পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উজানে বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢলসহ গজলডোবা বাঁধের সব গেট খুলে দেয়ায় এমন পরিস্থিতি
ইনকিলাব রিপোর্ট : মরা তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগও দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল। উজানে বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল এবং ওপারে গজলডোবা বাঁধের সবগুলো গেইট ভারত খুলে দেয়ায় এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়।
এদিকে, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাটে হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুর ২টায় তিস্তার পানির পরিমাণ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার। তিস্তা অববাহিকার মানুষের প্রত্যাশা তিস্তায় পানির এই প্রবাহ অব্যাহত থাকবে। একইসাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি সই হবে।
উল্লেখ্য, আগামী ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী চার দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন। তিনি দেশে ফিরবেন আগামী ১০ এপ্রির। শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। তিস্তার ইস্যুটি এজেন্ডাতে না থাকলেও এই বৈঠকেই শেখ হাসিনা বিষয়টি উত্থাপন করবেন বলে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা যায়।
শুস্ক মৌসুমে তিস্তা নদী পানি শূন্য হয়ে যাওয়ায় এই অববাহিকার আড়াই কোটি মানুষের মাঝে পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়। সেচ সঙ্কটে কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়ে। কৃষিনির্ভর জাতীয় অর্থনীতিতে দেখা দেয় বিরূপ প্রভাব। শুধু তাই নয়, সেচ সঙ্কটকে কেন্দ্র করে তিস্তা সেচ প্রকল্পে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ অস্বাভাবিকহারে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। পাউবো জানায়, তিস্তা সেচ প্রকল্পে ৬০ হাজার হেক্টর জমি যেখানে বোরো চাষের আওতায় আনা হয়েছিল; সেখানে এই সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে ১০ হাজার হেক্টর করা হয়েছে।
তিস্তা সেচ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ভারত গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এ নিয়ে যৌথ নদী কমিশনের ভাষ্য হচ্ছে-সেচ প্রকল্পের পানিসহ তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে ন্যূনতম ৫ হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন। গজলডোবা বাঁধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ এই পরিমাণ পানি পায় না।
অথচ তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারতের সাথে ১৫ বছর মেয়াদি একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হওয়ার দারপ্রান্তে এসেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ওই চুক্তির খসড়ায় তিস্তার নাব্যতা রক্ষায় ২০ ভাগ পানি রেখে বাকি ৮০ ভাগ পানি সমহিস্যার ভিত্তিতে ভাগাভাগির কথা বলা হয়। এই প্রস্তাব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জির তীব্র আপত্তি থাকায় ঝুলে যায় বাংলাদেশ-ভারত অন্তর্বর্তীকালীন তিস্তা চুক্তি।
এদিকে লালমনিরহাট থেকে মো. আইয়ুব আলী বসুনিয়া জানান, হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুর ২টায় তিস্তার পানির পরিমাণ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড দোয়ানী-ডালিয়া সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার থেকে গতকাল পর্যন্ত তিস্তা ব্যারাজ দোয়ানী পয়েন্টে নদীতে পানির পরিমাণ ছিল ৫২.০৫ সেন্টিমিটার। পানি বৃদ্ধির ফলে বন্ধ থাকা তিস্তা ব্যারাজের কয়েকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে তিস্তার ধু-ধু বালু চরে পানি উঠেছে। তিস্তার চরে রোপণ করা ভুট্টা ক্ষেত পানিতে ভরে উঠায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে সবজিসহ মিষ্টি কুমড়া, পিয়াজ ও রসুনের ক্ষেত পানিতে ডুবে যাওয়ায় হতাশাও লক্ষ্য করা গেছে কৃষক পরিবারগুলোতে।
তিস্তা পাড়ের সানিয়াজান এলাকার ভুট্টা চাষি মহির উদ্দিন ও আ. রশিদ জানান, পানির অভাবে উঠতি ভুট্টা গাছগুলো পানি পেয়ে সতেজ হয়ে উঠলেও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পিয়াজ চাষি মজিবর মিয়া জানান, তার পিয়াজ ও মিষ্টি কুমরা ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুঃচিন্তা রয়েছে তিস্তাপাড়ের সবজি চাষীরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল ব্যারাজের সবক’টি গেইট খুলে দেয়া হয়েছে।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা : নজির হোসেন নজু জানান,
নীলফামারীর ডিমলা পয়েন্টে গত রোববার সন্ধ্যা থেকে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের সব গেইট খুলে পানি ছেড়ে দেয়ায় তিস্তা নদীতে আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। উজানের ঢলের কারণে ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ী মৌজার আশপাশে কয়েক হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিস্তা নদীটি টেপাখড়িবাড়ী মৌজার চরখড়িবাড়ী এলাকা নিয়ে নতুন একটি চ্যানেল তৈরি করে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভুট্টা, বাদাম, মরিচ. পেঁয়াজ, রোপা আমন ধান ক্ষেত।
উজানের ঢলের কারণে তিস্তায় ঘোলা পানির সাথে কচুরীপানা আসায় এলাকাবাসী ধারণা করছে উজানে বন্যার কারণে পানির গতি তীব্র রয়েছে। টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন বলেন, উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যার কারণে টেপাখড়িবাড়ী মৌজার চরখড়িবাড়ী গ্রামসহ আশপাশের ১০টি গ্রামের বন্যার পানিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে মরিচ, পেয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেত। এছাড়া এলাকায় ভুট্টা ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।