বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ফয়সাল আমীন : ভাল লোকপ্রার্থী হতে নেই, এমন একটি ‘মিথ’ সিলেটের তৃণমূলে ব্যাপকভাবে আলোচিত। বিশেষ করে ওয়ার্ড সদস্য পদপ্রার্থীতে তা শতভাগ কার্যকর। কিছুটা ব্যতিক্রম চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর বেলায়। সেখানে টাকাওয়ালা হতে হবে এমনটাই মুখ্য। তারপর গুন বিচারী। এতে করে যোগ্য নেতৃত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পক্ষান্তরে অযোগ্য, সমাজের মন্দ লোক হিসাবে পরিচিত তারাই জনপ্রনিধি হিসাবে নির্বাচিত হয়ে আছে। এতে করে পরিবার ও সমাজের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়সহ সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দ লোপাট বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়ন বরাদ্দ দিয়েও সরকারের কৃতিত্ব জোটছে না। বরং অযোগ্য জনপ্রতিনিধিরা তাদের রাক্ষুসে পেট ভরে, চাউর করছে সরকার কিছু দেয় না, তাই আমরা কিছু করাতে পারছে না। কিন্তু এ অবস্থা উত্তরণে নেই কোন বাস্তবমুখী কর্মসূচী। হাত-পা গুঁটিয়ে আফসোস করাই যেন একমাত্র উপায়। অথচ যোগ্য ও মেধাবী, শিক্ষিত লোক তৃণমূলে নেতৃত্বে আসতে মনোযোগী হলে সিলেটের সামগ্রিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হতো। তাদের গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বের ইতিবাচক পদক্ষেপ সরকারের পাশাপাশি ধনবান জনগোষ্ঠির আর্থিক সহযোগিতা সমাজের সাধারন মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো অসম্ভব ছিল না। সেই সাথে পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তায় ত্বরান্বিত হতো। সামাজিক বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যকার হানাহানি, হিংসা-প্রতিহিংসার অশুভ প্রতিযোগিতা অনেকাংশে হ্রাস ঘটত। সিলেটের তৃণমূলে পারস্পরিক ভেদাভেদর জেদ মেঠাতে গিয়ে শক্তি ও টাকার শ্রাদ্ধ করতে দ্বিধাবোধ করে না মানুষ। তা চলে দিন-মাস-যুগের পর যুগ। কিন্তু সেই অর্থের সদ্বব্যবহার নিশ্চিত করো গেলে, পরিবার ও সমাজিক শৃংখলা রক্ষা হতো, একই সাথে মানুষে-মানুষে সহজাত সম্পর্কের বাঁধন সুনিশ্চিত থাকত। কিন্তু এসবের মধ্যে অন্যতম বাধা সৎ, মেধাবী ও শিক্ষিত লোকদের নির্বাচন বিমুখতা। এহেন অবস্থায় সামাজিক অপরাধের সাথে জড়িত, অক্ষরজ্ঞানহীন, বখাটে, অযোগ্য লোকেরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তারপর চটি ঘুরাচ্ছে আমজনতার উপর। এহেন অবস্থাকে ভাগ্য হিসাবেই বলে মেনে নিচ্ছে সমাজের মানুষ।
বৃহত্তর সিলেটে প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি প্রবাসীদের কর্ষ্টাজিত অর্থে, অর্থনীতিক অবস্থার ভিত্তি তুলনামূলক শক্তিশালী। যেকারণে সর্বত্রই কমবেশি প্রাচুর্য লক্ষণীয়। আর্ত-সামজিক খাতে আশাতীত ইতিবাচক পরবর্তন উল্লেখযোগ্য। বস্তুতগত এ পরিবর্তন অবিশ্বাস্য ঘটলেও পারিবারিক, ও সামজিক নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বিষয়টি এখন মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে। বলতে গেলে অভিভাবকহীন আমজনতা। তাদের ঘাড়ে নেতৃত্বের নামে যে জনপ্রনিধি তারাই মূলত, অপরাধ ও অপরাধী লালন পালনে সদা ব্যস্ত। তৃণমূলে যোগ্য লোক নির্বাচনে প্রার্থী বিমুখতা বিষয়টিকে সূদুরপ্রসারী করে তুলছে। এতে করে সামজিক শৃংখলার অধঃপতন এখন ভাগ্য হয়ে গেছে। তুচ্ছ ঘটনায় মানুষের মধ্যে হানাহানি, ভেদাভেদ, হিংসা-প্রতিহিংসা নিত্য ঘটনা। বাড়ছে অর্থ ও অনাচার-অবিচারের অশুভ প্রতিযোগিতা। এসবের মূলে পানির বদলে আগুন ঢালছে বহুলাংশে অযোগ্য জনপ্রনিধিরা। কারণ তারা বিষয়টি জিইয়ে রেখে ব্যক্তিগত স্বার্থ আদায়ে তৎপরতা চালায়। জনপ্রতিনিধির অর্থ কিংবা ব্যাপকতা বুঝার নূন্যতম ধারণা নেই নির্বাচিত বেশিরভাগ কথিত সদস্যদের। তাই তারাই জনপ্রতিনিধির সার্বজনীন আচরণকে চাপিয়ে পক্ষালম্বন করাকে মনে করে থাকে ক্ষমতা। অথচ নিকট অতীতেও সিলেটের তৃণমূলে জনপ্রতিনিধিরা হতেন সমাজের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তার নাম-যশ ছিল ব্যাপক। মানুষ সমীহ করতো। পারিবারিক ও সমাজিক বিচার ফায়সালায় তারা ছিলেন মধ্যমণি। মেধা ও যোগ্যতায় ছিলেন তারা তুলনামূলক এগিয়ে। সামাজিক সিদ্ধান্তে বা সমর্থনে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেতেন। কিন্তু সেই দিন এখন নেই। যে যার মতো এখন প্রার্থী হচ্ছেন। প্রার্থীদের নিয়ে হাসি তামাশার শেষও নেই। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি যেন ছেলে খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেকারণে এ প্রার্থীরা নির্বাচন পরিবর্তিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভেদের দেয়াল তৈরীতে তৎপর থাকে। নির্বাচনে বিরোধীকারীদের সুযোগ ফেলেই চাপে রাখে। নানাভাবে হয়রানী করে তটস্থ করে তুলে। এতে করে সামাজিক অন্যায়-অবিচারের মাত্রায় ক্রমশ: বেড়ে চলছে। জনপ্রতিনিধিরা পারিবারিক ও সামাজিক নৈতিক মূল্যবোধ রক্ষায় ভূমিকার পরিবর্তে মানুষেকে এমনকি খোদ নিজেকে জড়িয়ে রাখে প্রতিশোধের নেশায়। মানুষও শান্তিপূর্ণ সমাধানে ব্যর্থ হয়ে, ন্যায়-অন্যায়ের পথ খোঁজার ধৈর্য্য হারিয়ে ঘায়েল করার নেশা মত্ত। কারন জনপ্রতিনিধির যে সার্বজনীন চরিত্র রাখতে হয়, সে বিষয়টি উপলব্ধির জ্ঞান রাখে না বেশিরভাগ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। অথচ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে সঠিক জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে আসলে সিলেটের তৃণমূলের সামগ্রিক পরিস্থিতির বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হতো। সরকারের পাশাপাশি স্বচ্ছল মানুষের অবদানে দরিদ্র জনগোষ্ঠির জীবনমানের পরিবর্তন ঘটানো কোন ব্যাপার ছিল না। প্রয়োজন শুধু গ্রহণযোগ্য ও যুগোপযোগী আধুনিক জ্ঞান সমৃদ্ধ নেতৃত্বে। স্থানীয় নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে সেই নেতৃত্ব বেরিয়ে আসার পথ থাকলে, শিক্ষিত ও উপযোগী লোকজন নির্বাচনে প্রার্থিতা থেকে নিজেকে দূরে রাখে। মনে করে জনপ্রতিনিধি মানে অপরাধীর একটি নিরাপদ চরিত্র। চলমান অবস্থার প্রেক্ষিতে নেতিবাচক এই ধারণায় জনপ্রনিধির ইতিবাচক প্রকৃত অবস্থা এখন মøান হয়ে গেছে। তাই এ অমূলক ধারণা জরুরীভিত্তিতে পরিবর্তন খুব-ই দরকার এমনটাই মনে করে সচেতন মহল। সুজন সিলেট-এর সভাপতি ফারুক মাহমুদ বলেন, জনপ্রতিনিধি প্রকৃতরূপ মানুষের সামন থেকে হারিয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা এখন স্পষ্ট। অথচ সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে না যে তার পারিবারিক বা সামাজিক নিরাপত্তা সহ সামগ্রিক স্বার্থ সুরক্ষায় যোগ্য জনপ্রতিনিধির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই বিষয়টি উপলব্ধি যতদ্রুত সম্ভব হবে, ততই আমাদের জন্য মঙ্গল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।