পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিলেটে নতুন করে ভাড়াটিয়া তথ্য নিচ্ছে পুলিশ : আতিয়া মহলে এখনো আতঙ্ক : দুই জঙ্গির লাশ দাফন সম্পন্ন
এস এম উমেদ আলী, মৌলভীবাজার থেকে : টানা চারদিন অভিযানের পর মৌলভীবাজার শহরের বড়হাটের জঙ্গি আস্তানা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে পুলিশের বিশেষ ইউনিট সোয়াত। অভিযানের আগে এর নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’। আস্তানায় এক নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছে। নিহতদের একজন সিলেটের আতিয়া মহলের পাশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ সমাপ্ত করে প্রেসব্রিফিং করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান গত ২৫ মার্চ থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির ‘জঙ্গি আস্তানা’ ‘আতিয়া মহলে’ অভিযান পরিচালনা করছিল সেনাবাহিনী। অভিযান চলাকালে সন্ধ্যা ও রাতে ‘আতিয়া মহলের’ অদূরে পরপর দুই দফা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মোট ছয়জন নিহত হন। তারা হলেন পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মোহাম্মদ কায়সার, জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জান্নাতুল ফাহিম, স্থানীয় যুবক ওয়াহিদুল ইসলাম অপু (২৪), শহীদুল (৩০) এবং অজ্ঞাতনামা একজন।
মনিরুল বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল, বড়হাটে তিনজন জঙ্গি আছে। আমরা মোটামুটি নিশ্চিত, এর মধ্যে একজন সিলেটে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তিনিই বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। সঙ্গে অন্য কেউ থাকতে পারে। সঙ্গে যে পুরুষ নিহত হয়েছেন, তিনিও হতে পারেন অন্য কেউও হতে পারেন।
মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমরা এই হত্যাকান্ডের জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য জীবিত ধরার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তাদের ন্যাচারালি বিচার হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম আরো জানান শুক্রবার সন্ধ্যায় অপারেশন স্থগিত করার পর রাতে সোয়াতের সদস্যরা জঙ্গি আস্তানার কাছে গেলে উপস্থিতি টের পেয়ে এক নারী ‘জঙ্গি’ ওই ভবনের ছাদে উঠে দুটি গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। এর মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়, অন্যটি এখনো ঘটনাস্থলেই পড়ে আছে। জঙ্গি দমনে এর আগে লে. কর্নেল আজাদসহ ৯ জন পুলিশের সদস্যকে হারিয়েছেন।
‘ধানক্ষেতে যেখানে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়, সেখানে কাদা-পানি কিন্তু অনেকটা জায়গা নিয়ে অর্থাৎ ধ্বংসক্ষমতাটুকু বোঝা যাচ্ছে। এ কারণেই আমারা খুব সন্তর্পণে কাজ করেছি।’ তবে অভিযান শেষ হলেও চতুর্থ দিনের মতো জঙ্গি আস্তানার আশপাশে বলবৎ রয়েছে ১৪৪ ধারা।
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বড়হাট এলাকায় একটি বাড়ি এবং শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ফতেপুরের নাসিরপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রাখে পুলিশ। এর পর থেকেই এলাকার মানুষ আতঙ্ক ও উৎকন্ঠার মধ্যে ছিল।
নাসির পুরের জঙ্গি আস্তানা গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সোয়াত নিয়ন্ত্রণে নিলেও বড়হাটের আস্তানায় শনিবার দুপুর ১২টায় সোয়াত অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রণে নেয়। জঙ্গি আস্তানা বাড়ি দুটির মালিক লন্ডন প্রবাসি সাইফুল ইসলাম। বড়হাটে নিহত তিন ‘জঙ্গির’ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। শনিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ তিনটি নিয়ে আসা হয়।
চিকিৎসক জানান, এখানে লাশগুলোর ময়নাতদন্ত হবে। তাদের ডিএনএ পরীক্ষার আলামতও সংগ্রহ করা হবে।
এর আগে ফতেপুরের নাসিরপুরে নিহত ৪ শিশু, ২ নারী ও এক যুবকের পরিচয় না পাওয়ায় লাশগুলো শনাক্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখলেও কেউ এখনো তা সনাক্ত করেনি। ফলে সেখান থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।
সিলেটে নতুন করে ভাড়াটিয়া তথ্য নিচ্ছে পুলিশ :
সিলেট অফিস জানায়, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি নামকস্থানে আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে প্রশানসকে। সাধারণ মানুষ থেকে সবাইকে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। তাই এবার নতুন করে সিলেটে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহে নেমেছে পুলিশ।
এদিকে, আতিয়া মহলে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে আশপাশ এলাকায় অনেকটা স্বস্তি ফিরে আসছে। গ্যাস ও বিদ্যুাতের লাইন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আতিয়া মহলে নিহত দুই জঙ্গির লাশ দাফন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টার দিকে বেওয়ারিশ হিসেবে নগরীর হযরত মানিকপীর (রহ.) এর কবরস্থানে তাদেরকে দাফন করা হয়। নিহত জঙ্গিদের একজন হচ্ছে মরজিনা বেগম ও অপরজন তার স্বামী কাওসার বলে ধারণা করছে পুলিশ। এই পরিচয়ে তারা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি পাঠানপাড়ার আতিয়া মহলে বাসা ভাড়া নিয়েছিল। লাশদুটি দাফন করেছেন মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আহসান কবির। তিনি জানান, পুলিশ দুটি লাশ দাফনের জন্য আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। তারা জানিয়েছে, লাশগুলো দক্ষিণ সুরমার ‘আতিয়া মহলে’ নিহত ২ জঙ্গির। তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী। আমরা লাশগুলো দাফন করেছি।
এদিকে, সিলেট মহানগরীতে জঙ্গিরা যাতে আবাস গড়তে না পারে, সে জন্য সকল বাসার ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। দ্রæততম সময়ে নিজ নিজ ভাড়াটিয়াদের তথ্য দিয়ে বাসার মালিকদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট ফরমও দেওয়া হচ্ছে।
সিলেট মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, নগরীর কোন বাসায় নতুন কোন ভাড়াটিয়া ওঠছে, কারা বাসা ছেড়ে যাচ্ছে, এসব বিষয়ে তথ্য থাকলে সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া সহজ হবে। এছাড়া পরিচয় লুকিয়ে কোন ভাড়াটিয়া বাসায় ওঠছে কিনা, তাও যাচাই করা যাবে। আতিয়া মহলে পরিচয় লুকিয়ে ওঠেছিল জঙ্গিরা। এজন্য নগরীর আর কোন বাসায় এমন ছদ্মবেশী রয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে চাইছে পুলিশ।
আতিয়া মহলে অভিযান শেষ হওয়ার পরই নগরীর ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহে জোর দিয়েছে পুলিশ। এজন্য প্রত্যেক ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সাহায্যও নেওয়া হচ্ছে। সিলেটের মহানগরীর অধিভুক্ত প্রত্যেক থানায় রাখা হয়েছে ভাড়াটিয়াদের বিশেষ ফরম। বাড়িওয়ালাদেরকে থানা কিংবা স্থানীয় কাউন্সিলর অফিস থেকে ফরম নিয়ে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সরবরাহ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক বাড়িওয়ালা যাতে প্রশাসনের এই আহŸানের কথা জানতে পারেন এবং সে অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করেন, এজন্য নগরীর প্রত্যেক পাড়া-মহল্লার মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে শুক্রবার জুমআ’র নামাজের পর বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। সামগ্রিক বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার বাসু দেব বণিক বলেন, ‘আমরা ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করছি। থানা ও কাউন্সিলরদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাড়িওয়ালাদের একটি ফরম দেওয়া হচ্ছে, সে ফরমে ভাড়াটিয়াদের সকল তথ্য সরবরাহ করবেন বাড়িওয়ালা।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেজ করছে পুলিশ। অদূরেই সিলেটেও এ ধরনের ডাটাবেজ তৈরির পরিকল্পনা পুলিশ প্রশাসনের রয়েছে।’
এদিকে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি পাঠানপাড়া এলাকা। পাশাপাশি দুইটি সবুজ ভবন। একটি পাঁচতলা, অপরটি চারতলা। উস্তার আলীর মালিকানাধীন এই বাসা দু’টির নাম ‘আতিয়া মহল’। ভবন দুইটির ৪২টি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন শতাধিক ভাড়াটে। ভাড়াটেদের কোলাহলে মুখর থাকতো আতিয়া মহল। কিন্তু গত একসপ্তাহ ধরে আতিয়া মহলের চিত্রভিন্ন। ভেঙে পড়েছে পাঁচতলা ভবনটির সবুজ দেয়াল। কোথাও উড়ে গেছে ভবনের পিলারের অংশ বিশেষ। সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডদের চারদিনের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে আতিয়া মহল। সবুজ দেয়াল ভেঙে বের হওয়া লাল ইট যেন ভবনের কঠিন রক্তক্ষরণের কথাই বলে দিচ্ছে। পুলিশ বেষ্টনিতে থাকা আতিয়া মহলের ভেতর এখনো পড়ে আছে দুই জঙ্গির লাশ। ভবনের ভেতর বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় বিধ্বস্ত এই ভবন এখন হয়ে ওঠেছে ভয়ঙ্কর।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জেদান আল মূসা বলেন- ‘অভিযানের শুরু থেকে আতিয়া মহলের চারপাশে যান ও জন চলাচলে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে নেয়া হয়েছে। এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এখন মানুষ অনেকটা স্বস্তিতে রয়েছে।’
ভবনের ভেতর থেকে বিস্ফোরক অপসারণ ও লাশ উদ্ধারের ব্যাপারে জেদান আল মূসা বলেন- ‘সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয় দল এসে আতিয়া মহলের বিস্ফোরক সরানো কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা এসে ভবনটি রেকি করে গেছে। তবে গতকাল শনিবার বিকাল পর্যন্ত তারা অভিযানে নামেনি। কখন তারা বিস্ফোরক উদ্ধার অভিযানে নামবে এ ব্যাপারে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। বিস্ফোরক সরানোর পরই ভেতরে থাকা দুই জঙ্গির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গত ২৩ মার্চ (শুক্রবার) দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে আতিয়া মহল ঘিরে ফেলে পুলিশ। পরদিন ২৪ মার্চ পুলিশের সাথে অভিযানে যুক্ত হয় র্যাব, সোয়াত ও সেনাবাহিনী। সবশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডোরা চালায় অভিযান। চারদিনের অভিযানে ভবনের ভেতর নিহত হয় এক নারীসহ ৪ জঙ্গি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।