মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনীতির ঝুঁকির বিষয়ে সতর্কতা প্রকাশ করলেও দুই প্রভাবশার্লী দেশের সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধকে ভিন্নভাবে দেখছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। অর্থনীতি ও রাজনীতি উভয় দিকেই লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দেশটির। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সিনিয়র সদস্যদের মতে, এ উত্তেজনা থেকে ভারত উপকৃত হওয়ার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। বিজেপির নির্বাহী সদস্য শেষাদ্রি চারি জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা উৎপাদক এবং বিদেশে পণ্য উৎপাদনকারী মার্কিন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়ে আসছেন। এ অবস্থায় ভারতের বিশাল বাজারের প্রয়োজন পড়বে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের। বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা নয়াদিল্লিকে ভূরাজনৈতিক সুবিধা প্রদান করেছে। বিশেষ করে ভারত যখন চীনের নতুন সিল্ক রোড উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছে। চারি বলেন, একদিকে চীনের শক্তিশালী উৎপাদন ব্যবস্থার জন্য বাজারের প্রয়োজন রয়েছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আর দেশটির বাজার নয়। এ অবস্থায় চীন নিজের অর্থনীতি ধ্বংসের ঝুঁকিতে যাবে না। এটা শি জিনপিংয়ের জন্য রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে। ফলে তাদের বড় বাজারের প্রয়োজন। আর এশিয়ার মধ্যে ভারতই সবচেয়ে বড় বাজার। এদিকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যদিও ট্রাম্প নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইচ্ছুক। আরো এক দফা টুইটার বিতর্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে পর্যালোচনার আহŸানের পর গতকাল শি-ট্রাম্প বৈঠক সত্তে¡ও দুই পক্ষের বাণিজ্য সম্পর্কের ভবিষ্যৎ অস্পষ্ট রয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চল-বিষয়ক নীতির সম্ভাব্য পরিবর্তন নয়াদিল্লির জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে যদি ওয়াশিংটন চীনা উদপাদকদের বিরুদ্ধে সংরক্ষণবাদী ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বা ভারতের প্রতিদ্ব›দ্বী পাকিস্তানের সামরিক সহায়তা কমায়। বিজেপির জ্যেষ্ঠ সদস্য যশোবন্ত সিনহা জানান, যদি যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক ভেঙে পড়ে, তবে শুধু ভারতই নয় আরো অনেক দেশ এ থেকে সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করবে। তা সত্তে¡ও ভারতের বিশাল স্থানীয় বাজার উভয় দেশেরই মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে। তিনি আরো বলেন, ভারতের ভোক্তাশ্রেণী বহু দেশের তুলনায় অনেক বড়। এর অর্থ, আমরা অনেক বড় একটি বাজারের প্রতিনিধিত্ব করছি এবং বিষয়টি আমাদের প্রচার করে বেড়াতে হবে না। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় সুবিধার জায়গা বলে উল্লেখ করেছেন বিগত সরকারগুলোর আমলে পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকারী সিনহা। বর্তমান বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বৈদেশিক নীতি নিয়ে বিজেপির চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে চারি ও সিনহার বক্তব্যে। পাশাপাশি বাণিজ্য আলোচনায় দেশটির আত্মবিশ্বাসেরও প্রতিফলন ঘটেছে, যেখানে প্রায়ই ভারতকে চুক্তি স্বাক্ষর বা এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে দেখা গেছে। সম্ভাবনার পাশাপাশি ভারতের জন্য ঝুঁকিও রয়েছে। বিশেষ করে যদি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একটি পরিপূর্ণ বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ভারত ট্রাম্পের সম্ভাব্য ভিসা সংস্কারের ঝুঁকিতে রয়েছে, যা দেশটির প্রযুক্তি খাতের জন্য হুমকিস্বরূপ। যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত অধিকাংশ ভারতীয় প্রযুক্তি কর্মী এইচওয়ান-বি ভিসার ওপর নির্ভরশীল। ট্রাম্পের পরিকল্পিত ভিসা সংস্কার বিশাল এ খাতকে বড় আকারে ধাক্কা দেবে। তবে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধে ভারতের নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রদের কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দিল্লিভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা অশোক মালিক বলেন, সংরক্ষণপন্থী যুক্তরাষ্ট্র যতটা না ভারতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে চীনের। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাতের প্রতিক্রিয়ায় একটি অস্থিতিশীল মুদ্রা যুদ্ধ শুরু করতে পারে চীন। মালিক জানান, ভারত চীনের অবকাঠামো তহবিলের সম্ভাব্য বাজার। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিস্তৃত পরিধির ভোক্তাপণ্যের বাজার নয়। তার মতে, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা থাকলেও অর্থনীতির ক্ষেত্রে এর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। দুই শীর্ষ অর্থনীতির সংঘাতে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর সমান্তরাল প্রভাব পড়তে পারে। এদিকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার বিষয়ে ভারতের আগ্রহী হয়ে ওঠার একটি প্রধান কারণ পাকিস্তানের অবকাঠামো খাতে চীনের বিনিয়োগ। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে (সিপিইসি) ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে চীন, যা মূলত দেশটির ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের অংশ। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর অংশে অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে চীন। অন্যদিকে অঞ্চলটি নিজেদের বলে দাবি করে আসছে ভারত। বøুমবার্গ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।