পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, তিন বাহিনী প্রধান ও পিএসওর সাথে সাক্ষাৎ
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ভারতীয় সেনাপ্রধান দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এরপর তিন দিনের সফর শেষে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত দিল্লি ফিরে গেছেন। গতকাল রবিবার বিকেল ৫টার দিকে বিমান বাহিনীর কুর্মিটোলা বঙ্গবন্ধু ঘাঁটি থেকে বিশেষ বিমানে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লজিস্টিকস এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান এ সময় ভারতীয় প্রতিনিধিদলটিকে বিদায় জানান। গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধান নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের (পিএসও) সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বিদায়ের আগে গতকাল বিকেল ৪টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের সেনাপ্রধান ও তার সাথে থাকা প্রতিনিধিদল। এ সময় মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। ভারতের সেনাপ্রধানও মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। এই সময়ে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণ ও সামরিক সহায়তা বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিপিন রাওয়াত।
ভারতীয় সেনাপ্রধানের পর প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন আইপিইউ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা বিভিন্ন দেশের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকাররা। পরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাদা করে অনির্ধারিত বৈঠক করেন ভারতীয় লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।
এছাড়াও গতকাল সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদর দফতরে বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিপিন রাওয়াতের নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধিদল। এ সময় তারা দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময় করেন। এর আগে সকাল পৌনে ৯টার দিকে বনানীর নৌ-সদর দফতরে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা দুই দেশের সামরিক সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর মতবিনিময় করেন। তারা দুই দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। নৌবাহিনী প্রধান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগকারী ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর বীর সেনাদের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এরপর সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা সেনানিবাসে এএফডিতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারতীয় সেনাপ্রধান।
এসব সাক্ষাৎকালে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের ডিফেন্স অ্যাটাশে এবং দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডিফেন্স অ্যাটাশে এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎকালে তারা দুই দেশের সামরিক সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং দু’দেশের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে ভারতীয় সেনাপ্রধান সস্ত্রীক চার সফরসঙ্গীসহ গত ৩১ মার্চ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকায় আসেন। শুক্রবারই মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জেনারেল বিপিন রাওয়াত। রাজধানীর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কোর্সেস ফাউন্ডেশন।
শনিবার বিকেলে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিপিন রাওয়াত। এ সময় ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, ভারতীয় সেনাপ্রধানের স্ত্রী মাধুলিকা রাওয়াত, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের ডিফেন্স অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জে এস নন্দা, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডিফেন্স অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন। এসময় প্রেসিডেন্ট মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি দু’দেশের সেনাবাহিনী মধ্যে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব জানান, সাক্ষাতের সময় ভারতীয় সেনাপ্রধান আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণ বিনিময় আরো বৃদ্ধি পাবে এবং এর মাধ্যমে সহযোগিতা আরো স¤প্রসারিত ও বৃদ্ধি পাবে।
শনিবার সকালে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বিপিন। যাতে তারা পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময় ছাড়াও দুই দেশের সেনাবাহিনীর বিদ্যমান প্রশিক্ষণ ও পেশাগত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। সেদিনই ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা সফরের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি শুরু হয় তার। এরপর বিপিন রাওয়াতের নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধিদল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের একটি যুদ্ধক্ষেত্র ও বগুড়া সেনানিবাস পরিদর্শন করেন।
বিপিন রাওয়াত ঢাকায় অবস্থানকালে রাত্রিযাপন করেন হোটেল র্যাডিসনে। তিনি নিরামিশভোজী না হওয়ায় তার জন্য তৈরি করা খাবারের তালিকায় ছিল সব ধরনের খাবারই। তবে তিনি এত ব্যস্ত সময় পার করেছেন যে, হোটেলে ব্রেকফার্স্ট করা ছাড়া আর তেমন কিছু খাওয়ার সময় পাননি। বাইরে ব্যস্ততার মধ্যে বেশি সময় অতিবাহিত করেছেন।
২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ভারতীয় সেনাপ্রধান হওয়ার পর রাওয়াতের এটিই প্রথম বিদেশ সফর। তার এ সফর দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সফর বিনিময়ের একটি অংশ। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ভারত সফর করেন। বাংলাদেশের বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী প্রধানরাও ২০১৬ সালে ভারত সফর করেন। পরে ওই বছরেই ভারতের বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী প্রধানরা বাংলাদেশে আসেন। গত বছর ভারতের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের সফরসঙ্গী হিসেবেও ঢাকায় এসেছিলেন বিপিন রাওয়াত। সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর জেনারেল রাওয়াত ‘প্রতিবেশী দেশ হিসেবে সম্পর্কের গুরুত্ব বিবেচনা করেই’ তার আন্তর্জাতিক সফরের প্রথম গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নেন বলে ভারতীয় হাইকমিশন জানান। যদিও এর আগে জানা গিয়েছিল তিনি নেপাল হয়ে বাংলাদেশে আসবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।