Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিআইডব্লিউটিসির প্যাডেল জাহাজগুলোর নিয়মিত মেরামত নেই : যাত্রীসেবা তলানীতে

| প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : অবশেষে দুর্ঘটনাকবলিত পিএস মাহসুদ জাহাজটির তলার পরিপূর্ণ মেরামত শেষে যাত্রী পরিবহনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে নৌ-যানটি বিআইডব্লিউটিসি’র ঢাকা ঘাটে পৌঁছেছে। আজকালের মধ্যেই পিএস মাহসুদ ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুরের বিভিন্ন স্টেশন হয়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জসহ খুলনা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন শুরু করবে বলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল জানিয়েছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার সকালে পিএস মাহসুদ নারায়ণগঞ্জের ধামসরে বিআইডব্লিউটিসি’র দুই নম্বর ডকইার্ডের স্লিপওয়ে থেকে শীতলক্ষা নদীতে ভাসান হয়। গত ২১ফেব্রুয়ারি রাতে বরিশাল থেকে ঢাকা যাবার পথে চালকের ভুলে ভিন্ন পথে চলতে গিয়ে যাত্রী বোঝাই নৌ-যানটি ডুবো চড়ায় আটকা পরে। দুইঘণ্টা পরে ভরা জোয়ারে মাহসুদকে মূল শ্রোতে ভাসানো সম্ভব হলেও এর তলার যথেষ্ট ক্ষতি হয়। এমনকি নৌযানটির তলায় সিমেন্ট প্লাস্টার করে সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা করা হলেও ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে তা যাত্রী পরিবহন থেকে প্রত্যাহার করে গত ২৭ ফেব্রæয়ারি সংস্থার দুই নম্বর ডকইয়ার্ডের সিøপওয়েতে তোলা হয়। সেখানে এর তলার ২৫টি প্লেট পরিবর্তনসহ পরিপূর্ণ মেরামত শেষে একমাসের মাথায় গত মঙ্গলবার পুনরায় আনডক করে গতকালই পিএস মাহসুদকে ঢাকায় নিয়ে আনা হয়েছে।
এর আগে গতবছর ৪ জুলাই রাতের শেষ প্রহরে বরিশাল বন্দরের অদূরে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি বেসরকারি যাত্রীবাহী নৌযানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাহসুদের ব্যপক ক্ষতি হয়। ওই ঘটনায় মাহসুদ-এর লোয়ার ডেকের ক্রু কেবিনে ভ্রমণরত ৫যাত্রী নিহত হওয়া ছাড়াও অন্তত ৫০যাত্রী কমবেশি আহত হয়েছিলেন। দুর্ঘটনার প্রায় ৪মাস পরে ডিসেম্বরের শুরুতে নৌযানটি মেরামত শুরু করে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বেসরকারি নৌযানটির মালিকপক্ষ। ২১ জানুয়ারির মেরামত শেষ করার পরে ২৯ জানুয়ারি মাহসুদ যাত্রী পরিবহনে ফেরার ২৩দিন মাথায় গত ২১ফেবুয়ারি রাতে পুনরায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ফলে পুনরায় নৌযানটি মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডে পাঠাতে হয়। তবে এবারের দুর্ঘটনার পরে মূল কাপ্তানকে নৌযানটি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ২০১৫-এর শেষভাগে ওই কাপ্তান মাহসুদ-এর দায়িত্বলাভের পরে ৭মাসের পরিচালনকালীন সময়ে ছোট বড় ৮টি দুর্ঘটনার শিকার হয় নৌযানটি।
এদিকে দীর্ঘদিনের অবহেলা ও উদাসীনতায় বিআইডবিøউটিসি’র বহরে থাকা ৪টি যাত্রীবাহী প্যাডেল জাহাজের সবগুলোর অবস্থাই এখন খারাপ। এরমধ্যে পিএস অস্ট্রিচ গত ছয়মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। গত ২৬জানুয়ারি নৌযানটি সংস্থার ডকইয়ার্ডে নেয়ার পরে এর কোনো মেরামত কাজই শুরু হয়নি আজ পর্যন্ত। এর তলার মেরামত জরুরি হলেও নানা অজুহাতে তা বিলম্বিত হচ্ছে। এমনকি গত দু’মাসাধীককাল নৌযানটি সংস্থার ডকইয়ার্ডে পড়ে থাকলেও কাঠামোরও জরুরি মেরামতও সংস্কার কাজগুলোও শুরু করতে পারেনি সংস্থাটির কারিগরি পরিদফতর। সর্বশেষ পিএস মাহসুদ আনডক করার পরে অস্ট্রিচ’কে ডকিং করা কথা থাকলেও তা হচ্ছেনা। এখন একটি রো-রো ফেরি ডকিং করার কথা বলে নৌযানটির মেরামত কাজ শুরু আরো অন্তত এক সপ্তাহ বিলম্বিত করা হচ্ছে ।
এদিকে ‘পিএস টার্ন’ জাহাজটির প্যাডেলে গোলযোগের কারণে আজ (বুধবার) নিয়মিত ট্রিপে যাত্রী পরিবহন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। ২০০২সালে নৌযানটিতে নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা হলেও এর প্যডেলসমূহ পুনর্বাসন করা হয়নি। এমনকি নৌযানটির নিয়মিত ডকিংসহ রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত হচ্ছেনা। পুরো নৌযানটির লোয়ার ডেক থেকে শুরু করে উপরের কাঠামোর অবস্থাও অনেকটা পরিত্যক্ত সম্পত্তির মতো। সংস্থার বহরে থাকা ‘পিএস লেপচা’ জাহাজটির প্যডেল থেকে শুরু করে আপার ডেক পর্যন্ত সব কিছুতেই অবহেলার ছাপ স্পষ্ট।
এসব নৌযানে ন্যুন্যতম যাত্রী সেবা বলতেও এখন আর কিছু অবশিষ্ট নেই। গত অর্থ বছরও সংস্থাটির নিট মুনফা প্রায় ৮০কোটি টাকায় পৌঁছলেও যাত্রীবাহী খাতে লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০কোটি টাকা। যাত্রী সেবার নাম করে সংস্থাটির ব্যয়ের বহরে কোনো কমতি নেই। কিন্তু বেশিরভাগ যাত্রীই এখন আর এ সরকারি নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানটির নৌযানে ভ্রমণে আগ্রহী নয় শুধুমাত্র সেবার মান খারাপ বলে।
তবে সংস্থার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল সরেজমিনে নৌযান দুটি পরিদর্শন করে অবিলম্বে রঙ করাসহ প্রয়োজনীয় সব সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি অবিলম্বে পিএস অস্ট্রিচ-এর ডকিংসহ সব ধরনের মেরামত কাজ শুরুরও নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ঢাকা থেকে বরিশাল-মোংলা হয়ে খুলনা পর্যন্ত সপ্তাহে একদিন যে রকেট স্টিমার সার্ভিস চালু করা হয়েছে, সেখানে ব্যয়বহুল এমভি মধুমতির পরিবর্তে মাহসুদ পরিচালন-এর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। প্রায় আড়াইগুন জ্বালানি ব্যায়ের এমভি মধুমতি ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে ঢাকায় ফিরতে প্রতি ট্রিপে প্রায় ৪লাখ টাকা শুধু পরিচালন লোকসান গুনছে। এ রুটে প্যাডেল জাহাজ পরিচালনে সিংহভাগ লোকসান এড়ান সম্ভব হবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ