পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবেগঘন পরিবেশে সিদ্ধান্ত দিলেন আদালত
চট্টগ্রাম ব্যুরো : অবশেষে ঠিকানা পেল সেই একুশ। ডাক্তার পতœী শাকিলা আক্তারের কোলেই যাচ্ছে কুড়িয়ে পাওয়া এ নবজাতক। গতকাল (বুধবার) আদালতের এ সিদ্ধান্ত শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাকিলা। বিয়ে হয়েছে ১৯ বছর, অথচ কোলে কোনো সন্তান নেই। একুশকে পেয়ে আনন্দে কেঁদেছেন তিনি। এসময় তার স্বামী ডা. মো. জাকিরুল ইসলামও ছিলেন আবেগাপ্লুত। আদালতজুড়ে পিনপতন নীরবতার মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও শিশুবিষয়ক বিশেষ আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস একুশকে জিম্মার এই আদেশ দেন। আর এর মধ্য দিয়ে ৩৬ দিন পর অভিভাবক পেল ওই নবজাতক। আদেশে বিচারক চার দফা শর্তও উল্লেখ করেছেন। কিছু শর্ত পূরণ হলেই একুশকে কোলে পাবে শাকিলা।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অতিরিক্ত মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট এম এ ফয়েজ বলেন, শর্তের মধ্যে আছে, জিম্মায় পাওয়া আবেদনকারীকে শিশুটির নামে ১০ লাখ টাকার শিক্ষাবিমা করে প্রমাণপত্র ১০ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে জমা দিতে হবে। তাকে ১৫ দিন পর পর আদালতে এসে শিশুটির সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানাতে হবে। চিকিৎসার কোনোরকম ত্রæটি হলে জিম্মা যে কোনোসময় আদালত বাতিল করতে পারবেন।
এছাড়া শিশুটির প্রকৃত মা-বাবা পাওয়া গেলে প্রমাণসাপেক্ষে তাদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য থাকবেন বলে আদালত আদেশে উল্লেখ করেছেন। আদেশ দেয়ার সময় শিক্ষাবিমার বিষয়ে আদালতের কাছে জানতে চান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। জবাবে আদালত বলেন, শিক্ষাবিমা অবশ্যই শিশুর নামে হবে। অন্য কেউ এই বিমার উপর কোনো ধরনের দাবি রাখতে পারবে না।
শিশু একুশকে জিম্মায় পেতে মোট ১৬ জন আবেদন করেছিলেন। চারজন অনুপস্থিত থাকায় দুই দফায় ১২ জনের শুনানি গ্রহণ করেন আদালত। আদেশ দেয়ার সময় ৯ জন আবেদনকারী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে ৮ জনই নিঃসন্তান।
আবেদনকারী ১২ জনের মধ্যে ১১ জন নিঃসন্তান উল্লেখ করে আদালত আদেশ দেয়ার সময় বলেন, এর মাঝেও আমাকে একজন নিঃসন্তান খুঁজে পেতে হয়েছে। সবার মাঝে একজনকে খুঁজতে গিয়ে আমি নিজেও ব্যথিত হয়েছি। আমার কাছে যদি অনেক শিশু থাকত তাহলে আমি সবার জিম্মায় একটি করে সন্তান দিতাম।
আদেশ দেয়ার সময় বিচারক বলেন, আমি কোনো মহামানব নই। হয়তো এই আদেশে আমি আপনাদের সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারব না। তবে আল্লাহকে যেন সন্তুষ্ট করতে পারি। মানুষের বিচার করবে আল্লাহ।
বিচারক বলেন, এই আদেশ দিতে গিয়ে আমাকে খুনের মামলা থেকেও বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে। অনেক আবেদনকারী শিশুটিকে সম্পত্তি দেয়ার বিষয়ে অনেক কিছুই উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছে শিশুটির সামগ্রিক কল্যাণই মূল বিষয়। এজন্য সব আবেদনকারীর মধ্যে শাকিলার জিম্মায় শিশুটিকে দেয়ার বিষয় আমার কাছে সমীচীন মনে হয়েছে।
আদালত আদেশ পাঠ করার সময় উপস্থিত আবেদনকারী নারীদের প্রায় সকলেই কাঁদছিলেন। ঘোষণার পর শাকিলা কান্নায় ভেঙে পড়েন। শাকিলার আইনজীবী জাহিদ মো. আল ফয়সাল চৌধুরী বলেন, আদালত যেসব শর্ত দিয়েছেন সেগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালন করে শিশুটিকে জিম্মায় নেয়া হবে।
আদালত থেকে বেরিয়ে শাকিলা সাংবাদিকদের বলেন, একজন মা সন্তানকে যেভাবে লালন-পালন করেন আমি সেভাবেই তাকে বড় করে তুলব। আমি খুব খুশি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার কাছে আর কিছু নেই।
শাকিলার স্বামী ডা. মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে। এটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। মনে হচ্ছে দীর্ঘদিনের খরার পর বৃষ্টি হয়েছে। আমি এই বাচ্চার দায়িত্ব পেয়েছি, এজন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আরও যারা একুশকে পাবার জন্য আবেদন করেছিলেন, তাদের প্রতিও আমাদের সহানুভূতি থাকবে। যেহেতু তারাও একুশকে পাবার জন্য আবেদন করেছিলেন, তারা যদি একুশকে ভালোবাসতে চান আমাদের কাছে এসে, আমরা সাদরে গ্রহণ করব। আমরা একুশকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই যেন সে রাষ্ট্রের সম্পদ হতে পারে।
গত ২০ ফেব্রæয়ারি রাতে নগরীর কর্নেলহাট এলাকার লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারসংলগ্ন আবর্জনার ভাগাড় থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে কয়েকজন যুবক। জন্মের পর গর্ভধারিণী মা তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেন আবর্জনার ভাগাড়ে। সেখানে তার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। দরদি ওই যুবকরা নবজাতকটিকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক ও সেবিকাদের প্রাণান্তকর চেষ্টায় সে সুস্থ হয়ে ওঠে। চট্টগ্রাম আদালতের কয়েকজন প্রবীণ আইনজীবী বলছেন, এক নবজাতককে কুড়িয়ে পাওয়া থেকে শুরু করে তাকে সুস্থ করা অতঃপর তার দায়িত্ব নিতে অসংখ্য মানুষের প্রাণান্তকর চেষ্টা প্রমাণ করে সমাজে মূল্যবোধ এখনও হারিয়ে যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।