Inqilab Logo

রোববার, ০২ জুন ২০২৪, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সিরীয় যুদ্ধ কি রুশ-মার্কিন পাতানো খেলা

| প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সিরিয়া যেন একটি পাতানো ছায়াযুদ্ধের সমরভূমি। দেশটির বৃহত্তর এক বিমানঘাঁটিতে সিরীয় সেনাদের পাশাপাশি রয়েছে আসাদ-ঘনিষ্ঠ রুশ সেনাদের উপস্থিতি। সেখানেই আছড়ে পড়েছে ৫৯টি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র। এতো বিস্তৃত পরিসরের হামলার সঙ্গে হতাহতের সংখ্যার সাজুয্য পাওয়া যায়নি। হামলায় নিহত হয়েছেন ছয় সিরীয় সেনা। বিপরীতে রাশিয়ার কেউই হতাহত হয়নি। এদিকে যে বিমানঘাঁটিতে সার্বক্ষণিক রুশ সেনা উপস্থিতি, সেখানে এমন হামলার পরও সামরিক কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। পেন্টাগন বলছে, হামলার ব্যাপারে আগেই রাশিয়াকে জানানো হয়েছিল। তবে এমন দাবি মেনে নেননি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। অবশ্য রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও আগে থেকেই এ হামলার ব্যাপারে অবগত থাকার কথা জানানো হয়েছে। অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণধর্মী সাড়া জাগানো মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্ট-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। সিরিয়ার হোমস প্রদেশের আল-শায়রাত বিমানঘাঁটিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিশ্চিতভাবেই রুশ সেনাদের প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। তবে হামলায় ছয় সিরীয় সেনা নিহত হলেও রুশ সেনাদের কেউ হতাহত হয়নি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন বলছে, ওই ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের আগেই এ ব্যাপারে রাশিয়াকে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসির প্রতিনিধি রিয়াম দালাতিকে জানিয়েছেন, মার্কিন হামলার একদিন আগেই ওই বিমানঘাঁটি ত্যাগ করে রাশিয়ার একটি সামরিক বহর। ফলে প্রশ্ন উঠছে, জেনেশুনেই কি সিরীয় সেনাদের ফেলে রেখে ওই বিমানঘাঁটি ত্যাগ করেছিল রুশ সেনারা! মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের বিবৃতিতে বলা হয়, ভূমধ্যসাগরে অবস্থান করা যুক্তরাষ্ট্রের দুটি যুদ্ধজাহাজ থেকে আসাদ নিয়ন্ত্রিত ওই বিমানঘাঁটিতে ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এতে আসাদ বাহিনীর যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে হামলার আগে এ সম্পর্কে সামরিক পর্যায়ে রাশিয়াকে জানানো হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন অবশ্য দাবি করেছেন, হামলার আগে বা পরে রাশিয়ার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। এক বিবৃতিতে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন পেন্টাগনের একজন মুখপাত্র ক্যাপ্টেন জেফ ডেভিস। তিনি বলেন, পূর্বপরিকল্পিত ওই হামলার বিষয়ে রাশিয়াকে অবগত করতে সিরিয়ার আকাশে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বিমান চলাচলে সতর্কতা আরোপ করা হয়েছিল। ওই বিমানঘাঁটিতে অবস্থানরত রুশ বা মার্কিন নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে মার্কিন সমরপরিকল্পনাবিদরা আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঠিক কত সময় আগে এ ব্যাপারে রাশিয়াকে সতর্ক করা হয়েছিল সেটা এখনও পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। ক্যাপ্টেন জেফ ডেভিস বলেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনীর সেনারা এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল না। বরং আল-শায়রাত ঘাঁটির বিমান ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য স্থাপনা এ হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। এর কারণ বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে আসাদ সরকারের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের সক্ষমতা কমাতে আগ্রহী। পেন্টাগনের এই মুখপাত্রের বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্দেশ দিয়েছেন, যে বিমানঘাঁটি থেকে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের খান শেইখুন এলাকায় চালানো রাসায়নিক হামলায় নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে সেখানে যেন বিমান হামলা চালানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সিরিয়ার ওই বিমানঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিশ্চিত নয়। তবে শুক্রবার রাশিয়ার সরকারি টেলিভিশনে ওই বিমানঘাঁটির কিছু চিত্র দেখানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে, মার্কিন হামলার পরও ওই ঘাঁটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখনও অক্ষত রয়েছে। যুদ্ধবিষয়ক কাভারেজের সঙ্গে জড়িত একজন রুশ সাংবাদিক ইভজেনি পোডাবনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইন্সটাগ্রামে তিনি আল-শায়রাত বিমানঘাঁটির কিছু ছবি পোস্ট করেছেন। এসব ছবিতে দেখা যায়, একটি বাংকার এবং এবং বিমান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে অন্য একটি বিমানকে পুরোপুরি অক্ষত অবস্থায় দেখা গেছে। মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রুশ বাহিনীর কোনও প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও সিরীয় বিমানবাহিনীর অন্তত ছয় সদস্য এতে নিহত হয়েছেন। সিরীয় সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র তাদের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছেন। ফলে দৃশ্যত এটাই মনে হচ্ছে যে, মার্কিন হামলার ব্যাপারে রাশিয়া আগে থেকে জানলেও এ ব্যাপারে নিজেদের মিত্র সিরিয়াকে তারা সতর্ক করেনি। যদিও এটা কল্পনাতীত। রাশিয়ার সামরিক ড্রোন থেকে ওই বিমানঘাঁটির ধারণ করা ফুটেজের ভিত্তিতে কিছু বিশ্লেষকের ধারণা, মার্কিন হামলার ব্যাপারে হয়তো সিরিয়াও অবগত ছিল। এ কারণে বাংকার থেকে নিজেদের কিছু জেট বিমান সরিয়ে নিয়েছে দামেস্ক। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রাণহানি এড়ানো বা অন্তত কমানোর দূরদর্শী চিন্তা ছিল মার্কিন বাহিনীর। ট্রাম্পের বাগাড়ম্বরও হয়তো এক্ষেত্রে সিরিয়াকে সতর্ক হতে সাহায্য করেছে। ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ