বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : বনাঞ্চল ধ্বংসের মূল হাতিয়ার অবৈধ করাতকল। সুন্দরবন ঘেঁষা খুলনা ও বাগেরহাটে বৈধ করাতকল রয়েছে মাত্র ৪৭টি। আর অবৈধ করাতকলের সংখ্যা ৪৩৮। ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ও সামাজিক বনাঞ্চলে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন হচ্ছে এসব করাতকলে। বন বিভাগ বলছে- লাইসেন্সবিহীন অবৈধ করাতকল আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিধিমালা করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা, ২০১২ অনুযায়ী- সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত বা অন্য যে কোন ধরনের সরকারি বনভূমির সীমানা হতে ন্যূনতম ১০ কিলোমিটারের মধ্যে, বা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্থল সীমানা থেকে ন্যূনতম ৫ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন বা পরিচালনা করা যাবে না। একই সাথে ওই আইনে বলা হয়েছে- কোন সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান এবং জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিড়ম্বনা সৃষ্টি করে এমন কোন স্থানের নূন্যতম ২০০ মিটারের মধ্যে করাত-কল স্থাপন বা পরিচালনা করা যাবে না। এ আইনানুযায়ী সুন্দরবন ঘেঁষা করাতকলগুলো অনুমোদনবিহীন। আবার, যেগুলোর অনুমোদনের উপযুক্তস্থানে সেগুলো লাইসেন্স করছে না বছরের পর বছর ধরে। ফলে লাইসেন্স বা অনুমোদন না থাকায় সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে মালিকপক্ষ।
সামাজিক বন বিভাগের সূত্র জানান, খুলনার বটিয়াঘাটায় ১৫, দাকোপে ১১, পাইকগাছায় ৩৫, কয়রায় ২০, ডুমুরিয়ায় ৩৫, ফুলতলায় ৪০, দিঘলিয়ায় ১৭, রূপসায় ২৩ ও তেরখাদায় ১২টি অবৈধ করাতকল মিলে জেলায় মোট ১৮৮টি করাত কল রয়েছে। আর বৈধ ২৫ থেকে ৩০টি। এছাড়া খুলনা মহানগরীতে অবৈধ করাত কল রয়েছে অর্ধশতাধিক। আবার, বাগেরহাটের সদরে ৭টি, কচুয়ায় ২৬, চিতলমারী ৩২, ফকিরহাটে ২৪, মোল্যাহাটে ১৯, রামপালে ২৮, মংলায় ২১ ও মোড়েলগঞ্জে ৮৭টি মিলে মোট ২৫০টি অবৈধ করাত কল রয়েছে বাগেরহাট জেলায়। আর বৈধ করাত কল রয়েছে মাত্র ২২টি।
সুন্দরবন নিকটবর্তী চালনা বাজার, আচাভুয়া ও গোরকাঠি গ্রামে ৭টি করাতকল রয়েছে। এগুলোর মালিক খোকন, নূর মোহাম্মদ, অশোক, সুরঞ্জন, এনামুল, গফুর, মোস্তফা জানান- শুরুতে মিলের লাইসেন্স কয়েকবার নবায়ন করা হলেও এখন আর লাইসেন্স নবায়ন করা হয় না। কেউ কেউ বলেন, লাইসেন্স নবায়নের প্রস্তুতি চলছে। বাজুয়া, লাউডোব, দাকোপ, কৈলাশগঞ্জ ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়নে ৯টি করাতকল রয়েছে। এগুলোর মালিক মাসুদ খান, তপন রায়, ননী রায়, সাইফুল, মনোজ খয়রাতি, অরবিন্দু শীল, পোদ্দারগঞ্জে ফজলু এবং বটবুনিয়া বাবুল ও মনির। ওইসব করাতকলগুলোতে হরহামেশা চলছে কাঠ কর্তনের মহোৎসব।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. মুজিবর রহমান জানান, সুন্দরবন লাগোয়া ১০কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপিত হওয়া করাতকলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাঠপর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কাজ চলছে।
ডুমুরিয়ায় অবৈধভাবে চলছে ৩৫টি করাতকল। ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, পরিবেশ পড়ছে হুমকির মুখে। কলগুলো নিয়ম-নীতি ছাড়াই লাগামহীনভাবে চিরাই করছে বৈধ-অবৈধ বৃক্ষ। ফলে উজাড় হচ্ছে সামাজিক বনায়নসহ বিভিন্ন সড়কের পাশে থাকা সরকারি বে-সরকারি গাছ।
উপজেলা বন অফিসের কর্মকর্তা মো. ফুরকানুল আলম জানান, সামাজিক বন বিভাগ বাগেরহাট দপ্তরের নির্দেশে উপজেলায় সক্রিয় ৩৫টি করাত কল মালিককে নোটিশ করা হয়েছে। নোটিশে লাইসেন্স গ্রহনবিহীন কার্যক্রম পরিচালনায় আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলা হয়েছে।
ডুমুরিয়ার গাজী স’মিলের মালিক জিএম আনিচুর রহমান, সুমন স’মিলের মালিক আবু সাঈদ সরদার, নর্থ খুলনা স’মিলের মালিক প্রফুল কুমার জানান, পরিবেশ ছাড়পত্রসহ লাইসেন্স গ্রহনের যাবতীয় কাগজ-পত্র উপজেলা সামাজিক বন অফিসে জমা দিয়ে ২৩শ’ টাকার রশিদ গ্রহন করেছি। তারপরও আমাদের অবৈধ আখ্যায়িত করে নোটিশ করা হয়েছে। কেন আমাদের লাইসেন্স দেয়া হয় না।
খুলনা জেলা সামাজিক বন অধিদপ্তর বয়রার কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, লাইসেন্স দেয়ার মালিক জেলা প্রশাসক। সেখান থেকে লাইসেন্স গ্রহনপূর্বক কার্যক্রম পরিচালনা হয়।
সামাজিক বন বিভাগের (বাগেরহাট) বিভাগীয় কর্মকর্তা মোল্যা রেজাউল করিম বলেন, লাইসেন্সবিহীন অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে গত ৬ এপ্রিল গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে মধ্যে বন্ধ ও অপসারণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে অপসারণ না করলে অবৈধ করাতকল পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বা মামলা দায়ের করে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।