বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মুহাম্মদ আবু মুসা, জয়পুরহাট থেকে : থই থই পানি। তাতে বাদাম তুলে চলছে নৌকা। কোথাও বা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন জেলে। তীরে কলসি কাঁখে কুলবধূ। আবার হয়তো নদীর দুই পার সংযোগকারী সেতুর নিচে বয়ে যায় কুলকুল পানিধারা। এই তো নদীর চিরন্তন রূপ। কিন্তু তা না হয়ে যখন পানিহীন নদীর বুকে চাষ হয় ফসল, আর সেতু হয়ে পড়ে অপ্রয়োজনীয়, তখন তাকে নদী বলে ভুল হওয়াই স্বাভাবিক।
জয়পুরহাটের চার নদীর চিত্র এখন এমনই। ছোট যমুনা, তুলসীগঙ্গা, হারাবাতি ও চিরি নদী মরে গেছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পলি জমে নদীগুলোর বুকে এখন ফসলের মাঠ। সেখানে চাষাবাদ হচ্ছে ধান, মিষ্টি আলুসহ নানা ফসল। চরছে গরু-ছাগল। খেলার মাঠ বানিয়ে তাতে মেতে উঠছে শিশু-কিশোর দল। এই মরা নদীই আবার দুঃখের কারণ হচ্ছে বর্ষায়। উজান থেকে নেমে আসা বর্ষার পানি নামতে পারে না ভাটিতে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে নদীর পানি দুই ক‚ল ছাপিয়ে জনপদে ঢুকে সৃষ্টি করছে পানিবদ্ধতার। প্রতি বছর অস্বাভাবিক বন্যায় ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে হাজার হাজার মানুষ।
জেলা ত্রাণ ও কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, অকাল বন্যায় প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সেই হিসাবে গত ১০ বছরে ক্ষতির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা। অথচ নদীগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নদী খননের প্রস্তাব পাঠালেও কোন পদক্ষেপ নেই সরকারের। নদীগুলোতে পানি প্রবাহ সৃষ্টি করতে না পারলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এ এলাকায় মরু পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পানি বিশেষজ্ঞরা।
ভারতীয় সীমানার অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে জয়পুরহাট জেলায় প্রবেশ করেছে ছোট যমুনা, তুলসীগঙ্গা, চিরি, ও হারাবতি নদী। একসময় সারা বছর পানিতে ভরা থাকত নদীগুলো। নৌকা চলত, মাঝির গলায় গান উঠত। সড়কপথের চেয়ে নদীপথ ব্যবহৃত বেশি। পার্শ্ববর্তী জেলার সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল এই নদীগুলো।
এখন নদীপথ নেই, না বর্ষায়, না শুষ্ক মৌসুমে। বর্ষায় যে পানি আসে তা বরং মানুষের দূর্ভোগের কারণ হয়্ উজান থেকে নেমে আসা পানি ধারণ করতে পারে না ভরাট নদী, ফলে কুল ছাপিয়ে সৃষ্টি হয় বন্যা আর পানিবদ্ধতা। আবার শুষ্ক মৌসুমে নদী খটখটে। সবুজে ভরে যায় তার বুক। বোরো মৌসুমে নদীর বুকে গভীর নলক‚প বসিয়ে সেচকাজ করেন কৃষক।
১৯৮২ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে তুলসীগঙ্গা নদী খনন কাজ শুরু হলেও পরে অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। বাকি তিনটি নদী জন্মের পর কোনদিনই খনন করা হয়নি বলে জানায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বিভাগ।
জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আবু মোহাম্মদ সেলিম জানান, প্রতি অর্থবছরে জেলার নদীগুলো খননের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছোট যমুনার ২৭ কিলোমিটার, তুলসীগঙ্গার ৩১ কিলোমিটার, হারাবতির ২০ কিলোমিটার ও চিরির ১৬ কিলোমিটার খননের জন্য ২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু সরকার ও দাতা সংস্থার টানাপোড়নের কারণে ইতোমধ্যে সেটি বাতিল হয়েছে বলে জানা গেছে। বেসরকারি কোনো নেই নদী রক্ষায়। পরিবেশ রক্ষার নামে দাতা সংস্থার কাছ থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ফান্ড সংগ্রহ করলেও নদীর রক্ষায় এগিয়ে আসেনি কোনো এনজিও।
পানি উন্নয়ন বিভাগে কর্মরত পানি বিশেষজ্ঞরা জানান, নদী খনন করে পানিপ্রবাহ সৃষ্টি করতে না পারলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। স্থায়ী মরুভ‚মিতে পরিণত হবে জয়পুরহাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।