রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
গডফাদার সোর্স অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে
আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : একের পর এক সুন্দরবনে শীর্ষ বনদস্যুরা শত শত আগ্নেয়াস্ত্র হাজার হাজার গোলাবারুদসহ র্যাবের কাছে আত্মসমার্পণ করলেও নতুন করে কয়েকটি দস্যু বাহিনীর আত্মপ্রকাশ জেলে বাওয়ালীদের জন্য আতংক হয়ে দেখা দিয়েছে। কিছুদিন স্বস্তিতে থেকে আবারও বনজীবীরা জিম্মি হয়ে পড়ছে বনদস্যুদের কাছে। গতকাল সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের চাইলোবগী খাল এলাকা থেকে নতুন দস্যু গুরু বাহিনীর সদস্যরা তরিকুল ইসলাম (৩৫) নামক একজন জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করেছে। গত এক সপ্তাহে খুলনাঞ্চলের প্রায় ৭/৮ জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে আটক রেখেছে বনদস্যুরা। আটককৃত জেলেদের পরিবারে চলছে চরম আহাজারী। র্যাব কোস্টগার্ড পুলিশ জ্যামিতিক হারে ডাকাত নিধন করলেও আবারও সুন্দরবনে ডাকাতের ডালপালা বিস্তার করছে। সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ দস্যুদমনের পাশাপাশি দস্যুদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি গডফাদার ও মালামাল অস্ত্র গোলাবারুদ এবং অর্থের যোগানদাতাদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। সুন্দরবনের মৎস্য ব্যবসায়ী কয়রার ভাগবা গ্রামের বাসিন্দা মো: হায়দার আলী ইনকিলাবকে বলেন, গুরু বাহিনীর সদস্যরা আমার জেলে অপহরণ করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। এলাকাবাসী অনুসন্ধানকালে জানায়, গুরু বাহিনীর সদস্যদের দু’টি খাসি, রাজহাস ও বাজার সরবরাহ করেছে কালাবগী গ্রামের সাবেক এক মেম্বার। ‘জ’ অদ্যাক্ষরের ঐ সাবেক মেম্বার নিজেকে কখনও র্যাবের সোর্স, কখনও পুলিশের সোর্স, আবার কখনও কোস্টগার্ডের সোর্স হিসেবে পরিচয় দেয়। তার বিরুদ্ধে দাকোপ থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। দাকোপ থানার অফিসার ইনচার্জ ইনকিলাবকে বলেন, উক্ত সাবেক মেম্বার এখন আমাদের সোর্স নয়। সে অন্য সংস্থার সোর্স হিসেবে কাজ করে বলে এলাকায় জনশ্রæতি রয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, গুরু বাহিনীর মালামাল সাপ্লাইয়ের কাজে নিয়োজিত রয়েছে জাফর ও আলাউদ্দিন। এদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা ও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে নিজেকে বিভিন্ন সংস্থার সোর্স পরিচয় দিয়ে জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, সুন্দরবনের বিভিন্ন ঘাট দখল এবং বেআইনীভাবে ট্রলার নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে চাইলোবগী খাল এলাকায় জেলেদের হুমকি ধমকি এছাড়া মাছ আদায় করছে। মৎস্যজীবীদের কাছে উক্ত সাবেক মেম্বার এখন ভয়ংকর ডাকাত বাহিনীর চেয়েও ভয়ংকর আতংক। সূত্রমতে, প্রতিনিয়ত ইলিশসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন মৌসুমে বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলে জলদস্যু বাহিনী বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সা¤প্রতিক সময়ে র্যাব, কোষ্টগার্ড, পুলিশ ও বন বিভাগের সাড়াশি অভিযানের মুখে ধ্বংস প্রাপ্ত হয় দস্যু বাহিনীদের সাম্রাজ্য। বিশেষ করে র্যাবের অব্যাহত অভিযানে সুন্দরবনের অধিকাংশ দস্যু বাহিনী আত্মসমার্পণ করে। জেলে বাওয়ালীদের মাঝে কয়েক যুগ পরে এবার আনন্দের বন্যা বইছিল। সুন্দরবন এক প্রকার ডাকাতমুক্ত হলেও নতুন করে ডাকাত বাহিনীর উৎপাত ও সোর্স নামধারী ঐ সাবেক মেম্বারের চাঁদাবাজি ও হুমকি ধমকিতে ফের আতংকিত হয়ে পড়েছে সুন্দরবনের বনজীবীরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, বনদস্যু কাসেম বাহিনীর প্রধান কাসেম ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর তার ছেলে এই গুরু বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে। ৫/৬ জনের এই ছিচকে ডাকাত দলের কারণে জেলেরা জিম্মি হয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে বন বিভাগের আদাচাকি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান, ডাকাতির ঘটনা তিনি শুনেছেন। তাদের নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে। তবে লোক ও জলযানের অভাবে সঠিকভাবে দস্যু দমন সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। অপরদিকে, বিভিন্ন অভিযান ও বিভিন্ন সংস্থার টহল সত্তে¡ও প্রতিনিয়ত লুন্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার মৎস্য সম্পদ। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের কয়েকশ’ নটিক্যাল মাইলের সমুদ্রসীমায় ৬০ হাজার ফিশিং ট্রলারের ৫ লক্ষাধিক মাঝি-মালার কোন নিরাপত্তা নেই। ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও দেশীয় সাগর দস্যুদের অত্যাচার-নির্যাতন, লুন্ঠন, হত্যা, সাগর বক্ষে নিক্ষেপ, মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদির কারণে জেলে ও মাঝি মালারা আতংকিত ও উদ্বিগ্ন। দেশের মৎস্য সম্পদের খনি বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশী সীমানায় নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের তৎপরতা ও টহল বৃদ্ধি ছাড়া এ দস্যুতা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। টেকনাফ থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন দক্ষিণ তালপট্টী পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর এবং শাখা নদীগুলোতে ফিশিং ট্রলারগুলো সারা বছরই মাছ ধরায় নিয়োজিত থাকে। প্রতি বছর এ ফিশিং ট্রলারগুলো প্রায় ১৫ লক্ষ টনেরও বেশী মাছ সাগর থেকে সংগ্রহ করে। গত ৫ বছরে সাগর দস্যুদের নিহত হয়েছে শতাধিক জেলে ও মাঝি মালা। অপহৃত হয়েছে কয়েক হাজার জেলে। সাগরদস্যুরা মুক্তিপণ বাবদ আদায় করেছে কোটি কোটি টাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।