Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবাধে লঙ্ঘন করা হচ্ছে মানবাধিকার

| প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন নাগরিক আকরাম শিবলি ও তার বান্ধবী কেলি ম্যাককরমিক। ১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডার রাজধানী টরন্টো যাচ্ছিলেন তারা। বিমানবন্দরে আটকানো হয় তাদের। পুলিশ তাদের মোবাইলের পাসওয়ার্ড চেয়ে বসে। ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের পাসওয়ার্ড কেন পুলিশকে দেব এমন প্রশ্ন মাথায় আসলেও শিবলি আর কেলি পুলিশের কথা মেনে শেষপর্যন্ত নিজেরে ফোনের পাসওয়ার্ড দিয়ে দেন। তিনদিন পর টরন্টো থেকে ফেরার পথে আবারও বিমানবন্দরে একই বাস্তবতার মুখোমুখি হন তারা। আবারও চাওয়া হয় তাদের মোবাইল ফোনের পাসওয়ার্ড। এবার আর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রশ্নে আপোস করতে চান না শিবলি ও কেলি। শিবলি পুলিশকে নিজ ফোনের পাসওয়ার্ড দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পুলিশ ঘিরে ফেলে তাদের। একজন পুলিশ তার পা চেপে ধরেন এবং একজন গলা। এরপর মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয় তার। বান্ধবী কেলিও তার ফোন এগিয়ে দেন পুলিশের দিকে। কেবল শিবলি-কেলির ওই ঘটনা নয়, অনুসন্ধানে এমন ২৫টি ঘটনা তুলে এনেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ যেখানে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের পাসওয়ার্ড চেয়ে নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণœ করা হয়েছে। মার্কিন সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বিনা ওয়ারেন্টে তল্লাশির ওপরও। এছাড়া ২০১৪ সালের এক রায়েও ওয়ারেন্টবিহীন তল্লাশিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তা সত্তে¡ও বেআইনিভাবে এই ধরনের তল্লাশি চলছে। ক্ষুণœ হচ্ছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার সাংবিধানিক মানবাধিকার। প্রকৃতপক্ষে মুসলিম-প্রধান আট দেশের বিমানে ল্যাপটপ, ট্যাব বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্য পরিবহনে ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে এমন ভোগান্তি বেড়েছে বিমানযাত্রীদের। নিরাপত্তার কারণে অতিরিক্তি তল্লাশি তো আছেই। পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপরে বেআইনি আঘাত বাড়ারও অভিযোগ উঠেছে। এর বিরোধিতা করায় কয়েকজনকে শারীরিক হেনস্তারও শিকার হতে হয়েছে বলেও জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো। সীমান্তে বা প্রবেশমুখে এমন ওয়ারেন্টবিহীন তল্লাশি অনেকদিন ধরেই বিতর্কিত। মার্কিন সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীকে উপজীব্য করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবারই এই প্রক্রিয়ার বিপক্ষে অবস্থানের কথা জানিয়ে আসছে। তারা বলেছেন, এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ মার্কিন সংবিধান অনুসরণ করছে না বলে দাবি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর। ইতোমধ্যে এ নিয়ে মামলা করেছে কিছু সংগঠন। মানবাধিকার সংগঠনগুলা অনেকদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনের ওয়ারেন্টবিহীন তল্লাশি নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের উপর আঘাতের শামিল। স্পষ্টত একে মানবাধিকারের লঙ্ঘন মনে করেন তারা। মোবাইল ফোনে ব্যক্তিগত আলাপ, ছবি থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। তাই এসব জিনিস তল্লাশি একটি ব্যাগ তল্লাশির চেয়ে অনেক বেশি ‘অনধিকার চর্চা’। তা সত্তে¡ও মার্কিন সীমান্ত পুলিশ তাদেরকে ফোন আনলক করতে বাধ্য করছে, কখনও শারীরিক হেনস্তারও শিকার হতে হয়েছে তাদের। জানা যায়, কখনও কখনও সাংবাদিকরাও এমন তল্লাশির শিকার হয়েছেন। তাদের ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া সূত্রের পরিচয়ও থাকে। গত বছর কানাডিয়ান এক সাংবাদিককে মোবাইল ফোন আনলক না করায় ৬ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিলো। এছাড়া সীমান্ত পুলিশরা সবসময় মুসলিমদেরই বেশি লক্ষ্য করে ও হয়রানি করে। কখনও মার্কিন মুসলিমদের, কখনও মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের। ‘কাউন্সিল অফ আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন’ এর করা একটি অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিমানবন্দরে মুসলিমদের বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কি মুসলিম, জিহাদ বিষয়ে আপনার ধারণা কী। তারা মসজিদে যান কিনা এমন প্রশ্নও বাদ যায় না। অভিযোগ করা হয়, সীমান্তে তল্লাশির সময় অনেকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্যও জানতে চাওয়া হয়। গত ডিসেম্বরে মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, খুব শিগগিরই বিদেশি নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের সময় সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য জানতে চাওয়া হবে। পলেটিকো জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদনকারী বিদেশিদের সোশ্যাল মিডিয়া তথ্য সরবরাহের একটি ঐচ্ছিক অপশন দেওয়া শুরু হয়। তবে অনুসন্ধানভিত্তিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্ট-এর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ল্যাপটপসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে মার্কিন নাগরিকসহ অনেকেরই ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক মাধ্যমের তথ্য জানতে চাইছে বর্ডার পুলিশ।’ বিবিসি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ