Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

পাবনা মানসিক হাসপাতালের জায়গা দীর্ঘ মেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের কার্যক্রম স্থগিত

| প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পাবনা জেলা সংবাদদাতা : দেশের একমাত্র স্পেশালাইজড প্রতিষ্ঠান পাবনা মানসিক হাসপাতালের ১৫ শতাংশ জায়গা খাস খতিয়ানভুক্ত করে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের নামে দীর্ঘ মেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের কার্যক্রম অবশেষে গত বৃহস্পতিবার স্থগিত করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অতি সম্প্রতি ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে রাতের আঁধারে অনুকূল চন্দ্রের হেমায়েতপুর সৎসঙ্গে ঠাকুরের আবির্ভাব উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শত শত ভক্ত এবং আশ্রমে স্থায়ীভাবে থাকা ভক্তদের কতিপয় অংশ মিলে পাবনা সরকারী মানসিক হাসপতালের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে হাসপাতালের অভ্যন্তরে ১৫ শতাংশ জায়গা দখল করে ঘিরে বেড়া দিয়ে অবৈধভাবে দখলে নেয়। তাদের দাবী এই স্থানে ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। আজ থেকে প্রায় ২০/২২ বছর আগেও তারা এই জায়গা দখলে নিতে মানসিক হাসপাতালের ওষুধ ভান্ডার, অকুপেশন থেরাপী ও তদসংলগ্ন ২টি ওয়ার্ড স্থাপনা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। স্থানীয় লোকজন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সরকারের অধিগ্রহণকৃত এই জায়গাটি দখলে নিতে দেয়নি। প্রতি বছর ঠাকুরের আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে দেশের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এমপিদের আমন্ত্রণ করেন এবং তাদের কাছে সরকারের মানসিক হাসপাতালের জায়গার দাবি করে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিমন্ত্রী ও তাঁর পতœী আমন্ত্রণে এলে তাঁদের কাছে একই দাবি উত্থাপন করা হয়।
এদিকে, হেমায়েতপুর আশ্রমের ভক্তরা বহুদিন আগেই ২ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। অনুকূল চন্দ্র ঠাকুরের এক নাতীর অনুসারীরা পাটুরিয়ায় আশ্রমে থাকেন। পাবনা জেলা শহরের পাথরতলায় তাদের শাখা রয়েছে। এই পক্ষ ৬২ শতাংশ মানসিক হাসপাতালের জায়গা দাবি করে আদালতে মামলা করেন। হেমায়েতপুরে ঠাকুরের আশ্রমের অপর অংশের ভক্তরা সেই জায়গার পরিমাণ প্রায় ১৫ শতাংশ বলে দাবি করেন। (যে স্থানে ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র জন্ম গ্রহণ করেন) উভয় পক্ষ আদালতে মামলা দায়ের করে। নিম্ন আদালত হেমায়েতপুর আশ্রমের পক্ষে ১৫ শতাংশ জায়গা দেওয়ার নির্দেশ দিলে পাটুরিয়া পক্ষ মহামান্য উচ্চ আদালতে আপীল করে। বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই বিচারাধীন বিরোধীয় সম্পত্তি দখলে নিতে হেমায়েতপুর সৎসঙ্গ আশ্রমের ভক্তরা সরকারী মানসিক হাসপতালের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ১৫ শতাংশ জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং স্থানীয় লোকজন ও মানসিক হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালোর বিরুদ্ধে পক্ষপাত্বিতের অভিযোগ তুলে ঠাকুরের সৎসঙ্গ আশ্রম পাটুরিয়া পক্ষ বাংলাদেশ পৃথকভাবে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন। অপরদিকে, মানসিক হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ এই অবৈধ দাবির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে। কোন প্রকার কাগজপত্র ছাড়াই গভীর রাতে হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে জায়গা দখল নেওয়ার ঘটনায় শহরে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে হেমায়েতপুর সৎসঙ্গ আশ্রমের কর্মী-সমর্থক ও এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে ঐ জায়গা থেকে লোকজনকে বের করে দিয়ে গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ।
পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো পাবনা মানসিক হাসপাতালের অভ্যন্তরের ঐ ৬২ শতাংশ জায়গার মধ্যে থেকে হেমায়েতপুর সৎসঙ্গ আশ্রমের পক্ষে ১৫ শতাংশ জায়গা খাস খতিয়ান ভুক্ত করে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রম হেমায়েতপুরের নামে দীর্ঘ মেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করেন। আশ্রমের অপর পক্ষ বলছে, জেলা প্রশাসককে ভুল বুঝিয়ে কায়েমী স্বার্থবাদী পক্ষের লোকজন এই কাজটি করে নিয়ে ছিলো। যার কারণে হেমায়েতপুর সৎসঙ্গ আশ্রমের কর্মী-সমর্থকরা রাতের আঁধারে সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে মানসিক হাসপাতালের অভ্যন্তরের ঐ ১৫ শতাংশ জায়গা দখল করে এবং জায়গার চার পাশে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলে। বিরোধ নিষ্পত্তি না হতেই জেলা প্রশাসনের এহেন পদক্ষেপ সমালোচনার সম্মুখীন হয়। আইনজ্ঞরা বলেন, এটা আইনের লংঘন। বিরোধীয় কোন সম্পত্তির বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনের এহেন উদ্যেগ গ্রহণ ঠিক হয়নি।
অবশেষে বৃহস্পতিবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাস জমি অধিশাখা-২ থেকে উপ-সচিব শোয়াইব আহমেদ খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে পাবনা মানসিক হাসপাতালের ১৫ শতাংশ জায়গা খাস খতিয়ান ভুক্ত করে হেমায়েতপুর শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের নামে দীর্ঘ মেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের কার্যক্রম স্থগিত করেছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পাবনার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সৎসঙ্গ বাংলাদেশ-এর সম্পাদক শ্রীধৃতব্রত আদিত্য সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের অধিগ্রহণকৃত ঠাকুরের জায়গা আইনী প্রক্রিয়ায় পেতে দায়েরকৃত মামলাটি বাধাগ্রস্ত করতে হেমায়েতপুরের সৎসঙ্গ আশ্রমের কর্মী-সমর্থকরা বেআইনিভাবে জায়গাটি দখলে নেওয়ার অপচেষ্টা করেছে। যা মোটেও আইনসিদ্ধ নয় বলে তিনি দাবী করেন।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা: তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালের পাশর্^বর্তী শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র-এর ১২৯ তম আবির্ভাব দিবসকে কেন্দ্র করে ওই সেবা আশ্রমে আসা শত শত লোকজনকে নিয়ে সেবাশ্রমের কর্মীরা রাতের আঁধারে অবৈধভাবে ঐ জায়গা দখলে নিয়ে ছিলো। পরে পুলিশ দখলদারদের উচ্ছেদ করে গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আইনানুযায়ী আশ্রম কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের জায়গাটি পেলে ফিরিয়ে দিতে তাদের কোন আপত্তি নেই।
হেমায়েতপুর শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ সেবা আশ্রমের সভাপতি শ্রী বিমল রায় চৌধুরী এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক যুগোল কিশোর ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, পাবনা জেলা প্রশাসকের সহায়তায় ভূমিমন্ত্রীর স্ত্রী এসে এই জায়গাটি তাদের বুঝিয়ে দেন। তবে জায়গা বুঝিয়ে দেয়া সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। এখন জনমনে এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ভূমিমন্ত্রীর পত্নি সরকারি জায়গা কিভাবে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করতে পারেন?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাবনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ