নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শ্রীলঙ্কা : ২৮০/৯ (৫০.০ ওভার)
বাংলাদেশ : ২১০/১০ (৪৪.৩ ওভার)
ফল : বাংলাদেশ ৭০ রানে পরাজিত
শামীম চৌধুরী : শ্রীলঙ্কার মাটি থেকে দেশের শততম টেস্ট জয়ের উৎসবটা অনেক বড় আকারে উদ্যাপনের জন্য রেখে দিয়েছিল বাংলাদেশ দল। ওয়ানডে সিরিজ জয়ে উৎসবের পূর্ণতা দেয়ার প্রত্যয় ছিল ক্রিকেটারদের। ডাম্বুলায় ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৯০ রানের জয়ে এই প্রথম শ্রীলঙ্কার মাটি থেকে ছিল ট্রফি জয়ের হাতছানি। ডাম্বুলায় তাসকিনের হ্যাটট্রিকময় দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় কলম্বোর সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে চোখ ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট ফ্যানদের। তবে হয়নি স্বপ্নপূরণ। কর্তৃত্ব দিয়ে শুরু করা সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ৭০ রানে হেরে যাওয়ায়, আর একটি সিরিজের নিষ্পত্তি হয়েছে ড্র’য়ে। বাংলাদেশের সঙ্গে ড্র করতে পেরে আত্মসম্মান বাঁচানোর আনন্দ দেখেছে দর্শক শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটারদের চোখে-মুখে। এই প্রথম শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ১-১ এ ড্র’য়ে ইতিহাস রচনার পর ওয়ানডে সিরিজে ২০১৩’র পুনরাবৃত্তি, ১-১ এ ড্র।
কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর শ্রীলংকার মাটি থেকে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেও সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে শ্রীলঙ্কা সফরে দু’দুটি সিরিজ ড্র’য়ে নিষ্পত্তি করে এই প্রথম নতুন এক ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। সিরিজ শুরুর আগে দু’অধিনায়কের হাতে ট্রফি ফটো সেশনের ছবিটাই পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে যেনো ভিডিও রিপ্লে দেখেছে দর্শক।
প্রথম ১০ ওভারেই ব্যবধান নির্ণিত হয়েছে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে। যে ১০ ওভারে শ্রীলংকার উইকেটহীন ৭৬’র বিপরীতে বাংলাদেশের স্কোর ৬০/৩ ! টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ততে যথার্থ প্রমাণ করতে পারেননি মাশরাফি। ইনিংসের তৃতীয় এবং নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফলো থ্রুতে মাশরাফি গুনাতিলাকার দেয়া রিটার্ন ক্যাচ করেছেন ড্রপ। ৫ রানে লাইফ পেয়ে সেই গুনাতিলাকা ইনিংস টেনে নিয়েছেন ৩৪ পর্যন্ত। গল টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা ১৯৪ রানে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবধান গড়া লংকান টপ অর্ডার কুশল মেন্ডিজ ডাম্বুলায় বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচে ১০২ রানের ইনিংসের পর গতকালও চেনা রূপে (৫৪)। তিসারা পেরেরাকে মাত্র ৪ রানের মাথায় রান আউটে ফিরিয়ে দেয়ার সহজতম সুযোগ হাতছাড়া করেছেন মোসাদ্দেক! বোলারস এন্ডে তার ওই ব্যর্থতার মাশুল দিয়েছে বাংলাদেশ দল শেষ ম্যাচে। ৪ রানে কাটা পড়তে পড়তে বেঁচে যাওয়া তিসারা থেমেছেন ফিফটি পূর্ণ করে (৪০ বলে ৫২)! যে শটে সিঙ্গলে সন্তুষ্ট থাকার কথা, বাংলাদেশ ফিল্ডারদের ক্যাজুয়াল ফিল্ডিংয়ে সেই শটে নিয়েছেন তিসারা ডাবলস! শেষ পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভারে শ্রীলংকার স্কোরশিটে যোগ হয়েছে ৭৭ রান তিসারার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের কারণেই। তাতেই স্কোর ২৮০/৯ পর্যন্ত টেনে নিতে পেরেছে শ্রীলংকা।
নতুন বলে মাশরাফির পাশে অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের পরিবর্তে বাঁ-হাতি কাঁটার মাস্টার মুস্তাফিজুরকে ব্যবহারে সুফল পায়নি বাংলাদেশ দল। প্রথম স্পেলে তার অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে (৩-০-২৫-০) ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে শ্রীলংকা। প্রথম স্পেলে অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের (৩-০-১৯-০) পর শেষ স্পেলে (২-০-১৫-২) ছন্দ ফিরে পাওয়া মাশরাফির শিকার এই ম্যাচে ৩ উইকেট (৩/৬৫)। শেষ দুই স্পেলের ২ উইকেটে মুস্তাফিজুর (২/৫৫) ছন্দে ফেরার চেষ্টা করেছেন।
কলোম্বোর সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবে বাংলাদেশ দলের অতীত মোটেও ভালো নয়, ১০ ম্যাচে জয় মাত্র ১টি, তাও আবার হংকংয়ের মতো আইসিসি’র সহযোগী সদস্যদেশের বিপক্ষে। এই ভেন্যুতে ২৮০/৯ স্কোর অনেক বড়। অতীত রেকর্ডস বলছে তা। তবে এই স্কোর তাড়া করতে যেয়ে দায়িত্বশীল ব্যাটিংকে গুরুত্ব না দিয়ে শুরু থেকে আক্রমণাত্মক কৌশলই হিতে বিপরীত হয়েছে। ইনিংসের চতুর্থ বলে উইকেট কিপার এবং ¯িøপের ফাঁক দিয়ে ভাগ্যক্রমে বাউন্ডারি পেয়েও সতর্ক হননি তামীম, কুলাসাকেরার হাতে রিটার্ন ক্যাচটি নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এভাবে তামীমের (৪) আত্মসমর্পণ, উইকেট কিপারের হাতে সাব্বির (০) নিজেকে সোপর্দ করে, মুশফিকুর (০) শুরুতে ফিরে বাংলাদেশ দলকে ফেলে দিয়েছেন বিপর্যয়ে ( ১১/৩)। সেখান থেকে ৪র্থ জুটির ৭৭ রানে ম্যাচে ফেরার চেষ্টায় রণেভঙ্গ দিয়েছেন সৌম্য, দিলুরুয়ান পেরেরার আউট সাইড অফ ডেলিভারী ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে যেয়ে স্ট্যাম্পিংয়ে কাটা পড়ে (৩৮)। ৩৪তম ফিফটিতে দলের হাল ধরে কভারে সাকিবের (৫৪) ক্যাচ প্র্যাকটিস করে ফিরে আসাও বিরক্তিকর দৃশ্য। শেষ ৬০ বলে ৯৯ রানের টার্গেট কী এমন? প্রথম ম্যাচে শেষ ১০ ওভারে ১০৯ রানে মার মার কাট কাট ব্যাটিং প্রদর্শনী করবে কি করে? শেষ ২ জুটির কাছে এতোটা আশা করা বোকামি। তারপরও ৯ম জুটিতে মিরাজ-তাসকিনের ৬৬ বলে ৫৪ রানে বাংলাদেশ পেরিয়েছে ২শ’। ওয়ানডে অভিষেক ইনিংসেই মিরাজ উদযাপন করেছেন ফিফটি। তাতেই হারের ব্যবধান কমেছে (৭০ রান)।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গত বছরের আগস্টে ওয়ানডে সিরিজে হতাশ বোলিংয়ে দ. আফ্রিকা সফরের দলে জায়গা না পাওয়া পেস বোলার কুলাসাকেরার প্রথম স্পেলেই ( ৫-০-২৩-২) ব্যাকফুটে নামিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং (৪/৩৭), দলে ফেরা লেগ স্পিনার সেকুগে প্রসন্ন (২/৩৩) এবং অফ স্পিনার দিলুরুয়ান পেরেরার (২/৪৭) বোলিংয়ে ৬ বছর পর সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবের ওয়ানডে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে হেসেছে শ্রীলংকা। গত ৬ বছর নিজেদের মাঠে জয়হীন ওয়ানডে সিরিজের রেকর্ড নেই শ্রীলংকার, সেই রেকর্ডকেও সমুন্নত রাখতে পেরেছে শ্রীলংকা। শ্রীলংকাকে বড় ধরনের লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছেন অভিজ্ঞ এই বোলিং ত্রয়ীর সঙ্গে ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভূত হওয়া তিসারা পেরেরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।