পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : আকস্মিকভাবে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে গেছে। দু’দিন আগেও তিস্তায় পানির নাব্যতা ছিল ৫শ’ কিউসেকের নিচে। তিস্তায় হঠাৎ পানির এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে স্থানীয়রা বলছেন, মরা তিস্তায় বাণ ডেকেছে। আর এই বাণে চরে বোনা খেতের ফসল তলিয়ে গেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের তিন দিন আগে তিস্তার প্রবাহ এভাবে বেড়ে যাওয়াটাকে অনেকেই ভারতের পানি ক‚টনীতি হিসেবেই দেখছেন।
আবার অনেকেই বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় হঠাৎ করে বৃষ্টিপাত এবং আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়ায় গজলডোবা বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দিয়েছে ভারত। ফলে উজানের পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দেয়। জানা যায়, রোববার সন্ধ্যা থেকে তিস্তার ঢলে নীলফামারী ও লালমনিররহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া শুরু করে। গতকালও (সোমবার) পরিস্থিতি অপরিবর্তিত ছিল বলে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানান।
পাউবো জানায়, উজানের ঢলের কারণে ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ী মৌজার আশেপাশে কয়েক হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিস্তা নদীটি টেপাখড়িবাড়ী মৌজার চরখড়িবাড়ী এলাকা নিয়ে নতুন একটি চ্যানেল তৈরি করে। ফলে ওই এলাকায় ভুট্টা, বাদাম, মরিচ. পেঁয়াজ, রোপা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যপারে টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, গতকাল থেকে আকস্মিক বন্যায় সব ভেসে গেছে। এ বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত দু’দিন আগে তিস্তা মরুভূমি থাকলেও ভারতে উজানে বন্যার কারণে রোববার সন্ধ্যা থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। তিনি বলেন, আমাদেরকে স্থানীয় পাউবো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়ার মূল কারণ হচ্ছে-গজলডোবা বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দেয়া।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রোববার থেকে সোমবারের পানি প্রবাহ বেড়েছে দশমিক ৭৫ মিটার। রোববার দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে রোববার পানি প্রবাহ ৫০ দশমিক ২৫ মিটার থাকলে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় তা বেড়েছে ৫১ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার। উজানের ঢলের কারণে তিস্তায় ঘোলা পানির সঙ্গে কচুরিপানা আসায় এলাকাবাসী ধারণা করছে বন্যার কারণে পানির গতি তীব্র রয়েছে।
টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন বলেন, উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যার কারণে টেপাখড়িবাড়ী মৌজার চরখড়িবাড়ী গ্রামসহ আশেপাশের ১০টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়ার খেত। এছাড়া এলাকায় ভুট্টা খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পাউবোর কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা রফিউল বারী বলেন, আকস্মিক বন্যার কারণে তিস্তার উজানে চরাঞ্চলের উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত যেসব সমস্যা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে, তার একটি তিস্তার পানিবণ্টন। ভারত এই নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করায় উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রামে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের বিরাট এলাকায় চাষাবাদে বিঘœ ঘটছে।
অপরদিকে, তিস্তা নদীর পানি প্রাপ্তির ওপর বাংলাদেশের বৃহৎ একটি অংশের জীবন-জীবিকা নির্ভর করছে। ভারত শুষ্ক মৌসুমে গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে এই নদীর পানি প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে আশঙ্কাজনক হারে কমে যায় তিস্তা সেচ প্রকল্পে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ।
জানা গেছে, তিস্তা সেচ প্রকল্পে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ যেখানে ৬০ হাজার হেক্টর; সেখানে এই সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে ১০ হাজার হেক্টরে আনা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছেÑ পানির অভাবে এই পরিমাণ জমিতেও ঠিকমত সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। চলতি শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় প্রাপ্ত পানির পরিমাণ কমতে থাকে। কিন্ত হঠাৎ করেই রোববার সন্ধ্যা থেকে তিস্তায় পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। ২০১৫ সালে তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ স্মরণকালের সর্বনিম্ন ছিল ৩৪২ কিউসেক। এই পানি সঙ্কটকে কেন্দ্র করে সেখানে সেচযোগ্য জমির পরিমাণ আর কমিয়ে দেয়া হয়।
তিস্তা সেচ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ভারত গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এ নিয়ে যৌথ নদী কমিশনের ভাষ্য হচ্ছে-সেচ প্রকল্পের পানিসহ তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে ন্যূনতম ৫ হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন। গজলডোবা বাঁধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ এই পরিমাণ পানি পায়না।
অথচ তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারতের সাথে ১৫ বছর মেয়াদি একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হওয়ার দাড়প্রান্তে এসেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ওই চুক্তির খসড়ায় তিস্তার নাব্যতা রক্ষায় ২০ ভাগ পানি রেখে বাকি ৮০ ভাগ পানি সমহিস্যার ভিত্তিতে ভাগাভাগির কথা বলা হয়। এই প্রস্তাব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জির তীব্র আপত্তি থাকায় ঝুলে যায় বাংলাদেশ-ভারত অন্তর্বর্তীকালীন তিস্তা চুক্তি।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর ঢাকা সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।