রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : যাদের এলাকা নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত। এর মধ্যে উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে আমরা বছরে ৩টি ফসল চাষ করছি। উন্নত জাতের ফসল আবাদ করে আমরা আশাতীত ফলন পাচ্ছি। আমাদের ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি। আমাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। গোপালগঞ্জ বেসিনে ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তির পাইলট প্রকল্প আমাদের এলাকার কৃষকের ফসল আবাদে লোকসানের দুঃখ ঘুচাচ্ছে। কথাগুলো বললেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের কৃষক বাতেন চৌধুরী। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরতালা গ্রামের কৃষক মিল্টন সিকদার বলেন, আগে আমরা বোরো ধান ও পাট আবাদ করতাম। বোরো ধান আবাদে সেচ, সার ও কীট নাশক খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে ধানের দাম কম। এ কারণে বোরো চাষ করে লাভ হচ্ছিল না। এছাড়া পাট আবাদ করার পর জাগ দিতে প্রতি বছরই পানির সমস্যা হচ্ছিল। পাট জাগ দিতেও ব্যয় বেড়ে যায়। পাটের বাজার মন্দা যাচ্ছিল। এ অবস্থায় আমরা জমি চাষাবাদ নিয়ে লোকসানের দুঃশ্চিন্তায় ভুগছিলাম। আমাদের আর্থ সামাজিক আবস্থার উন্নয়ন ও ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিতে আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ডাল গবেষণা উপ-কেন্দ্র, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও গোপালগঞ্জ বেসিনে ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তির পাইলট প্রকল্প আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। এখন আমরা একই জমিতে মসুর-মুগডাল-রোপা আমন চাষ করছি। কোন কোন কৃষক সরিষা-মুগডাল-রোপা আমন, ছোলা-বোনা আমন/ছোলা-পাট-রোপা আমনের আবাদ করছেন। নতুন চাষ পদ্ধতিতে আমরা অধিক ফসল ঘরে তুলে লাভের মুখ দেখছি। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার শুকতাইল গ্রামের কৃষক রাজিব চৌধুরী বলেন, গোপালগঞ্জ বেসিনে ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তির পাইলট প্রকল্পই আমাদের একই জমিতে বছরে ৩ ফসল আবাদে উদ্বুদ্ধ করে। প্রকল্প থেকেই উন্নত জাতের বীজ, সার, কীটনাশক ও কৃষি উপকরণ, পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা কম খরচে চাষাবাদ করে অধিক ফসল ঘরে তুলে লাভবান হচ্ছি। প্রকল্পটি আমদের নতুন পথ দেখিয়েছে। আরো কয়েক বছর প্রকল্পের সাথে কাজ করতে পারলে আমরা কৃষিতে চরম উৎকর্ষ সাধন করতে সক্ষম হবো। গোপালগঞ্জ বেসিনে ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তির পাইলট প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় জেলায় ২০১৪ সালে ৭শ’ বিঘা জমিতে মসুর-মুগডাল-রোপা আমন, সরিষা-মুগডাল-রোপা আমন, ছোলা-বোনা আমন/ছোলা-পাট-রোপা আমনের প্রদর্শনী ব্লক স্থাপন করা হয়। প্রথম বছরই কৃষক এসব ফসলের বাম্পার ফলন পেয়ে লাভবান হন। ২০১৫ সালে ১ হাজার ৬শ’ ৫০ বিঘা জমিতে এ জাতীয় ফসলের প্রদর্শনী প্লট করেছে কৃষক। এ ছাড়া জেলার ৫ হাজার কৃষাককে ৫ হাজার বিঘা জমিতে চাষাবাদের জন্য মসুর-সরিষা-ছোলা-মুগডাল ও স্বল্প জীবনকাল বিশিষ্ট রোপা আমান ধানের বীজ প্রকল্পের পক্ষ থেকে বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় প্রতি বছরই লাভজনক এ জাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গোপালগঞ্জ বেসিনে ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তির পাইলট প্রকল্পের সাইড কো অর্ডিনেটর নিখিল রঞ্জন মন্ডল বলেন, গোপালগঞ্জ নি¤œ জলাভূমি অঞ্চল। এ জেলার অধিকাংশ জমিই এক ফসলী। এ সব জমিতে শুধু বোরো ধানের চাষাবাদ হয়। কৃষিতে অধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া না থাকায় এ জেলায় ফসলের নিবিড়তা ছিলো ১৭৬%। অথচ সারাদেশে ফসলের নিবিড়তা ২০১%। গোপালগঞ্জের ৩৫% থেকে ৪০% জমি উঁচু ও মাঝারি উঁচু। এসব জমিতে মসুর-সরিষা-ছোলা-শাক-সবজি-গম আবাদ করা সম্ভব। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ও মাদারীপুর জেলায় এ প্রকল্পের কাজ শুরু করি। গত ২ বছরে এ জেলায় ফসলের নিবিড়তা বেড়ে ১৮৫% এ দাঁড়িয়েছে। সারা জেলায় এ প্রকল্পকে ছড়িয়ে দিতে পারলে গোপালগঞ্জে কৃষির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটবে। গোপালগঞ্জ বেসিনে ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তির পাইলট প্রকল্পের পি.আই ও গাজীপুর ডাল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আশরাফ হোসেন বলেন, জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে চাষাবাদের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বোরো আবাদে প্রচুর সেচের দরকার হয়। দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পানির অপচয় রোধ করে জমির উর্বর শক্তি ঠিক রেখে পরিবেশেবান্ধব চাষাবাদের জন্য আমরা নতুন ফসল বিন্যাস করেছি। বোরো ধান আবাদে আমরা কৃষককে নিরুৎসাহিত করছি। এ মৌসুমে আমরা কৃষকদের দিয়ে সরিষা, মসুর, ছোলার আবাদ করিয়েছি। এরপর তারা এ জমিতে মুগডাল চাষাবাদ করবে। মুগডাল ক্ষেত থেকে ওঠার পর স্বল্প জীবনকাল বিশিষ্ট রোপা আমন ধানের চাষ করবে। এছাড়া তারা সরিষা-মুগডাল-রোপা আমন, ছোলা-বোনা আমন/ছোলা-পাট-রোপা আমনের চাষও করতে পারেন। আমাদের ফসল বিন্যাস পদ্ধতিতে একই জমিতে বছরে ৩টি ফসল ফলাতে সময় লাগছে ২শ’ ৯০ থেকে ২৯৫ দিন। বছরে ৬৫ দিন জমি বিরাম পাচ্ছে। এ পদ্ধতিতে ৩ ফসল চাষাবাদ করে কৃষক বাড়তি ফসল ঘরে তুলে লাভবান হচ্ছেন। ডাল, তৈলবীজ, ধানসহ সব ধরনের ফসল উৎপাদন করে কৃষক স্বয়ম্ভরতা অর্জন করছেন। এতে তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।