Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

‘আইকনিক টাওয়ার’ নির্মাণ হচ্ছে জলসিঁড়িতে

| প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : জাতীয় অর্থনীতির সম্ভাব্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বহুল আলোচিত এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্বপ্নের ১৪২তলা ‘আইকনিক টাওয়ার’ পূর্ব নির্ধারিত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় হচ্ছে না। জমির মাত্রাতিরিক্ত দাম ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই এমন সিদ্ধান্তের কারণ। ভবন নির্মাণে নতুন স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে বালু নদীর তীরে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২ নম্বর বøকের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত জলসিঁড়ি নামক নতুন প্রকল্পে। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণাধীন এ প্রকল্পেই হবে স্বপ্নের ‘আইকনিক টাওয়ার’। সেনাবাহিনী নিজেদের আবাসিক প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য এখানে প্রায় ৯০০ একর জমি কিনে তা প্লট তৈরির উপযোগী করেছে। এখানে আইকনিক টাওয়ার প্রকল্প নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনীর কাছ থেকে জলসিঁড়ি প্রকল্প থেকে কেনা হয়েছে ২০৫ একর জমি। এ জমিতেই টাওয়ারের পাশাপাশি পরিকল্পিত আবাসন কলোনি, ওল্ডহোম, স্টেডিয়াম এবং অত্যাধুনিক শহর গড়ে তোলা হবে। টাওয়ারের বাইরে অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য কিছুটা দূরে আলাদা রাখা হয়েছে ১০০ একর জমি।
জলসিঁড়ি আবাসিক প্রকল্পের ভেতরে এশিয়ার সবচেয়ে বড় টাওয়ার, স্টেডিয়াম, ওল্ডহোম, কনভেনশন সেন্টার, অত্যাধুনিক শহরের সকল সুবিধা সেনাবাহিনীর নিজস্ব আবাসিক এলাকার গুরুত্ব বাড়িয়ে দেবে। এ কারণেই সেনাবাহিনী আগ্রহী হয়ে কেপিসি গ্রæপের কাছে নিজস্ব প্রকল্প থেকে জমি বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারকে দেয়া পূর্ব প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী ৫০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়াম ও কনভেনশন সেন্টার পূর্বাচলেই নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে আইকনিক টাওয়ার নির্মাণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রæপ। এর জন্য পৃথকভাবে পূর্বাচলে ৬০ একর জমিও কেনা হয়েছে।
আইকনিক টাওয়ারের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ টাওয়ার। এরই মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক এই টাওয়ারের নকশাও চূড়ান্ত করেছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) দুই হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতার এই ভবন ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মাণ শেষ হবে বলে আশা করছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চলতি বছরের ২ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে এই প্রকল্প সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি আমার একটি স্বপ্নের কথা বলতে চাই। আমার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক ও জনবান্ধব একটি প্রকল্প সম্পর্কে সবাইকে বলব। আপনারা জানেন, পূর্বাচল ও এর নিকটস্থ এলাকা নিয়ে একটি স্বতন্ত্র মহানগর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ মহানগরে পিপিপি’র আদলে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। এর মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, একটি আধুনিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স এবং ১৪২ তলা আইকনিক টাওয়ার স্থাপন করা হবে।’
প্রসঙ্গত, উচ্চতার দিক থেকে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন হচ্ছে দুবাইয়ের ১৬৫ তলার বুর্জ আল খলিফা। ঢাকার ১৪২ তলার আইকনিক টাওয়ার নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। যা ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের সমান। সরকারের সঙ্গে চুক্তি করা কেপিসি গ্রæপের মালিক বাংলাদেশের সিলেটের বংশোদ্ভূত কালী প্রদীপ চৌধুরী। অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ ও কালী প্রদীপ চৌধুরীর উপস্থিতিতে গত ১২ জুন এই টাওয়ার নির্মাণের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পূর্বাচলের তুলনায় জলসিঁড়ির ভূগর্ভস্থ মাটি ভালো এবং উন্নতমানের। এ ছাড়া জলসিঁড়ির মাটি বহুতল ভবন নির্মাণ উপযোগী বলে কেপিসি গ্রæপ আগ্রহী হয়েছে। এ ছাড়া জলসিঁড়ির জমির দামও পূর্বাচলের তুলনায় একর প্রতি ৫ কোটি টাকা কম। পূর্বাচলে প্রতি একর জমির দাম ধরা হয়েছিল ২১ কোটি টাকা। কিন্তু জলসিঁড়িতে প্রতি একর জমি সেনাবাহিনী ১৬ কোটি টাকা দরে বিক্রি করতে রাজি হয়েছে।
এদিকে সুউচ্চ এই ভবন নির্মাণের জন্য বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেতেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। যা এখনও কাটেনি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে কেপিসি গ্রæপের চেয়ারম্যান কালী প্রদীপ চৌধুরী ১৪২ তলা ভবন নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক করেন। পরে কেপিসি গ্রæপের পক্ষে অর্থমন্ত্রী ১০০ একর জায়গার ওপর মূল ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেন। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় গত নভেম্বর মাসে পূর্বাচলের সিবিডি অংশে ওই জায়গা দিতে রাজি হয়। কিন্তু জমির দাম সেই সময়ের বাজার মূল্যের তুলনায় অনেক বেশি ধরা হয়। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও তৈরি হয়। এ কারণে চুক্তি না করেই ফিরে যান কেপিসি গ্রæপ চেয়ারম্যান। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন জলসিঁড়ি প্রকল্পের জমি অপেক্ষাকৃত কম দামে দেয়ার প্রস্তাব করলে কেপিসি গ্রæপ প্রস্তাবটি লুফে নেয়।
এদিকে রাজউক কর্মকর্তারা জানান, ভবনটিতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, এক্সিবিশন সেন্টারসহ থাকবে হোটেল, থিয়েটার ও শপিং মল। এটিকে ঘিরে তৈরি হবে আরও কয়েকটি ছোট-বড় ভবন এবং অনেক নান্দনিক স্থাপনা। এই টাওয়ার নির্মাণে আন্তর্জাতিক টেন্ডার ডাকা হবে বলে জানিয়েছে রাজউক। ভবিষ্যতে যে কোনও ধরনের আইনি জটিলতা এড়াতেই এই টেন্ডার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। টেন্ডার আন্তর্জাতিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও অংশ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রকল্প এলাকার প্রযুক্তিগত সমীক্ষার (টেকনিক্যাল স্টাডি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন বিভাগকে।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, পিপিপির আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। বিশ্বখ্যাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রæপ যিনি গড়ে তুলেছেন তিনি বাংলাদেশের সিলেটেরই লোক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি বড় বড় ভবন নির্মাণ করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। বাংলাদেশেও এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখিয়েছেন।’ জানা গেছে, ১৪২ তলা এই টাওয়ারের নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে এই ভবনের দিকে তাকালে মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়বে। এটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে দুই পাশ থেকেই ৭১’ লেখা ফুটে উঠবে। -ওয়েবসাইট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টাওয়ার

৭ ডিসেম্বর, ২০২০
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ