সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
লো ক মা ন তা জ : পৌষ মাস। সকালের সূর্য উঠি উঠি করেও উঠতে বেজে যায় দশটা। দশটার আগে কুয়াশায় ঢাকা পড়ে গ্রামটা। কোনোদিন তো সূর্যের দেখাই পাওয়া যায় না। বড় বড় গাছগুলোকে দেখলে মনে হয় এক একটা দৈত্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গ্রামে শীতের তীব্রতা এমনি বেশি হয়। তার ওপর যদি পাশে থাকে হিমালয় পাহাড়। শীতের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবুও কর্মজীবী মানুষের ব্যস্ততা থেমে নেই। কাজ না করলে পেটের ভাত আসবে কোথা থেকে। তাই হাড় কাঁপানো শীতেও কৃষিকাজে ব্যস্ত হতে হয় সাধারণ মানুষের। যারা বৃদ্ধ তাদের জীবন পরিচালনা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। বলছিলাম অন্ধ্র প্রদেশের প্রত্যন্ত এক গ্রামের কথা। যাদের জীবন মানেই কষ্টের। কষ্টের সাথে সংগ্রাম করেই চলে তাদের জীবন-মৃত্যু। কষ্টের সাথে তাদের আরেকটি অশরীরী শক্তির সাথে সংগ্রাম করতে হয়। প্রতি শীতেই সেই অশরীরী শক্তি গ্রামটিতে এসে হানা দেয়। আর সেই অশরীরী শক্তিটি হচ্ছে ডাইনি। হ্যাঁ ডাইনি। আধুনিক যোগে এসেও তাদের ডাইনি নামের অশরীরী শক্তিটির সাথে সংগ্রাম করতে হয়। তবে এমনিতে অনেকের সাথে অনেকের বিভেদ থাকলেও ডাইনির ওপর হামলা চালানোর সময় কারো কোনো বিভেদ কাজ করে না। তখন গ্রামের সব মানুষ এক হয়ে সেই ডাইনিকে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। শীত আর কুয়াশা যত বৃদ্ধি পায় তত বৃদ্ধি পায় ডাইনিদের আনাগোনা। পৌষের প্রথম। এবছর এখন থেকেই কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে গেছে। সেই সাথে কোথাও কোথাও ডাইনি দেখা শুরু হয়ে গেছে। এই আধুনিক যুগেও গ্রামটির মধ্যে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। গ্রামটিতে এখনো কোনো টয়লেট নেই। তাই প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলে যেতে হয় বাঁশ ঝাঁরে নয়তো বা ঝোঁপ জঙ্গলে। কুয়াশার রাতে সেই কাজটি করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তার উপর থাকে যদি ডাইনির ভয়। ইদানীং ডাইনির আনাগোনা একটু বেড়ে গেছে। গ্রামের অনেকেই ডাইনির ছায়া দেখেছে। গেল রাতে মালা রানীর মা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যায় বাঁশঝাড়ে। রাত তখন গভীর। সেই সাথে ছিল ভারি কুয়াশা। মালা রানীর মার একটু দূরেই ছিল ডাইনিটার ছায়া। কুয়াশার জন্য ভালো করে দেখা যায়নি। আবছা দেখেই মালা রানী বুঝতে পেরেছিলেন এটা ডাইনি ছাড়া আর কিছু না। ডাইনিটি সাদা কাপড় পরা ছিল। তাকে দেখেই ডাইনি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। মালতী রানী ডাইনি দেখেই এক চিৎকারে ঘরে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এই নিয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়ে গেছে। এখন তারা কেউ একা ঘর থেকে বের হয় না। ডাইনির হাত থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করার জন্য গ্রামের মাতব্বর সভা ডেকেছেন। সেই সভায় নির্ধারণ করা হবে গ্রামের মানুষদের রক্ষা করার জন্য কি করণীয় হতে পারে। শুক্রবার দুপুর দুইটার পর থেকেই মাতব্বর বাড়ির উঠানে সভা হবে। গ্রামের লোকজন এক এক করে আসতে শুরু করেছে যারা আসছেন একে অপরের সাথে কথাবার্তা বলে নিচ্ছেন। মাতব্বরের জন্য উঠানের এক প্রান্তে একটি চেয়ার রাখা হয়েছে। চেয়ারটি এখনো খালি পড়ে আছে। সবাই দাঁড়িয়ে থাকলেও সেই চেয়ারে বসার অধিকার কারো নেই। মাতব্বর বাড়ির উঠান এখন মানুষে পরিপূর্ণ। সবাই একে অপরের সাথে কথা বলছে। কারো কথাই বোঝা যাচ্ছে না। শুধু শব্দ হচ্ছে। মাতব্বর আসলেন। আর তার আসা দেখেই সবাই চুপ হয়ে গেলেন। উঠান কানায় কানায় পূর্ণ হলেও এখন পিন পড়ারও কোনো শব্দ নেই। মাতব্বর চেয়ারে বসে সবার দিকে তাকালেন। সবার মধ্যেই একটি হতাশা ও আতঙ্কের ছাপ। আতঙ্কটা ডাইনি নিয়ে। যেই ডাইনিকে দেখেই সবাই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। উঠানের মাঝ থেকে এক মাঝ বয়সের লোক দাঁড়িয়ে বলতে লাগলেন, ’মাতব্বর সাহেব এই বছরও ডাইনি গ্রামে আইছে। এখন কিছু একটা করার লাগব। হেই দিন মালা রানীর মা মালতী রানীকে ডাইনি দৌড়ানি দিয়েছিল কোনোমতে দৌড়ে প্রাণ নিয়ে ঘরে ছুটে এসেছে।’ যদিও ওইদিন মালতী রানী একটি ছায়াকে ডাইনি ভেবে দৌড় দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। গ্রামের মানুষ তিল দেখলে তাল বানিয়ে বলে এটাই তাদের স্বভাব। এর মধ্যে আরো একজন মাতব্বরকে তার দেখা ডাইনির বর্ণনা দিলেন। মাতব্বর সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনলেন। শোনার পর সিদ্ধান্ত নিলেন গ্রামে পাহারা বসানোর। গ্রামের যুবক ও মাঝ বয়সের লোক দিয়ে রাতে পাহারা দেওয়া হবে। যদি কোনো ডাইনি চোখে পড়ে তাহলে সবাইকে নিয়ে প্রতিরোধ করা। সম্ভব হলে ডাইনিকে হত্যা করা। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ। রাত থেকেই পাহারা শুরু হলো। গভীর রাতেও যুবকদের হাঁক শোনা যায়। ডাইনিরা সাবধান ধরা পড়লে বাঁচন নাই। এভাবেই চলতে থাকল। গ্রামটিতে শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে গেছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কুয়াশা। কুয়াশার মধ্যে পাহারা দেয়ার কাজটা আরো কঠিন হয়ে গেল। যারা পাহারা দেয় তাদের মধ্যেও ডাইনির ভয় ভর করে বেড়াচ্ছে। এক রাতে ডাইনির আবছা দেখা পেল পাহারায় রত যুবকরা। পাহারায় ছিলেন তখন তিন যুবক। এদের মধ্যে প্রথমে রমেশ সাদা কাপড় পরা ডাইনিকে আবছা দেখতে পায়। এরপর স্বপনকে দেখাতে তাকে ইশারা করে। স্বপন তাকাতেই ডাইনি হাওয়ার সাথে মিলিয়ে যায়। তখন রমেশ পাশের বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানান। এতে সেই বাড়ির মালিক মহেন্দ লাল আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মহেন্দ লালের মা ছিল বৃদ্ধ। সে যুবকদের কথা শুনে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাহিরে বেরিয়ে আসে বৃদ্ধ মহেন্দ লালের মা। এসে যখন শোনে ডাইনি দেখার কথা তখনি মহেন্দ লালের মা কাঁপতে কাঁপতে বলেÑ ঠিকি কইছো আমিও এক সাথে তিনটি ডাইনি দেখেছি। ভগবানের কৃপায় কোনো রকমে প্রাণ নিয়ে ঘরে ছুটে এসেছি। মহেন্দ লাল বিষয়টি শুনে আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কারণ তার মা অনেক বৃদ্ধ। ডাইনিরা কখনো কখনো বৃদ্ধদের উপর ভর করে। গেল বছর শুধু এই গ্রাম থেকেই ৮ বৃদ্ধ ডাইনিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আর তাতে নেতৃত্ব দিয়েছে গ্রামের মাতব্বর। সেই ঘটনা এখনো চোখের সামনে ভাসে মহেন্দ লালের। মহেন্দ লালের বাড়ির পাশে ডাইনি দেখা গেছে এই ঘটনাটি পরদিন সূর্য উঠার আগেই চারদিকে প্রচার হয়ে গেল। সবার মুখে মুখে এখন মহেন্দ লালের বাড়ির নাম। ঘটনাটি এক কথা দুই কথা করে এখন বিশাল এক গল্পে রূপ নিয়েছে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।