Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্থানীয়দের নিয়ন্ত্রণে ইবি ছাত্রলীগ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অন্যরা

| প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইবি রিপোর্টার : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ৮তম কাউন্সিল আগামী ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। কমিটিতে আসতে ইতোমধ্যে নেতাকর্মীরা লবিং-গ্রæপিং এবং দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। নেতা হতে আগ্রহীদের অধিকাংশই বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে। জানা গেছে, এবারের কমিটিতেও নেতা হওয়ার দিক দিয়ে এগিয়ে আছে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের স্থানীয়রা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অন্যান্য জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এ যাবৎকাল ১০টি কমিটি গঠিত হয়েছে। গাজীপুরে ক্যাম্পাস থাকাকালীন শাহজাহান আলম সাজু ও আব্দুল কাইয়ুম ছাত্রলীগের ১ম সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ক্যাম্পাস কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহে স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে এই দুই জেলার নেতাকর্মীরাই ইবি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এতে অন্য জেলা থেকে আগত তুখোড় নেতাকর্মীদের অনেকেই ছাত্রলীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। যার কারণে দক্ষ ছাত্রনেতা তৈরি হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ক্যাম্পাসের প্রগতিশীল শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
ছাত্রলীগের সাইফুল-অমিত কমিটির শীর্ষপদে সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অধিকাংশ পদেই স্থানীয়রা ছিল। আসন্ন কমিটিও স্থানীয়দের দিয়ে গঠিত হতে পারে বলে ক্যাম্পাসে গুঞ্জন উঠেছে। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছাত্রলীগের মূলধারার নেতাকর্মীরা পদবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছে। এছাড়া স্থানীয়দের নেতৃত্বে কমিটি থাকায় তারা বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের কোন সুযোগও দিতে চায় না। এমনকি তাদের নেতৃত্বও মানতে চায় না। দক্ষ কেউ নেতা না হওয়ায় বেশিরভাগ সময় ক্যাম্পাস স্থানীয় লোকদের হাতে জিম্মি থাকে। কেননা, ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতারাই তাদেরকে ব্যবহার করে চাকরি-টেন্ডার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড হাসিল করে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে সব সময় নিয়ন্ত্রণ করে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের আওয়ামীলীগ নেতারা। সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশির ভাগ ছাত্রলীগের নেতারা কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার হয়ে থাকে। ছাত্রলীগের আসন্ন কাউন্সিলে তার কোন ব্যতিক্রম ঘটছে না। এবছরও এগিয়ে আছে স্থানীয় নেতারা। এদের মধ্যে কুষ্টিয়া জেলার জুয়েল রানা হালিম। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অনার্স ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তার সেশনের শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স শেষ করলেও সে এখনো মাস্টার্সের পরীক্ষা দেয়নি। এদের মধ্যে আরেকজন বিপ্লব কর্মকার। সে অর্থনীতি বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। অনার্স-মাস্টার্স অনেক আগে শেষ হলেও আসন্ন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী। সজিবুল ইসলাম সজিব আইন বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। সে এখনো পর্যন্ত অনার্স শেষ করতে পারেনি। মাঝে অস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও হয়েছিল। আনিচুর রহমান আনিস ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। অনার্স শেষ হলেও নেতা হওয়ার জন্য মাস্টার্সে একটি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ না করে ছাত্রত্ব ধরে রেখেছে। কুষ্টিয়া থেকে এই চার জনেই নেতা হওয়ার জন্য ব্যাপক লবিং-গ্রæপিং চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ঝিনাইদহ জেলার মধ্যে শাহিনুর রহমান শাহিন বাংলা বিভাগের অনার্স ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। অনার্স শেষ হলেও নেতা হওয়ার জন্য মাস্টার্সের ১টি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রেখেছে। ফাহমিদুর রহমান সেতু অর্থনীতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির প্রচার সম্পাদক। তৌকির মাহফুজ মাসুদ ইংরেজী বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। জামিলুর রেজা সেলিম বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। শাহজাহান কবির সোহেল ইংরেজী বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েও মাস্টার্স শেষ করতে পারেনি।
এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ জেলা সমিতিতে পরিণত হয়েছে। যোগ্যরা নেতৃত্বে আসতে না পারায় সাধারণরা ছাত্রলীগে যোগ দিতে চায় না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কুষ্টিয়া থেকে একজনকে নেতা বানালে ঝিনাইদহ থেকে একজনকে কোটা হিসেবে নেতা বানাতেই হয়।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে ছাত্রলীগের কোন কমিটি গঠন করা হয় না। ছাত্রত্ব ও যোগ্যতায় যারা এগিয়ে থাকে তাদেরকেই মূলত কমিটিতে পদ দেওয়া হয়। যোগ্যদেরকেই ইবি ছাত্রলীগের কমিটিতে মূল্যায়ন করা হবে তবে স্থানীয় কোন ফ্যাক্ট নয়।



 

Show all comments
  • ৩১ মার্চ, ২০১৭, ৯:৩২ পিএম says : 0
    বিপ্লব কর্মকারতো ২০০৮-০৯ হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্থানীয়


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ