Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দমন-নীতি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির মধ্যদিয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলার চেষ্টা ব্যর্থ হবে

| প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জঙ্গি হামলার কৌশল বদলে গেছে। দেশে দেশে জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান
ইনকিলাব ডেস্ক : জঙ্গিবাদী হামলা ঠেকাতে গেলে কেবল নিরাপত্তা প্রশ্নটি নিয়ে ভাবলে চলবে না। শুধুই নিরাপত্তা জোরদারের মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলার চেষ্টা করলে তা নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে। নিরাপত্তা প্রশ্ন উপেক্ষা করে একের পর এক ঘটতে থাকবে অনিবার্য সব জঙ্গি হামলা। চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে কেবল সামরিক ও নিরাপত্তাগত পরিসর থেকে জঙ্গিবাদকে না দেখার আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। দমননীতির মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূলের চেষ্টা না করে দেশে দেশে এর মোকাবেলায় জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। দুই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এবং ইন্ডিডেনডেন্ট-এর পৃথক দুই বিশ্লেষণে উপর্যুক্ত মূল্যায়ন বেরিয়ে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বদলে গেছে সা¤প্রতিক জঙ্গি হামলার কৌশল। বদলে গেছে এর ধরন-ধারণ। হামলার জন্য খুব জটিল কিংবা বড় পরিকল্পনার দরকার পড়ছে না। দরকার পড়ছে না ব্যাপক গণবিধ্বংসী কোনও ভারী অস্ত্রেরও। যতো ছোটখাটো জঙ্গিবাদী পদক্ষেপই নেয়া হোক না কেন, কোনও না কোনও মাত্রায় তা সফলতা পাচ্ছে। বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে ঘিরে লন্ডনে সংঘটিত হামলার অনেক কিছুই এখনও অস্পষ্ট। অজানা রয়ে গেছে অনেককিছু। সুনির্দিষ্ট করে কি চেয়েছিলো হামলাকারীরা, জানা যায়নি সে কথাও। তবে একটা বিষয় তো নিশ্চিত। তা হলো, কৌশলের দিক বিবেচনায় নিলে সংঘটিত হামলাটি একেবারে সা¤প্রতিক নতুন ধারার সন্ত্রাস। ফ্রান্সের নিসে এবং বার্লিনে বড়দিনের মার্কেটের সা¤প্রতিক হামলার সঙ্গে এই হামলার মিল রয়েছে। অপর দিকে, ইন্ডিপেনডেন্ট-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ওয়েস্টমিনিস্টারের এই হামলার জন্য যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো অনেকদিন ধরেই প্রস্তুত ছিল। সন্ত্রাসের কাজ শুধু হত্যাই নয় বরং আতঙ্ক ছড়ানো। যেই আতঙ্কে নড়ে যাবে কোনও দেশের নিরাপত্তার ভিত। আর এই হামলাকারী খুব বেশি প্রযুক্তির আশ্রয় নেননি। আগে মনে করা হতো, একটি সন্ত্রাসী হামলা চালাতে ভারী বিস্ফোরক লাগবে। লাগবে সুদীর্ঘ পরিকল্পনা। ইন্ডিপেনডেন্ট আরো বলছে, এসব সন্ত্রাসী হামলার তথ্য উদঘাটনে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা বিশেষ করে এমআই-ফাইভ খুবই দারুণ দারুণ কাজ করে। ২০০৫ সালের আত্মঘাতী হামলার পর থেকে এ বিষয়ে খুবই তৎপর পুলিশ। প্রতিনিয়তই তারা এটা নিয়ে কাজ করছে ও প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তবে এতা কাজ, এতো তৎপরতা, এতো উদ্যোগ জঙ্গিবাদ ঠেকাতে পারেনি। থেমে থাকেনি জঙ্গি হামলা। বরং তা বেড়েছে অতীতের চেয়ে। খবরে বলা হয়েছে, হামলাটি আত্মঘাতী কিংবা আধা-আত্মঘাতী। ছিল না অতিরিক্ত প্রযুক্তিনির্ভরতা, লাগেনি ভারী অস্ত্র। ফ্রান্সের নিসে এবং বার্লিনে বড়দিনের মার্কেটের হামলার কায়দায় গাড়ি ব্যবহৃত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণভাবে। ওই দুই হামলায় লরিচালক কোন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি। ২০১৩ সালে উলউইচ ব্যারাকে লি রিগবি নামের এক সেনাকে গাড়িচাপা দিয়ে মারা হয়। বিষয়টা এখন খুবই পরিষ্কার। একটি সন্ত্রাসী হামলা চালাতে একটি গাড়িই যথেষ্ট। আর এটা থামানোর জন্য খুব বেশি একটা কিছু করার নেই। এখন হয়তো ওয়েস্টমিনিস্টার, হোয়াইট হলসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে জারি হবে নজরদারি। আবার যেন এমন কিছু না ঘটে তার জোর প্রস্তুতিও চলবে চারপাশ জুড়ে। পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণ ছাড়াও রয়েছে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের স্মারক বাকিংহ্যাম প্যালেস... এইসব এলাকার আশপাশজুড়ে হয়তো এমন সুরক্ষা থাকবে যে কেউ গাড়ি চালিয়ে হত্যা করতে পারবে না। প্রাসাদের গেটগুলোও আরও বেশি অবরুদ্ধ হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আসবে নিশ্চিত পরিবর্তন। কিন্তু যেখানে সাধারণেরা থাকেন, ওয়েস্টমিনিস্টার আর লন্ডনের সেইসব রাস্তাগুলো অরক্ষিতই থাকবে। সবখানে একই সুরক্ষা তো সম্ভব নয়। হোয়াইটহলের ওয়েস্টমিনস্টারের প্রাসাদের কোন দর্শনার্থীরা এখন অনেক নিরাপত্তা প্রটোকলের মুখোমুখি হবে। এমন হামলা যেন আর না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে রাস্তার পাশে, হোয়াইট হলের আশপাশের বাড়ি, শপিং মল, পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণসহ সবখানে। এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে যেন গাড়ি হামলা না হয়। বিশেষ করে রাতের বেলা এই নিরাপত্তা বেশি জরুরি। কারণ সে সময় গাড়ির চাপ কম থাকে। প্রাসাদের নিরাপত্তায় দরজায় সবসময়ই নিয়োজিত থাকে রক্ষী। তবে পার্লামেন্টে প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য আগে যে গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হতো, সেই বিষয়েও নতুন কোনও নির্দেশনা আসতে পারে। তবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মধ্য দিয়ে ওয়েসমিনস্টারের কিংবা লন্ডনের প্রতিটা রাস্তায় এভাবে সুরক্ষা দেওয়া তো সম্ভব না। তাহলে কি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আরও তৎপর হয়ে ওঠাটাই সমাধান? তবে কি তাদের আরও অর্থ সরবরাহ করতে হবে, যেন সঠিক তথ্য সবসময় নিতে পারে? এই কাজটিও সহজ হবে না। কারণ যারা এমন হামলা করে থাকে তাদের বিষয়ে তথ্য নেওয়া খুবই কঠিন। অনেক ক্ষেত্রেই হামলাকারীরা আইএস কিংবা আল-কায়েদা থেকে সরাসরি নির্দেশ নাও পেয়ে থাকতে পারে। তারা নিজেরাই উদ্বুদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারে। জঙ্গিবিরোধী প্রশিক্ষণগুলো বেশিরভাগই ছিল একজন সন্ত্রাসীকে কিভাবে পরাস্ত করতে হবে। কখনও বা একটি শহরকে কিভাবে বাঁচাতে হবে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে হবে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, লন্ডনবাসীরা স্বাভাবিকভাকে জীবনযাপন করবেন। এদিকে দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট-এর বিশ্লেষণ বলছে, এই হামলার প্রক্রিয়াটি আগেই অনলাইনে জানিয়েছিলো আল কায়েদা ও আইএসের মতো জঙ্গিগোষ্ঠী। তাদের ইংরেজি ভাষার সাময়িকী ও অনলাইনে এ নিয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছে তারা। এই প্রক্রিয়াটি সহজ এবং না হওয়া পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারবে না। ২০১৩ সালের পর থেকে এমন ১৩টি ভন্ডুল করে দেওয়া সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টার মধ্যে অর্ধেকই ছিল এমন হামলার পরিকল্পনা। যেখানে হয় গাড়ি দিয়ে হামলা চালানো হবে কিংবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে।
চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিশ্বের সব দেশের প্রতি এই আহŸান জানিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন বান কি মুন। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ৭৯ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন তিনি। জঙ্গিবাদের সমস্যা সমাধানে সুশাসন, আইনের শাসন, অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র, সুশিক্ষা এবং কর্মসংস্থানসহ বিশ্ববাসীর মানবাধিকার সমুন্নত রাখার তাগিদ দেন মুন। বিবিসি, ইন্ডিপেনডেন্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ