পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম, চিলাহাটি (নীলফামারী) থেকে ফিরে : উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। লাল সবুজ কোচের বিলাসবহুল ট্রেন, নতুন গন্তব্য, নতুন স্টেশন- সব মিলে রেলের সেবার মান এক লাফে বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য রেল এখন বড় আশীর্বাদ। তাদের ভাষায়, বিগত সরকারের আমলে রেলের কোনো অগ্রগতি তো হয়ইনি, বরং দিন দিন ট্রেন, স্টেশন সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। অবহেলা অবজ্ঞায় ব্রিটিশ আমলের রেল ঝিমিয়ে পড়তে পড়তে একেবারে নিঃশেষ হতে চলেছিল। সেই রেল যেনো হঠাৎ করেই প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মাটির নীচে তলিয়ে যাওয়া রেললাইনগুলো আবার জেগেছে কংক্রিটের সিøপারে। যার উপর দিয়ে এখন ট্রেন চলছে একশ’ কিলোমিটার গতিবেগে। দ্রæতগামী সেই ট্রেন দেখার জন্য এখন নতুন করে মানুষ ভিড় করে রেললাইনের পাশে। উত্তরের মানুষ এখন অনায়াসে নীলসাগর, একতা, দ্রæতযান, লালমণি, রংপুর এক্সপ্রেসে রাজধানীতে যাতায়াত করতে পারে। লালমণি বাদে সব ট্রেনই এখন বিলাসবহুল। রেল যোগাযোগ একেবারে সহজ হয়েছে উত্তরে চিলাহাটি থেকে দক্ষিণে খুলনা পর্যন্ত। ভারত থেকে মালবাহী ট্রেন আসছে দিনাজপুর দিয়ে। পশ্চিমাঞ্চলের রেলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, শুধু উত্তরাঞ্চল নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ যাতে রেলের সেবা পায় সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশব্যাপী রেলের যে আমূল পরিবর্তন হচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও হবেÑ এ সবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান।
এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৬ সালের ১৬ মার্চ দেশের উত্তরাঞ্চলের সাথে সরাসরি ঢাকার ট্রেন যোগাযোগ চালু হয় আন্তঃনগর ট্রেন তিস্তা এক্সপ্রেসের মাধ্যমে। দিনাজপুর থেকে পার্বতীপুর ও রংপুর হয়ে গাইবান্ধার তিস্তামুখঘাট পর্যন্ত চলতো ট্রেনটি। এরপর যমুনায় ফেরি পারাপারের মাধ্যমে যাত্রীদের আনা হতো বাহাদুরাবাদ ঘাটে। সেখানে অপেক্ষা করতো তিস্তার আরেক অংশ। সেই তিস্তা সরাসরি আসতো ঢাকায়। তিস্তা এক্সপ্রেস চালু করার পর যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। যাত্রীর চাহিদা দেখে রেল কর্তৃপক্ষ একই রুটে আরেকটি আন্তঃনগর ট্রেন একতা এক্সপ্রেস চালু করে। বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ২৫ জুলাই তিস্তামুখঘাট-বাহাদুরাবাদ ঘাট রেলওয়ে ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়। খরচ কমাতে বন্ধ করে দেয়া হয় শতাধিক রেল স্টেশন। একই ধারাবাহিকতায় বহু শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে চাকরি থেকে বিদায় করে দেয়া হয়। এর ফলে নতুন করে জনবল সঙ্কট দেখা দেয়। সেই সংকটের দোহাই দিয়ে অনেক ট্রেনও বন্ধ হয়ে যায়। এই সঙ্কটের ফাঁদে পড়ে উত্তরাঞ্চলবাসী। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের লালমনিরহাট বিভাগে ট্রেন ও স্টেশন বন্ধ হতে হতে একেবারে শোচনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ব্রিটিশ আমলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাকশি বিভাগও ঝিমিয়ে পড়ে। ২০১২ সালে পৃথকভাবে রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠিত হওয়ার পর বর্তমান সরকার রেলকে গণমুখী করার উদ্যোগ নেয়। বিশেষ করে বর্তমান রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক দায়িত্ব নেয়ার পর একের পর এক প্রকল্প নেয়া এবং সেগুলো বাস্তবায়ন শুরু হয়। মাটির নিচে তলিয়ে যাওয়া রেললাইন আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যায় কংক্রিটের সিøপারের উপরে। ৫০ বছরের পুরনো লোকোমোটিভকে (ইঞ্জিন) ‘ঘানি’ টানা থেকে রেহাই দিতে কোরিয়া ও ভারত থেকে আনা হয় নতুন লোকোমোটিভ। গত বছর ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হয় ২৭০টি বিলাসবহুল কোচ। অচল রেললাইন আধুনিকায়ন করা হয়। সেই রেল লাইন দিয়ে এখন একশ’ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলে ট্রেন।
গত বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের পার্বতীপুর, সৈয়দপুর ও চিলাহাটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে রেলের উন্নয়নে বদলে গেছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। কয়েক বছর আগেও এসব এলাকার মানুষের যোগাযোগের প্রধান বাহন ছিল বাস। ট্রেন ছিল কর্মজীবী কিছু গরীব মানুষের বাহন। সমাজের উচ্চবিত্ত তো দূরে থাক মধ্যবিত্তরাও যে ট্রেনে ভ্রমণ করবেন সে পরিবেশ ছিল না। পার্বতীপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, ভ্রমণ করার মতো ট্রেন এই অঞ্চলে বহুদিন ধরেই নাই। লোকাল ট্রেন সকালে একটা বিকালে একটা চলতো। সেগুলোতে পরিবেশ বলে কিছু ছিল না। আবার ট্রেনের সময়েরও কোনো আগা-মাথা ছিল না। সৈয়দপুরের বাসিন্দা ঠিকাদার মোত্তালেব হোসেন বলেন, রেল এখন অনেক উন্নত, ট্রেনগুলো এখন অনেক স্মার্ট, বিলাসবহুল। দিনাজপুর থেকে প্রতিদিন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে লালসবুজের দ্রæতযান, একতা এক্সপ্রেস। চিলাহাটি থেকে যাচ্ছে নীলসাগর। মার্চের আগেও নীলসাগর ট্রেনটি নীলফামারী থেকে চলাচল করতো। পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১০ সালে ২২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় সৈয়দপুর থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত ৫২ দশমিক ২ কিলোমিটার রেললাইনসহ ৯টি রেলস্টেশন সংস্কার ও চিলাহাটিতে একটি ওয়াশপিটসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। রেলওয়ের আরেক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এই এলাকায় এসে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে নীলসাগরসহ সবগুলো ট্রেনকে চিলাহাটি পর্যন্ত চালানোর উদ্যোগ নেন। মন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখন ঢাকাগামী নীলসাগর, খুলনাগামী রূপসা, সীমান্ত এবং রাজশাহীগামী তিতুমীর সবই চলে চিলাহাটি পর্যন্ত। এতে করে নীলফামারী, ডোমার, ডিমলাসহ দেশের একেবারে উত্তরের বাসিন্দারা দারুণ উপকৃত হয়েছে। আলাপকালে অনেকেই রেলের এই উন্নয়নকে তাদের স্বপ্নের সাথে তুলনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেন, বিএনপি আমলে রেলের কোনো উন্নতি হয়নি। বরং রেলকে বিভিন্ন অজুহাতে ধ্বংস করা হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর রেলওয়ে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। তার আমলে রেলওয়ের বাজেট ৫শ’ কোটি টাকা থেকে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রেলওয়ের উন্নয়ন হচ্ছে, নতুন নতুন ট্রেন চালু হয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশন চালু হয়েছে, রেললাইন সংস্কারসহ সিগনালিং ব্যবস্থাও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। আগামীতে রেলওয়ের আরও উন্নয়ন হবে জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, এ সবই দেশের জনগণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অবদান।
চিলাহাটি স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন ভবন নির্মাণ ও রেল লাইন সংস্কার করায় বর্তমানে এ স্টেশন এক অনন্য রূপ পেয়েছে। স্টেশনের একেকটি ভবন একেক রঙে রাঙানো হয়েছে। পুরো প্লাটফর্ম এখন চকচকে ও পরিষ্কার। স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগে স্টেশনের পাশ দিয়ে যারা নাক চেপে ধরে হাঁটতেন, এখন তারাই কেউ কেউ বিকেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন। সন্ধ্যা হলেই জ্বলে ওঠে শতাধিক বৈদ্যুতিক বাল্ব। যেগুলোর আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠে দেশের সর্বউত্তরের এই স্টেশনটি। চিলাহাটি স্টেশন মাস্টার জানান, যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর জন্য সৈয়দপুর-চিলাহাটি ৫৩ কিলোমিটার রেললাইন সংস্কারের কাজ শেষে চিলাহাটি নতুন রূপ পেয়েছে। এ ছাড়াও সৈয়দপুর-চিলাহাটি সেকশনে ৯টি রেলওয়ে স্টেশন আধুনিকায়ন, চিলাহাটি স্টেশনের পরিদর্শন ঘর ও ওয়াশপিট স্থাপনে পৃথক একটি প্রকল্পের কাজও শেষ। এক সময়ের ডেড স্টেশন চিলাহাটি স্টেশনে নতুন করে করা হয়েছে যাত্রীদের ওয়েটিং রুম, স্টেশন ভবন, ইলেক্ট্রিক সাব স্টেশন, রানিং রুম (ট্রেনের স্টাফদের থাকার ঘর), নিরাপত্তা ব্যারাক, পিএক্সআর অফিস, ইঞ্জিন সেড, পানির ট্যাঙ্কি ও পানি সরবরাহ, ওয়াশ পাইপ লাইন ও কানেকটিং লাইন। তৈরী হয়েছে আবাসিক কোয়ার্টার ও অত্যাধুনিক সিগনালিং ব্যবস্থা। জানা গেছে, চিলাহাটি থেকে হলদিবাড়ি পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হলে এটি হবে বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র দার্জিলিং যাওয়ার ট্রানজিট পয়েন্ট। অত্যাধুনিক চিলাহাটি স্টেশন যেনো সেই সব পর্যটকদের পদচারণার অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।