Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভূরাজনৈতিক অস্থিরতায় কমেছে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ও সম্পদ

| প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ২০১৬ সালে বিশ্বে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ও সম্পদ দুটোই কমেছে। ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও ডলারের বিনিময় হারের কারণে বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পদ আগের চেয়ে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। একই কারণে বিলিয়নেয়ার জনগোষ্ঠীর আকার আগের চেয়ে ৩ দশমিক ১ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়ে ২ হাজার ৩৯৭ হয়েছে। অতি সম্পদশালী ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ-এক্স এ কথা জানিয়েছে। ৩ কোটি ডলারের অধিক সম্পদের মালিক অর্থাৎ আল্ট্রা-হাই-নেট ওয়ার্থ ব্যক্তিদের কেনাকাটা, পছন্দের বিষয়ে তথ্যসেবা ও পরামর্শ দিয়ে থাকে ওয়েলথ-এক্স। সবশেষ শুমারিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ১০০ কোটি ডলার অথবা তারও বেশি সম্পদের মালিকদের জন্য ২০১৬ সাল ছিল উত্তাল সময়। বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে ২০১৬ সালে বিলিয়নেয়ার ব্যবসায়ীদের অনেকের সম্পদ কমেছে। বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পদ আগের চেয়ে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমে হয়েছে ৭ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার। ডলার ছাড়া অন্যান্য মুদ্রায় সম্পদ রেখেছেন, এমন অনেক ধনকুবের ২০১৬ সালে বিলিয়নেয়ার তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছেন। ওয়েলথ-এক্সের গবেষণা বিভাগের পরিচালক মায়া ইমবার্গ বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। এ কারণে বড় ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ব্যবসায়ের মালিকদের সম্পদে প্রভাব পড়েছে। ওয়েলথ-এক্সের শুমারিতে দেখা যায়, গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক বিজয়ের পর পুঁজিবাজারে যে চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হয়, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নেয়াররা লাভবান হয়েছেন। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পদ ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ৬ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারবাজার ও ডলারের চাঙ্গাভাবের কারণে মার্কিন বিলিয়নেয়াররা লাভবান হলেও প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকোর বিলিয়নেয়াররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুদেশের বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পদ যথাক্রমে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। ওয়েলথ-এক্সের শুমারির তথ্যমতে, বিলিয়নেয়ার সংখ্যায় সবচেয়ে বড় পতন দেখেছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। কমোডিটি বাজারে মন্দা, স্থানীয় মুদ্রার দুর্বলতা ও উদীয়মান দেশ থেকে পুঁজির বহিঃপ্রবাহের কারণে এ অঞ্চলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৫ সালে এশীয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিলিয়নেয়ার সংখ্যা ও সম্পদ উভয় ক্ষেত্রেই দুই অংকের প্রবৃদ্ধি ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে এখানে বিলিয়নেয়ার জনগোষ্ঠীর আকার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে; বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় বিলিয়নেয়ার জনগোষ্ঠীর ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সঙ্কোচন ঘটেছে। এ তিনটি অঞ্চলে বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পদ কমেছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। শুমারিতে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশ বিলিয়নেয়ার নিজের সম্পদে ৫ শতাংশের বেশি উত্থান অথবা পতন দেখেছেন। আর প্রতি পাঁচজনে একজন বিলিয়নেয়ার সম্পদের ২০ শতাংশ অথবা তারও বেশি উত্থান-পতন দেখেছেন। অতি সম্পদশালীর সম্পদের অস্থির চরিত্রটি এর মধ্য দিয়ে আরেক দফা স্পষ্ট হলো। ওয়েলথ-এক্সের অর্থনীতিবিদ মায়া ইমবার্গ বলেছেন, চলতি ২০১৭ সালেও বিলিয়নেয়ারদের সম্পদের অস্থিরতা কমবে না। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া থেকে ক্রমাগত পশ্চাদপসরণের ঝুঁকি এক্ষেত্রে একটি ইস্যু হতে পারে। মায়া ইমবার্গ জানান, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া গুটিয়ে যাওয়ার প্রভাব সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব নয়। হয়তো এর প্রতিক্রিয়া যেমন আশঙ্কা করা হচ্ছে, তত গুরুতর হবে না। কিছু বিলিয়নেয়ার এরই মধ্যে নিজেদের ব্যবসায় পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির প্রভাব নিরূপণের কাজ শুরু করেছেন। বেল এয়ার ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজরসের টড মরগান যেসব বিলিয়নেয়ার গ্রাহকের সঙ্গে কাজ করছেন, তারা প্রতি-বিশ্বায়ন সম্পর্কে দেখে-শুনে-বুঝে চলার কৌশল নিয়েছেন। মার্কিন সরকারের বিধিবিধান ও নীতিতে সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কে কয়েকজন বিলিয়নেয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে অধিকাংশই ওয়াশিংটনের পুরো দৃশ্যপট স্পষ্ট হওয়ার আগে পর্যন্ত অপেক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে বিলিয়নেয়ারদের অবস্থা সম্পর্কে ওয়েলথ-এক্সের সঙ্গে আংশিক সাংঘর্ষিক তথ্য দিয়েছে ফোর্বস ম্যাগাজিন। ন্যূনতম ১০ অংকে পরিমেয় সম্পদের মালিকের সংখ্যা ২০১৬ সালে আগের চেয়ে বেড়েছে বলে প্রথিতযশা এ সাময়িকী জানিয়েছে। ফোর্বস ম্যাগাজিন ৩১ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষের তালিকা গ্রন্থনা করছে। তাদের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে বিলিয়নেয়ার তালিকায় ২৩৩টি নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফোর্বসের বিলিয়নেয়ার তালিকা এবার ২ হাজার ৪৩ জনের নতুন দৈর্ঘ্য ছুঁয়েছে। এদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৭ লাখ ৬৭ হাজার কোটি ডলার। ওয়েলথ-এক্সের মতো ফোর্বসও বিলিয়নেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য শেয়ারবাজারের ঊর্ধ্বমুখী গতিকে কৃতিত্ব দিয়েছে। এছাড়া ফোর্বস গত ১২ মাসে তেলের বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর কথাও উল্লেখ করেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ