Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাম্পের সিরিয়া হামলায় সৃষ্ট ঝুঁকির আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে মার্কিন আক্রমণ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে, ভূমধ্যসাগরে দুটি মার্কিন রণতরী থেকে সিরিয়ার একটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ৫৯টি টমাহক ক্রুজ মিসাইল ছুঁড়েছে ট্রাম্পের প্রশাসন। মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন জানিয়েছে, শুক্রবার সিরিয়ায় বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত ইদলিব শহরে সরকারি বাহিনীর কথিত রাসায়নিক অস্ত্র হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলেছে, এই হামলার কারণে সিরিয়া ইস্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে। প্রথমত, বলা যায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠবে। কারণ, এই হামলায় মিত্রদের সমর্থন নিশ্চিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এটা এই অর্থে যে সিরিয়া ইস্যুতে ট্রাম্পের মনোভাব নিয়ে এত দিন যে ধোঁয়াশা ছিল তা এবার স্পষ্ট হয়েছে। এছাড়া মার্কিন মিত্ররা একমত যে সিরিয়া সংকট নিরসনে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয়ার সময় হয়ে গেছে। তবে সিএনএন বলছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পরিস্থিতি তাদের অনুক‚লে যাবে না। তেমনটা ঘটার সম্ভাবনা থাকলে তা আগেই ঘটতো। দ্বিতীয়ত, আসাদ পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে। আগেও এমন পরিস্থিতিতে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। এই পদক্ষেপের মানে হয়তো এই নয় যে তিনি মার্কিন বাহিনীর ওপর পাল্টা হামলা চালাবেন। তবে সুযোগ পেলেই মার্কিনিদের বিরুদ্ধে তিনি অন্যভাবে আঘাত করার নীতি প্রয়োগ করবেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই হামলার কারণে ট্রাম্পকে একটা বিপর্যয়ের মুখে পড়তেই হবে। আর ব্যাপক মাত্রায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের সেই বিপদ হবে অনাকাক্সিক্ষত, নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য। কেননা আসাদ এর ব্যবহার বাড়িয়ে দিতে পারেন। তৃতীয়ত, রুশ উপস্থিতি বাড়তে পারে। মার্কিন অভিযানের পরে সিরিয়া ইস্যুতে রাশিয়া আগের চেয়ে প্রকাশ্যে পদক্ষেপ নেবে। এরই মধ্যে এই ইস্যুতেই রাশিয়া আন্তর্জাতিক রাজনীতির মাঠে নিজের অবস্থান আগের চেয়ে শক্তিশালী করেছে। তাই সিএনএন-এর আশঙ্কা, মার্কিন হামলার সমুচিত জবাব দেবে রাশিয়া। সেটা সামরিক হামলা হবেÑ এরই মধ্যে তা জানা গেছে। অন্য উপায়ে প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষেত্রে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন খুবই দক্ষ। ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেয়াই এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। চতুর্থত, আসাদ-সরকারের নগণ্য ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার মধ্য দিয়ে আসাদ অবশ্য ট্রাম্পের মনোভাব সম্পর্কে একটা ধারণা পেলেন। আসাদ ভেবেছিলেন, সিরিয়া ইস্যুতে ট্রাম্পের হয়তো তেমন মনোযোগ নেই। আর থাকলেও তাঁর মতিগতি বোঝা যাচ্ছিল না। তবে আসাদ গত কয়েক বছরে যে পরিমাণ হামলা চালিয়েছেন, তাতে একটি বিমানঘাঁটি হারানো তাঁর কাছে তেমন কোনো লোকসান নয়। পঞ্চমত, সিরিয়ার দুঃখ ঘুচবে না তা বলা যায়। কারণ, মার্কিন হামলার সবচেয়ে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো সিরিয়ার ভাগ্যে আগামী আরো কয়েক বছর একই দুর্দশা লেগে থাকবে। যুদ্ধ তখনই শেষ হয়, যখন আশপাশের যুদ্ধ থেমে যায় এবং অর্থ ও অস্ত্র ফুরিয়ে আসে। কিন্তু দুই পক্ষেই এসবের জোগানদাতার অভাব নেই। হেজবুল্লাহর পর আসাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান, তারপর ইরাকের আধাসামরিক বাহিনী। ধারাবাহিকভাবে ভূমিকা রেখেছে রাশিয়া। অন্যদিকে আসাদ-বিরোধীরা পশ্চিমা মিত্রদের পাশাপাশি সহযোগিতা পেয়েছে তুরস্ক, আল-কায়েদা ও আইএসসহ আরো অনেকের। ফলে সিরিয়াবাসীর দুঃখগাথার নতুন অধ্যায় শুরু হলো। এখন আবার নতুন করে মানুষ মরবে, শরণার্থী বাড়বে। পুরনো সংকট ফিরে আসবে নতুন করে, যে সংকটের পরিণতিতেকে কারণ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ট্রাম্প প্রশাসন। সিএনএন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ