হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
কামরুল হাসান দর্পণ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) হিসাব অনুযায়ী, ঢাকার জনসংখ্যা এখন ১ কোটি ৭০ লাখ। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান ১১তম। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৪৩ হাজার ৫০০ জন। প্রতিদিন গড়ে জনসংখ্যার সাথে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ১৭০০ জন। এ পরিসংখ্যান তুলে ধরার কারণ হচ্ছে, দিন দিন ঢাকার পরিস্থিতি কতটা খারাপের দিকে যাচ্ছে। শহরটি কীভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ঢাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়া নতুন কিছু নয়। ইতোমধ্যে এই নগরী বিশ্বের সবচেয়ে বসবাস অযোগ্য ও অসভ্য নগরী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ২০১২ এবং ২০১৩ সালে পরপর দুবার দুই নম্বর স্থানে ছিল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রতিবেদনে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে অযোগ্য শহর হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক পরামর্শ সেবাদানকারী সংস্থা মার্সারের করা ‘এইটিনথ কোয়ালিটি অব লাইফ র্যাংকিং’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবনযাপনের মানের দিক থেকে ঢাকা সবচেয়ে নিকৃষ্ট শহরের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। ২৩০ শহরের মধ্যে বসবাসের দিক দিয়ে ঢাকার অবস্থান ২১৪ নম্বরে। গত বছর ছিল ২০৪ নম্বরে। এ বছর ১০ ধাপ নেমে গেছে। জীবনযাপনের মানের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় এ তালিকা তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে ঢাকা স্বপ্নের শহর। ঢাকাই তাদের কাছে বিদেশ-বিভুঁই। জীবন-জীবিকার তাগিদে যেসব বাংলাদেশি প্রবাসে বসবাস করেন, তাদের মনও পড়ে থাকে ঢাকায়। ঢাকাকে নিয়ে সাধারণ-অসাধারণ মানুষের এমন আকুতি সবসময়ই থাকে। তারা প্রিয় শহরকে অনুভব করেন। যত সমস্যা থাকুক, এ শহর ছেড়ে কোথাও যেতে চান না। সবাই ঢাকায় থাকতে চান। প্রত্যেকের মধ্যে এই মনোভাব, যা নাই দেশের অন্যখানে, তা আছে ঢাকায়। ঢাকাই যেন সব সমস্যা সমাধানের সুতিকাগার। ফলে সারা দেশের মানুষের স্রোত ঢাকা অভিমুখে। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের স্থান সংকুলান, কর্মসংস্থান, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষাসেবাসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা দেয়া ঢাকার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাদের ভার বইতে গিয়ে ঢাকা হয়ে পড়েছে ক্লান্ত-শ্রান্ত। এ কথাও ঠিক, ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে প্রতিনিয়ত নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে তা কতটা পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। যত দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার, তত দ্রুত হচ্ছে না। আবার সরকারের একার পক্ষে এই বিশাল কর্মসাধনও কঠিন। ঢাকামুখী জনস্রোত রোধ করা অসম্ভব। সরকার যে কাজটি করতে পারে তা হচ্ছে, ঢাকার সুবিধা দেশের জেলা-উপজেলায় পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণের ব্যবস্থা করা। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-আদালতের সুবিধা, জেলা-উপজেলায় এমনভাবে পৌঁছে দেয়া, যাতে সেখানের মানুষকে ঢাকামুখী না হতে হয়। যদি এমন হয়, একজন রোগীকে উন্নত চিকিৎসা, শিক্ষার্থীকে উন্নত শিক্ষা, বেকারকে চাকরি, দিনমজুরকে কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকায় ছুটে আসতে হয়, তবে ঢাকাকে কোনোভাবেই নির্ভার ও সুষমভাবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
দুই.
ঢাকার ক্ষতি ঢাকায় বসবাসকারী নাগরিকরা যেমন করছে তেমনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতাও ক্ষতি করছে। নগরকে অবাসযোগ্য করে তোলার মতো এমন আত্মঘাতী কর্মকা- বিশ্বের আর কোনো শহরে চলে কিনা, জানা নেই। অথচ এই তিন দশক আগেও ঢাকার পরিবেশ যথেষ্ট ভালো ছিল। বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়া যেত। এখন বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়া দূরে থাক, মাস্ক পরেও একটু বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করা যায় না। ঢাকার বায়ু এতটাই দূষিত। কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মনোঅক্সাইড, শিসাসহ এমন কোনো বিষাক্ত কেমিক্যাল নেই, যা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে না। একেবারে দম বন্ধ হওয়া পরিবেশ। এতে দেশের যে কোনো স্থানের চেয়ে রাজধানীবাসী রোগ-বালাইয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আগামী প্রজন্মের শিশুরা। বলা যায়, তাদেরকে আমরা এক বিষময় পরিবেশের মধ্য দিয়ে বড় করে তুলছি। এটা আগামী প্রজন্মকে পঙ্গু করে দেবে। বিষয়টি নিয়ে নগর কর্তৃপক্ষ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ আছে বলে মনে হয় না। উদ্বেগ থাকলে নিশ্চয়ই পরিস্থিতি উন্নয়নের কিছু না কিছু নমুনা চোখে পড়ত। যে কোনো নগরীর সুস্থ পরিবেশের জন্য সবার আগে প্রয়োজন প্রাকৃতিক পরিবেশ। যান্ত্রিকতার ভিড়ে যত বেশি প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকবে, শহরের পরিবেশও তত ভালো থাকবে। বিষয়টি ফিল্টারের মতো। যান্ত্রিকতা যে পরিমাণ দূষণ ঘটাবে, প্রাকৃতিক পরিবেশ তা শোষণ করে নেবে। পরিবেশে একটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স বজায় থাকবে। ঢাকা শহরে এর কোনো বালাই নেই। যেদিকে তাকানো যাক না কেন, ইট-পাথরের দেয়ালে দৃষ্টি আটকে যায়। এমনকি আকাশও ঠিকমতো দেখা যায় না। অথচ এই ঢাকা শহরই ছিল এক সময় বসবাসের একটি উপযোগী শহর। এর ভেতর এবং চারপাশ দিয়ে যে পরিমাণ খাল, বিল, ঝিল ও পুকুর ছিল, তাতে এটি অনেকটা স্বর্গদ্যোন হিসেবেই পরিগণিত হতো। বিশ্বে এমন নগরী খুব কমই রয়েছে। অথচ এই নগরীটিকে গলাটিপে মেরে ফেলার নিরন্তর কর্মকা- চলছে। ভাবা যায়, এই শহরের ভেতর দিয়ে প্রায় ৪৪টি খাল প্রবাহিত হতো, দুই হাজারের বেশি পুকুর ছিল, অসংখ্য বিল-ঝিল ছিল আর চারপাশে চারটি নদী প্রবাহিত হতো! খালগুলোকে বিবেচনা করা হতো ঢাকার শিরা-উপশিরা। এগুলো নগরীর সৌন্দর্য, পরিবেশগত ভারসাম্য এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সজীব রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। পুকুরগুলো ছিল বিশুদ্ধ পানির আধার। এখন এগুলো এ প্রজন্মের কাছে কেবল স্বপ্নের মতোই মনে হবে। বাস্তবত এসব কিছুই ছিল। এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, গত এক যুগে ঢাকার জলাভূমি ও নিম্নাঞ্চলের ৯০ শতাংশ ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। ঢাকার প্রাণ বলে খ্যাত বুড়িগঙ্গা দখল ও দূষণের কবলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। নদীটি নিয়ে এত টানাহেঁচড়া চলছে যে, এটি এখন বিষাক্ত পানি প্রবাহের মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। একদিকে দখল ও ভরাট করে স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে, অন্যদিকে রাজধানীর আবর্জনা ও শিল্পবর্জ্য নিক্ষিপ্ত হয়ে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নগরবিদরা বারবার তাকিদ দিয়েছেন, ঢাকা শহরকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে খালগুলো সচল রাখতে হবে। খাল, নালা, বিলসহ বিভিন্ন জলাভূমি ও প্লাবন ভূমির অস্তিত্ব বিলোপ হলে রাজধানীর পরিবেশে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে। মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। তাদের এসব কথা কেবল শোনা যায়, নগর পিতারা তা আমলে নেন না। এর ফলে যা হচ্ছে তা হলো, ঢাকা ক্রমশ ভয়ানক পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। খাল, বিল, নদী, পুকুর দখল ও ভরাটের কারণে ঢাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে মারাত্মক পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে ভূমিকম্প বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। ইদানীং প্রায়ই ভূমিকম্প নগরবাসীকে কাঁপিয়ে দিয়ে যায়। নগরবিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মাঝারি মানের ভূমিকম্প হলে রাজধানীর শতকরা ৬০ ভাগের বেশি ভবন ধুলোয় মিশে যাবে। লাখ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটবে। ঢাকা পরিণত হবে মৃত নগরীতে।
তিন.
যে কোনো দেশের রাজধানীর চিত্র সে দেশের সভ্যতা ও উন্নতির মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়। চেহারায় যেমন মানুষের মনের ভাব ফুটে ওঠে, তেমনি রাজধানীর চিত্র দেশের সার্বিক পরিস্থিতির সূচক নির্দেশ করে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের চেয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে পিছিয়ে থাকা এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেগুলোর রাজধানীর চিত্র ঢাকার চেয়ে সুশৃঙ্খল, পরিপাটি ও বাসযোগ্য। মেট্রোপলিটন সিটি বা মাদার সিটি বলতে যা বোঝায়, ঢাকায় তার সবকিছু থাকলেও সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত নয়। একটি মেট্রোপলিটন সিটির মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া। সুদীর্ঘকাল ধরে ঢাকা মেগা সিটি হিসেবে পরিচিতি পেলেও এর গঠন ও বিন্যাস পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি, গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগও খুব একটা লক্ষণ নেই। অপরিকল্পিতভাবে এর বিস্তৃতি ঘটছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা কাক্সিক্ষত মানের নয়। প্রতিদিনই রাজধানীকে যানজটে স্থবির হয়ে পড়তে দেখা যায়। গবেষণায় উঠে এসেছে, শুধু যানজটের কারণে প্রতি বছর দেশের প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। এই বিপুল ক্ষতির বোঝা সামগ্রিক অর্থনীতিকে সুদীর্ঘকাল ধরেই বয়ে চলতে হচ্ছে। বলা যায়, যানজট অর্থনীতির ক্ষত হয়ে আছে। সাধারণত আন্তর্জাতিক মানের একটি শহরে চলাচলের জন্য ২৫ ভাগ রাস্তা থাকে। ঢাকা শহরে রয়েছে মাত্র ৭ থেকে ৮ ভাগ। অর্থাৎ যানজট নিরসন, স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা এবং অর্থনৈতিক কর্মকা- সচল রাখার জন্য যে পরিমাণ রাস্তার প্রয়োজন ঢাকায় তা নেই। যেটুকু আছে, তাও বিভিন্নভাবে দখল হয়ে আছে। নগরবিদরা মনে করছেন, বিদ্যমান রাস্তাগুলোকে যদি পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবহার করা যায়, তাতেও যানজট অনেকাংশে নিরসন সম্ভব। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা প্রয়োজন। নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘একটি নগরের প্রধান দিক হলো পরিবহন ব্যবস্থা। পরিবহন ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল করার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে একটি পরিবহন কৌশলপত্র নেয়া হয়েছিল। সেখানে মেট্রোরেল, কমিউটার ট্রেনকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। দেখা যাচ্ছে, এর বাস্তবায়নে তেমন একটা উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটু তৎপর ও সদিচ্ছা পোষণ করলেই যানজট সমস্যা অনেকটাই সহনীয় করে তোলা সম্ভব। যেমন যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, রাস্তার মাঝপথে বাস থামিয়ে যাত্রী-উঠানামা করানো, রাস্তায় বাজার বসা, ফুটপাত দখল এবং ট্রাফিক নিয়ম না মানার মতো প্রবণতাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে যানজট বহুলাংশে কমে আসবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, সড়কের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। প্রতিদিন নতুন নতুন গাড়ি রাস্তায় নামছে। এ সংখ্যাটি গড়ে প্রায় ২০০। এভাবে যদি গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকে, তবে যানজট কোনোভাবেই নিরসন করা যাবে না। আমরা প্রায়ই শুনি, এক পরিবারের এক গাড়ি করার চিন্তা-ভাবনা সরকার করছে। অথচ এর কোনো বাস্তবায়ন নেই। ফলে যাদের একাধিক গাড়ি কেনার সামর্থ্য রয়েছে, তারা কিনছে এবং কিছু দিন পরপর মডেল চেঞ্জ করছে। যানজটের জন্য এই অধিক সংখ্যক গাড়িও বড় সমস্যা হয়ে রয়েছে।
চার.
ঢাকার সমস্যা এবং একে বাসযোগ্য করে তুলতে কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, তার পরামর্শ ও পরিকল্পনা বহু বছর ধরেই করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। একটু একটু করেও যদি উদ্যোগ নেয়া হতো, তবে উন্নতি দৃশ্যমান হতো। যে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান সম্ভব, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করলে পরিস্থিতি বদলে যেতে সময় লাগবে না। যানজট, পরিবেশ দূষণ, খাল-নদী দখল রোধ এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিতের মতো বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলে সমস্যা সমাধানে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে। এর জন্য প্রয়োজন দৃঢ় পদক্ষেপ। যে কোনো মূল্যে রাজধানীকে বাসযোগ্য করে তুলতে হবেÑ এমন মনোভাব পোষণ করা জরুরি। আমরা যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার কথা বলছি, ঢাকার এমন চিত্র বহাল থাকলে তা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য হবে না। ঢাকাকে বাসযোগ্য ও সুশৃঙ্খল করে তুলতে হলে এর ওপর থেকে চাপ কমাতে হবে। জনসংখ্যার চাপ, প্রশাসনিক কার্যক্রমের চাপ, সুযোগ-সুবিধা কেন্দ্রীভূত করার চাপ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। যদি বিভাগীয় শহরগুলোকে ঢাকার মতো করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে গড়ে তোলা যায়, তবে দেখা যাবে ঢাকার ওপর থেকে চাপ অনেকটাই কমে গেছে। বিভাগীয় শহরগুলোতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মতো পরিবেশ সৃষ্টি করলে সারা দেশের মানুষের ঢাকামুখী প্রবণতা কমবে। কাজেই ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তুলতে হলে ঢাকার প্রশাসন থেকে শুরু করে সুযোগ-সুবিধার বিকেন্দ্রীকরণ করা অপরিহার্য। জেলা-উপজেলার মানুষ যদি তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সেখানে পায়, তবে তাদের ঢাকা আসার প্রয়োজন হবে না। ঢাকার ওপর থেকে চাপ কমাতে এখানে শিল্পকারখানা স্থাপনে নিরুৎসাহী এবং বিদ্যমান শিল্পকারখানা ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে এর ওপর থেকে চাপ অনেকটাই কমবে। ঢাকার সাথে জেলাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থাও সহজ করা প্রয়োজন যাতে মানুষ ঢাকা এসে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে দিনে দিনে নিজ অবস্থানে ফিরে যেতে পারে। নিউইয়র্ক শহর থেকে মানুষ ২০০ কিলোমিটার দূরে বসবাস করেও প্রতিদিন অফিস শেষে বাড়ি ফিরে যেতে পারছে। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গের মানুষও অনেক দূর-দূরান্ত থেকে এসে কলকাতায় অফিস করে ফিরে যায়। ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা যদি এমন করা যায়, তবে দূর-দূরান্তের মানুষ ঢাকায় অফিস করে বাড়ি ফিরে যেতে পারবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।