সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
কা জী সু ল তা নু ল আ রে ফি ন : সহপাঠী বন্ধু ইকবালের বাসায় প্রায়ই যাতায়াত করতাম। তার বাসার সামনে কিছুটা খালি জায়গা ছিল। খালি জায়গার একপাশে রেলিং তৈরি করে তার উপর সে কবুতর পোষে। একদিন আচমকা তার কবুতরগুলোর দিকে আমার নজর চলে যায়। খুব কালো কুচকুচে একটা কবুতর আমার নজর কাড়ল। কবুতরটি বাকবাকুম বাকবাকুম আওয়াজ তুলে সঙ্গিনীর পিছন পিছন ছুটছিল। তার সঙ্গিনী কবুতরটিও দেখতে অদ্ভুত রকমের সুন্দর ছিল। সঙ্গিনী ছিল সাদার মাঝে কালো খয়েরী ফুটফুটে রঙ এর মিশ্রণ। সেদিন রাতে খাওয়ার পরে আমি যখন ঘুমোতে গেলাম তখন চোখের সামনে শুধু কালো কবুতরটি ভাসছিল। কোন এক অজানা যাদুর মোহে পরদিন আবার ইকাবালের বাসায় ছুটে গেলাম। উদ্দেশ্য সেই কালো কবুতরটি দেখা। এভাবে আরও বেশ কয়েকদিন ছুটে গিয়েছিলাম। পরে একদিন সুযোগ বুঝে ইকবালকে ব্যকুল মনের আকাঙ্ক্ষাটি জানিয়ে দিলাম। সে শুনে অবাক হয়ে বলল, ‘তুই কবুতর পুষবি? আর কালোটি আমার সবচেয়ের প্রিয় কবুতর!’ সে কবুতর বিক্রয় করতে রাজী হলনা। আমি মন খারাফ করে চলে আসলাম। তার ঠিক দুদিন পর ইকবাল কবুতর জোড়া নিয়ে আমার বাসায় এসে হাজির। আমাকে চমকে দিয়ে ইকবাল বলে উঠলো, ‘বন্ধুর জন্য প্রিয় কিছু বিসর্জন দিতে না পারলে কি আর বন্ধু হওয়া যায়?’ সে আমাকে একটা কবুতরের বাসাসহ কবুতর জোড়া দিয়ে গেল আর বলে গেল ‘আমার কালো কবুতরটি কিন্তু ভীষণ বউ পাগল’। প্রায় সপ্তাহ খানেক বেঁধে রেখে কবুতর জোড়া পোষ মানালাম। শুধু এক জোড়া কবুতর দেখতে ভাল লাগছিল না তাই আরও দুটো বাসা রেডি করলাম। তারপর মার্কেট থেকে আরও দু জোড়া কবুতর কিনে আনলাম। দিন দিন কালো কবুতরটি আদর পেয়ে আমার খুব ভক্ত হয়ে গেল। আমাকে দেখলে ছুটে আসে। হাতে খাবার খায়। কাঁধে উড়ে এসে বসে। তবে ওর সঙ্গিনীকে যখন ধরতে যাই তখন সে তেড়ে আসে। অন্য কবুতরগুলকেও তার সঙ্গিনীর দিকে ভিড়তে দেয় না। এসব দেখে ইকবালের বলে যাওয়া কথা মনে পড়লো আর আমি মনে মনে হাসতে থাকি। হটাৎ একদিন সকালে দেখি কালো কবুতরটি মন খারাফ করে বসে আছে। আশে পাশে তার সঙ্গিনীকে দেখতে পেলাম না। এভাবে অনেক সময় কেটে যাওয়ার পরে চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলাম। কালো কবুতরটি একটা নির্দিষ্ট দিকে মুখ করে বসে আছে। কোন নড়া ছড়া নেই। আমি খুব ভাল করে চার দিক পর্যবেক্ষণ করে কালো কবুতরের সঙ্গিনীকে খুঁজতে লাগলাম। আচমকা আমার মাথা খুব দ্রæত কাজ করতে লাগলো। কালো কবুতরটি যে দিকে মুখ করে বসে আছে সে দিকটায় ইকবালের বাসা। আমি শুনেছি কবুতর অনেক সময় তার পূর্বের মালিকের বাড়ী ফেরত চলে যায়। প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে গেলাম ইকবালের বাসায়। ইকবাল আমাকে দেখে মুচকি হেসে বলল, ‘এত দেরিতে আসলি! ওইটাতো সকাল বেলায় চলে এসেছে’। সে আরও বলল, ‘পাখীদের মধ্যে যেগুলো মেয়ে তারাও বুঝি এমন হয়!’ আমি তার কথায় মুচকি হাসলাম আর ফুটফুটে কবুতরটাকে দেখে স্বস্তি পেলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে তখনি কালো কবুতরটিও সেখানে উড়ে এসে নামলো আর তার সঙ্গিনীর সাথে মেজাজ দেখাতে লাগলো। আমি ভেবে অবাক হলাম সেই সকাল থেকে কালো কবুতরটি জানতো তার সঙ্গিনী কোথায় আছে কিন্তু সে আসেনি। আমি মনে মনে সুখ অনুভব করলাম কালো কবুতরটি বোধহয় তার সঙ্গিনীর চাইতেও আমাকে বেশি ভালবেসে ফেলেছে। যাইহোক, ইকবাল খাবার দিয়ে দুটোকেই ধরে আমাকে আবার দিয়ে দিল। আমি বাসায় এনে পুনরায় তাদের ছেড়ে দিলাম। খুব ভালোই কাটছিল। বাসার সবাই এক আত্মীয়ের বিয়েতে যাবে। আত্মীয়ের বাড়ী শহর থেকে অনেক দূরে একটা গ্রামে। বাসায় কেউ থাকবে না। কবুতর রেখে গেলে দেখার কেউ নেই। তাই আমার সখের কবুতরগুলো খাঁচায় পুরে আমাকেও রওয়ানা হতে হল। যাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলাম তাদেরও কবুতর ছিল। আমার কবুতরগুলোর পাখায় টেপ মেরে রেখে খুব সুন্দরভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করলাম। ফিরে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। রওয়ানার মুহূর্তেই আমার মন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। সে আত্মীয়দের একজন আমার কাছ থেকে আমার প্রিয় কবুতর জোড়া দাবী করে বসলো। আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম ‘আমি কিছুতেই আমার কালো কবুতর কাউকে দিব না’। তিনি সুযোগ নিয়ে বললেন, ‘তাহলে ফুটফুটে যেটা সেটা দাও বলে খাঁচা থেকে হাত দিয়ে কালো কবুতরের সঙ্গিনীকে নিয়ে নিলেন’। অনেক মানুষের সামনে আমি লজ্জায় কিছু বলতে পারিনি। তবে কষ্টে আমার বুক ফেটে যাচ্ছিল। আমি বার বার কালো কবুতরটার দিকে তাকাচ্ছিলাম। বিষণœ মন নিয়ে ফেরত এলাম। বাসায় আসার পর কবুতরগুলো আবার ছেড়ে দিলাম। কালো কবুতরটি একা হয়ে গেল। মন খারাফ করে বসে থাকল। আগের মত খায়না। বাকবাকুম করে ডাকে না। ইকবালের পরামর্শে মার্কেট থেকে আরেকটি মেয়ে কবুতর কিনে আনলাম। জোড়া দেয়ার চেষ্টা করলাম কোন লাভ হল না। আমার উপর ভীষণ অভিমান করলো আমার শখের কালো কবুতরটি। এক সকালে কবুতরের বাসার দরজা খুলে আমার দু চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না। খাবার না খেয়ে শুকিয়ে যাওয়া আমার কালো কবুতরের নিস্তেজ দেহ পড়ে আছে। বুকের ভিতর চিন চিন করে উঠলো। বুকে পাথর বেঁধে সেদিনই বাকি কবুতরগুলো মার্কেটে বিক্রি করে কবুতর পোষার ইতি টানলাম। এখনো কোথাও কবুতর দেখলে বুক ছিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। কালো কবুতরের স্মৃতি মনে পড়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।