পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভরদুপুরে রংপুর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দুরে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী তিস্তা ব্রীজের ঠিক নিচের গ্রামটিতেই কথা হচ্ছিল পঞ্চাশোর্ধ শামসুলের সাথে। তিনি ব্রীজ সংলগ্ন ছোট্ট একটি মুদি-চা দোকানে বসে অলস সময় পার করছিলেন। চা খাওয়ার ফাঁকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে প্রশ্ন করেন, আপনারা কে ? কই থেকে আচ্চেন? সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই বলেন, নদীর পানির খবর নিবেন ?
তারপর তিস্তা ব্রীজের দিকে ইংগিত করে বলেন, এই ব্রীজের কারণে তার বসতভিটা আর কিছু জমি গেছে । ক্ষতিপুরণ পাননি বলতেই উত্তর আসে পাইসি ১১শ’ টাকা শতক। এখন ছোট একখান ঘর তুলিয়া আছি, তাও ফির আগের বাড়ি, ভিটা, জমির কথা খুব মনে হয় ...
গ্রামের নাম জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, পাঞ্জর ভাঙ্গা (পাঁজর ভাঙা)। আরো বলেন, পুরো গ্রামটাই নদী ভাঙা মানুষের আবাসস্থল। তিস্তা ও যমুনার ভাঙনে বসতি হারিয়ে কেউ বগুড়ার চন্দনবাইশা, কেউ আবার নিকটবর্তি কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট থেকে এসে এখানে নতুন ঠিকানা গেড়েছেন। তারমতে তিস্তার চর, তিস্তা ব্রীজ, কাউনিয়াহাট ও কাউনিয়া রেল ষ্টেশনকে ঘিরে জীবীকার কোন একটা ব্যবস্থার আশায় এখানে বিভিন্ন এলাকার মানুষের ঠাঁই নেবার অন্যতম কারণ। শামসুলের সাথে কথাবার্তা চলার ফাঁকে নজরুল, সুলতান, নুর মোহাম্মদসহ আরও কয়েকজন এসে যোগ হয় সেখানে । তারা কেমন আছে , কিভাবে চলছে জীবন জীবিকা জানতে চাইলে তারা যেটা স্থানীয় ভাষায় বলেন, তিস্তায় এখন পানি থাকেনা, নৌকা চলেনা, জমিতে সেচের পানির অভাব। মাছ ধরে খাওয়া ও বিক্রি করে পয়সা উপার্জন করা যায়না।
তারা বলেন, আগে নদী একূল ভেঙে ওইকূল গড়ছে। ভরা বর্ষায় নদীর ভাঙনে মানুষের ঘর-বাড়ি, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি ভেসে গেছে। মানুষ আবার আরেক জায়গায় বসতি গেড়েছে। নৌকায় চড়ে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জের মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ, ব্যবসা বাণিজ্য করছে। সে সময়ের আনন্দই আলাদা। তাদের সাথে কথা বলতে বলতে তিস্তার মাঝ বরাবর পায়ে হেঁটে গিয়ে দেখা যায়, নদীর শুকনো বুকে ও চরে আলু, সরিষা, ভুট্টা ও গমের চাষ হয়েছে। গম ক্ষেতের আধাপাকা শীষ ও পুষ্ট ভুট্টার মোচাসহ লম্বা লম্বা ভুট্টার গাছ মৃদুমন্দ বাতাসে দোল খাচ্ছে।
এছাড়া আলু ও সরিষা তোলার পর ওই জমিতেই লাগানো হয়েছে চিনা বাদাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আগে শুধু তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রের চরে কাউন, তিল, তিষি, রায় সরিষা ও ডাল জাতীয় শস্যই চাষ হতো। এখন সেখানে মরিচ, আলু, ভুট্টা, বাদাম, বোরোধান, গম, শীতকালীন সবজি ও মিষ্টি কুমড়োর চাষ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। চরে উৎপাদিত খাদ্য শস্য, সবজি পাশের কাউনিয়া হাটে নিলে দ্রুতই সেগুলো বিভাগীয় শহর রংপুরসহ রাজধানীতে চলে যাচ্ছে। এছাড়াও চরে বা গ্রামে এসে পাইকার, মহাজনের লোকেরাও এসব কিনে নিয়ে যায়।
তবে চরের ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়া টাকাওয়ালা ভুস্বামীদের হাতে থাকায় ভুমিহীন মানুষের তেমন কোন উন্নতি হচ্ছেনা। বৃটিশ সহায়তাপুষ্ট চর জীবিকায়ন প্রকল্প (ডিএফআইডি) এর মতো সংস্থাগুলোর কার্যক্রম গুটিয়ে যাচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেল। এছাড়া বেশকিছু এনজিও যাদের কাজই হল চরবাসী নারীদের সংগঠিত করে সমিতি গঠন করে তাদেরকে ১০ /২০/৩০ হাজার টাকার লোন ধরিয়ে দিয়ে সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তির ফাঁদে ফেলছে। এমন ক্ষোভ অনেকের মধ্যে লক্ষ্য করা গেল। সরকারি পরিষেবার মধ্যে কিছু গৃহহীনকে নামকাওয়াস্তে ঘর করে দেওয়া ছাড়া তেমন কোন পরিষেবা দৃষ্টি গোচর হয়নি ।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে জাতীয় পাির্ট নেতা রংপুরের বদরগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনিস মন্ডল বলেন , ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা বিধৌত জনপদের দরিদ্র মানুষের উন্নয়ন ও স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করতে সরকারি প্রকল্প ও তদারকির বিকল্প নেই। বৃহত্তর রংপুরের মানুষের প্রাণ তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। তিস্তা হচ্ছে এই অঞ্চলের বৃহত্তম সারফেস ওয়াটার (ভু-উপরিস্থিত) পানির উৎস। বছরের পর বছর যদি তিস্তা এভাবে পানিশুন্য থাকে তাহলে এক সময় পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠবে। প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছসহ অসংখ্য জলজ প্রজাতির প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটাবে। তাই আমরা যেন তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পাই সেটার জন্য ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালাতে হবে এর কোন বিকল্প নেই।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী (ভারপ্রাপ্ত) অফিসার তাহমিনা তারিনকে তার উপজেলা সংলগ্ন প্রশাসনিক এলাকায় তিস্তার চরের বসবাসকারীদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারি কি প্রকল্প রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি উপজেলায় এসিল্যান্ড হিসেবে কর্মরত রয়েছি। ৭ দিন হল ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তার চেয়ারে রয়েছি তাই এই মুহুর্তে সঠিক তথ্য বলতে পারছিনা।
এদিকে চরে বসবাসকারী এবং চর লাগোয়া পাঞ্জর ভাঙ্গা, নয়াপাড়ার শামসুল হক এবং নজরুল ইসলামের মতো মানুষরা তিস্তা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে মাঝ তিস্তার বুকে দাঁড়িয়ে তাদের ভাষায় অবলীলায় বলে দিল, নীলফামারীর উত্তরে এন্ডিয়ার ( ইন্ডিয়া / ভারত) গজল ডোবাত ব্যারেজ দেওয়ার পর থাকি তিস্তার এই হাল। তিস্তাও মইচ্ছে, আমরাও মরসি বাহে ।
তারা আরো জানালো, এইতো কিছুদিন আগেও বর্ষাকালে তিস্তায় নদীর নতুন পানি আসার সাথে সাথে নদী পাড়ের মানুষের মনে রং ধরতো। আলকাতরা লাগানো নৌকা ও গাবের কষ দেওয়া জাল নিয়ে মাছ ধরতে চলে যেত (জেলে) মাছুয়ারা। তিস্তার কালি বাউশ, রুই, বৈশালী (চ্যালা) আর বড়বড় ইচা (চিংড়ি ) মাছ ছিল বিখ্যাত। শুষ্ক মওশুমের চৈত্র মাসেও নদীতে পানি ছলছল শব্দ তরঙ্গ তুলে বয়ে যেত। শুকনো মওসুমেও মাছ বিক্রির টাকায় ভালোভাবে সংসার চলতো। তারা বলেন, এখন চরের আবাদে কয়দিন আর কামলা পাট দেওয়া যায় বলেন? অথচ নদীতে পানি থাকলে যখন খুশি তখন মাছ ধরে বিক্রি করা যায়।
কাউনিয়া উপজেলার সারাই, হারাগাছ, কুরশা ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই কথা প্রসঙ্গে জানালেন, ভারতের পানি প্রত্যাহারের কারণে পুরো শীত ও শুষ্ক মওসুম নদীর এমনভাবে শুকিয়ে যায় যে, তখন প্রমত্তা তিস্তার ওপর খুব পাশাপাশি নির্মিত তিস্তা রেল সেতু ও তিস্তা সেতু দুটি তাদের কাছে উপহাসের মত লাগে!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।