসংঘের তিনটি সংস্থা মিলিতভাবে এ ঘোষণা দেয়। গত ৬ বছরের মধ্যে এটাই বিশ্বের কোথাও দুর্ভিক্ষ ঘোষণার প্রথম ঘটনা। ২০১৩ সাল থেকে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়া দেশটিতে সরকার ও বিদ্রোহী দুই পক্ষই কার্যত ওই ক্ষুধার্ত মানুষদেরকে মৃত্যুপথে ঠেলে দিচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনাহারে নিজের ভাইকে মারা যেতে দেখেছেন ম্যাথিউ ইয়াও নামের সুদানি। এরপর নিজ হাতেই তার দাফন সম্পন্ন করেন। তার মতোই অনাহারে মৃত্যুবরণ করা অনেকের মাটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধাপীড়িত দেশটিতে। খবরে বলা হয়, ফেব্রæয়ারিতে জাতিসংঘের দুর্ভিক্ষ ঘোষণার পর ভাবা হয়েছিল দেশটিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা আসবে। কিন্তু ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যে সকল ত্রাণকর্মীদের দেশত্যাগের নির্দেশ দেয় দক্ষিণ সুদানের সরকার। এদিকে অব্যাহত থাকে লড়াই ও সংঘর্ষ। এ অবস্থায় ইয়াও ও স্থানীয়রা শাপলা ও বিশেষ প্রজাতির একটি মাছ বেঁচে আছেন। মায়েনদিত রাজ্যে প্রবেশ করতে পারা কিছু ত্রাণকর্মী জানিয়েছেন, সেখানে স্থানীয়দের ভালো পোশাকও পরিধানের অবস্থা নেই। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের অভাবে ভয়াবহ মানবিক সংকটে দেশটির নাগরিকরা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সরকারি বাহিনীই তাদের নিয়ন্ত্রিত স্থানগুলোতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছতে দিচ্ছে না। গত গ্রীষ্মে জুবার একটি স্টোর থেকে ৪ হাজার টন খাবার লুট করে সেনারা। ২ লাখ ২০ হাজার মানুষের এক মাসের জন্য বরাদ্দ ছিল। জাতিসংঘের উপ-মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিশেল সিসন বলেন, দেশটির সরকারের হয়তো ইচ্ছা করেই এই ত্রাণ প্রত্যাখ্যান করছে। কারণ তাদের ধারণা স্থানীয়রা হয়তো বিদ্রোহীদের সাহায্য করছে। তিনি মনে করেন, সরকারের এমন পদক্ষেপের কারণে খাদ্য সংকট আরো বৃদ্ধি পাবে। জাতিসংঘের হিসেব মতে, প্রতি মাসে ত্রাণ বহনকারী বিমানের জন্য অন্তত ৮০ বার অনুমোদন প্রত্যাখ্যান করে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীরা। এছাড়া প্রত্যেক ত্রাণকর্মীদের কাযক্রম চালানোর জন্য ১০ হাজার ডলারের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করারও পরিকল্পনা করছে সরকার। দক্ষিণ সুদানের রাজধানী বেনতিউ থেকে মাভেনদিত পর্যন্ত ৪০০ মাইলের এই পথে অন্তত ৭০টি চেকপয়েন্ট রয়েছে। প্রত্যেকটি চেকপয়েন্টেই সশস্ত্র সেনারা ত্রাণ বহনকারী ট্রাক থেকে খাবার ও অর্থ দাবি করে। মায়েনদির দুইটি অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনী যুদ্ধের কারণে সেখানে ত্রাণ পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো। বিমান দিয়ে ত্রাণ সরবরাহ করা হলেও সেনাসদস্যরা সেগুলো লুট করে নিয়ে যায়। স¤প্রতি একটি হেলিকপ্টারে করে মায়েনদিতে যান জাতিসংঘ কর্মকর্তারা। তারা বোঝার চেষ্টা করেছেন, কিভাবে অসহায় মানুষগুলোকে সাহায্য করা যায়। কিছুদিন আগে ক্যারোলিনা ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা সামারতিয়ান পার্সের আট কর্মীকে আটকে রেখেছিল বিদ্রোহীরা। ত্রাণকর্মীরাও অনেক সময় ক্রসফায়ারের শিকার হয়। ২০১৫ সালে ৩১ জন ত্রাণকর্মী হামলার শিকার হয়েছিলেন। পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে এই সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছে এইড ওয়ার্কার ডাটাবেজ। ২০১৬ সালের আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান এখনো পাওয়া যায়নি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৭৯ হন ত্রাণকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। বিশ্ব খাদ্য প্রকল্পের পরিচালক জয়েস লুমা বলেন, তারা এভাবে আচরণ করে সাহায্য আশা করতে পারে না।’ ত্রাণ কর্মকর্তারা জানান, দেশটির অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এর একটি রাজনৈতিক সমাধান দরকার। না হলে প্রতি সংঘর্ষেই প্রাণ হারাবে নিরীহ মানুষ। তবে সেই রাজনৈতিক সমাধান এখনো আসেনি। তবে সহায়তা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে সরকার। দাবি করছে, দেশটির এমন পরিস্থিতি সেনা সদস্যদের এমন আচরণ করতে বাধ্য করছে। এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ