পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিমানবন্দর, কারাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার
উমর ফারুক আলহাদী : আবারও জঙ্গি আতঙ্কে আতঙ্কিত দেশের মানুষ। গত শুক্রবার রাজধানীর আশকোনায় নির্মাণাধীন র্যাব সদর দপ্তরে আতঘাতী হামলায় একজন জঙ্গি সদস্য নিহত হয়েছে। গতকাল খিলগাঁও থানা এলাকার শেখের জায়গায় র্যাবের চেক পোস্টে র্যাবের গুলিতে এক জঙ্গি নিহত হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডতে জঙ্গি আস্তানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়েছে।
খিলগাঁও থানার শেখের জায়গায় র্যাবের গুলিতে নিহত যুবকের দেহে ৬-৭টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। আশকোনায় নিহত যুবকের দেহ বিস্ফোরণে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে র্যাবের সদর দপ্তরে আত্মঘাতী এ জঙ্গি হামলা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নাড়া দিয়েছে। সেই সাথে আতঙ্কিত করে তুলেছে দেশের মানুষদের। জঙ্গিদের কর্মতৎপরতা দেখে গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছেন। আর এ আশঙ্কা থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় বিমাবন্দর, কারাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীর প্রবেশ পথসহ বিভিন্ন পয়েন্ট পুলিশের পাশাপাশি বসানো হয়েছে র্যাবের বিশেষ নিরাপত্তা চেক পোস্ট। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলছে র্যাব-পুলিশের বিশেষ নজরদারি। গত রাত থেকে রাজধানীর কমপক্ষে ৭০টি নতুন স্থানে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চেকপোস্ট। গুলশান-বনানীসহ কূটনৈতিক এলাকায় যানবাহন থামিয়ে চলছে দফায় দফায় তল্লাশি। গুলশানের প্রতিটি প্রবেশপথে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। আশকোনায় র্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার চেষ্টা এবং নিহত যুবকের দেহের সাথে শক্তিশালী বাঁধা বোমা ও বিস্ফোরকের সন্ধান পাওয়ার পর র্যাবসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। র্যাবের কর্মকর্তারা মনে করেন, জঙ্গিরা এখন কৌশল পাল্টিয়েছে। সরাসরি আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা ও তৎপরতার বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে জঙ্গিরা বিস্ফোরক মজুদ করছে। পাশাপাশি তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক উদ্বেগ প্রকাশ করলেও আতঙ্কের কিছু নেই বলে তিনি মনে করেন।
আইজিপি বলেছেন, দেশে আইএস-এর কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে ধর্মীয় অপব্যাখ্যায় কিছু লোককে বিভ্রান্ত করে জঙ্গি বানানোর চেষ্টা চলছে। আইন-শৃংখলা বাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সাথে জঙ্গিদের মোকাবেলা করে এদের রুখে দিতে সক্ষম হয়েছে। তিনি দাবি করেন, দেশে বড় ধরনের জঙ্গি হামলার কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ জঙ্গিদের নেট ওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন, দেশের মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনত, সাধারণ মানুষের সহযোগিতা নিয়ে পুলিশ ও র্যাব এ দেশ থেকে জঙ্গিদের নির্মূল করতে সক্ষম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশের স্বার্থেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ জন্য ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ এবং বাড়ি ভাড়া দেয়ার আগে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার পর থানা পুলিশকে জানানোর বিষয়টি নিয়েও আরো কঠোর নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি সদস্যরা প্রতিনিয়ত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ভাড়াটিয়ার পরিচয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে কৌশলে তাদের কর্মকান্ড প্রসারিত করছে। তাই পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্যোগে জঙ্গি তৎপরতা ঠেকাতে সারা দেশে ভাড়াটিয়াদের নজরদারির জন্য আলাদা কর্মকর্তা নিয়োগ করা হচ্ছে। এ সম্পর্কে কাউন্টার টেরোরিজমের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘জঙ্গিরা কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে সেই কৌশলগুলো থানা পুলিশকে কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে এমন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে প্রত্যেকটা জেলায় কিছু অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যাদের কাজ হবে শুধু টেররিজমভিত্তিক তথ্য রাখা।’
এ সম্পর্কে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, যে কোনো এলাকার জঙ্গিদের কার্যক্রম ও কৌশল আগের থেকে অনুধাবন করতে পারলে তাদের ধরাটাও সহজ হয়ে যাবে। তবে একের পর এক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া পুলিশের সন্ত্রাস বিরোধীর ইউনিটের কার্যক্রম আরো জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর দেশব্যাপী ভাড়াটিয়া নিবন্ধন জোরদার করার এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য দুর্গম ও উগ্রবাদ তৎপরতা আছে এমন এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। প্রথমে মিরসরাই পরে সীতাকুন্ডে মাত্র এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে একাধিক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় জানা যায়, ভুয়া তথ্য দিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়েছে জঙ্গিরা। সীতাকুন্ডের এমনি দু’টি বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে নারী-শিশুসহ কয়েকেজন জঙ্গিকে। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক। ঠিক একইভাবে বিস্ফোরক পাওয়া গিয়েছিল মিরসরাইতে। তাছাড়া এর আগে ঢাকার রূপনগর, কল্যাণপুর, আজিমপুর, বসুন্ধরা ও ঢাকার আশপাশে নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়ার মতো এলাকাগুলোতে ভুয়া পরিচয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তৎপরতা চালিয়েছে জঙ্গিরা। তাই জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গত বছর ঢাকায় ভাড়াটিয়া নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয় পুলিশ। ফলে জঙ্গিদের রাজধানীতে অবস্থান হয়ে ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ। গোয়েন্দাদের ধারণা, এ কারণেই মিরসরাই ও সীতাকুন্ডের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোকে বেছে নিচ্ছে জঙ্গিরা। আর এই কারণেই দেশব্যাপী ভাড়াটিয়াদের নজরদারির মধ্যে আনার কথা ভাবছেন গোয়েন্দারা।
র্যাবের গণমাধ্যম ও আইন শাখার প্রধান মুফতি মাহামুদ বলেছেন, সারা দেশেই র্যাবের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীর প্রবেশ পথসহ বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাবের চেকপোস্ট ও টহল দল নিয়োজিত রয়েছে। তিনি বলেন, বড় ধরনের জঙ্গি হামলার কোনো তথ্য নেই। তবে সব ধরনের হামলার আশঙ্কা বিবেচনায় নিয়ে তা মোকাবেলা করতে র্যাব প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গি নির্মূলে র্যাব সব সময়ই কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি বলেন, জঙ্গিবিরোধী অভিযান আরো জোরদার করা হচ্ছে।
র্যাবের একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডেতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান এবং অভিযানে ৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনা, আশকোনায় র্যাব সদর দপ্তরে জঙ্গি হামলার প্রচেষ্টা, খিলগাঁও থানাধীন শেখের জায়গায় র্যাবের চেক পোস্টে গুলিতে নিহত যুবককে জঙ্গি সন্দেহের ঘটনায় সারা দেশেই জঙ্গি আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। আর এ কারণে সারা দেশে র্যাব পুলিশের কড়া সতর্কতা প্রহরা শুরু হয়েছে। রাজধানীর আশকোনায় র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর সব কারাগারে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি দেশের সব বিমানবন্দরে সতর্কতা জারির নির্দেশ দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
এদিকে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, আশকোনায় আত্মঘাতী জঙ্গির বোমা হামলার পর সব কারাগারে রেড অ্যালার্ট জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন মুঠোফোনে জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি থাকবে।
আশকোনার ঘটনার পর আইএস এর দায় শিকার করেছে। তবে পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, দেশে আইএস-এর কোনো অস্তিত্ব নেই। তিনি মনে করেন আইএসে কিছু সমর্থক থাকতে পারে।
ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া আরো বলেন, দেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই, তাদের মতাদর্শী রয়েছে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ধর্মের নামে অপপ্রচার চালিয়ে নাশকতা করছে। এসব ঘটনায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এগুলো মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত। তিনি বলেন, জঙ্গি দমনে পুলিশ সফলভাবে কাজ করছে। জাতীয় পর্যায়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠনের কাজ চলছে। তিনি আরো বলেন, স¤প্রতি ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলোর সম্পর্কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আগাম তথ্য ছিল বলে। তিনি বলেন, এসব ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির সুফিয়া কামাল কমপ্লেক্সে জঙ্গিবাদবিরোধী এক অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, ‘সা¤প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলাগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এসব হামলার আগাম তথ্য আমাদের কাছে ছিল। এসব ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।’
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, আশকোনায় আত্মঘাতী হামলাকারী শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে। সীতাকুন্ড জঙ্গি আস্তানাতেও তারা আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, জঙ্গি গোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে টার্গেট করে আরও হামলা চালাতে পারে। জঙ্গিদের ব্যবহৃত বিস্ফোরকের বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিরা সা¤প্রতিককালে যেসব বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এমন শক্তিশালী বোমা আগে দেখা যায়নি।
একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সংগঠিত হয়ে বিস্ফোরক মজুত করে ধারাবাহিক নাশকতা ও হামলার পরিকল্পনা করছে জঙ্গি গোষ্ঠী। এই জঙ্গি গোষ্ঠীর বিস্ফোরক আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারির কারণে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ঘাঁটি গাড়ার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। বাসা ভাড়া নিয়ে তারা বিস্ফোরণ মজুত করছে। এসব বিস্ফোরক তারা ধারাবাহিকভাবে নাশকতা ও হামলায় ব্যবহারের চেষ্টা করছে।
প্রসঙ্গত শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে র্যাবের প্রস্তাবিত ও নির্মাণাধীন সদর দফতরে আত্মঘাতী হামলা চালায় অজ্ঞাত এক যুবক। প্রস্তাবিত সদর দফতরটি বর্তমানে র্যাবের ব্যারাক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রায় দুইশ’ র্যাব সদস্য সেখানে থাকেন। সংরক্ষিত এলাকাটির চারপাশেই কংক্রিটের দেয়াল। প্রবেশের জন্য একটি প্রধান ফটক রয়েছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টাই থাকে র্যাবের পাহারা। কঠোর নিরাপত্তার পরও সেখানে আত্মঘাতী হামলার পর পুরো এলাকাটি ঘিরে রাখে র্যাব। এমনকি ঘটনার পর প্রথমে থানা পুলিশকেও ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে যান র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় আইন শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়। আশকোনার ঘটনার পর ওই দিন সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন আইজিপি একেএম শহীদুল হক ও র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তারা গাড়িতে করেই র্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরে প্রবেশ করেন। সেখানে ১৫ মিনিট অবস্থানের পর সন্ধ্যা সাতটার দিকে তারা বের হয়ে যান। এসময় সংবাদকর্মীরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা কেউ কথা বলেননি।
গতকাল রাজধানীর খিলগাঁওয়ে শেখের জায়গা এলাকায় র্যাবের চেকপোস্টে হামলাকারী যুবকের শরীরে ৬-৭টি গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সিনিয়র এএসপি আব্দুস সালাম। সকালে ঘটনাস্থলে থেকে আলামত সংগ্রহ করেন ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা। দুপুরে তিনি এ তথ্য জানান। সিনিয়র এএসপি আব্দুস সালাম বলেন, আমরা লাশের ডিএনএ-এর নমুনা সংগ্রহ করেছি। লাশের গায়ে ৬/৭টি গুলির চিহ্ন পেয়েছি। বোমা নিষ্ক্রিয়স্থল থেকেও আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি।
এদিকে গতকাল সকালে র্যাব-৩ এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ জানান, ভোর পৌনে ৫টার দিকে ২০-২৫ বছর বয়সী মোটরসাইকেল আরোহী ওই যুবককে সন্দেহ হলে চেকপোস্টে থাকা র্যাব সদস্যরা তাকে থামার সিগন্যাল দেয়। সে না থামায় তাকে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সে কোথা থেকে আসছিল বা কোথায় যাচ্ছিল সে বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। নিহত যুবক জঙ্গি কিনা এটা তারা এখনও নিশ্চিত নন। রামপুরা-ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার সড়কের মেরাদিয়া থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে মোস্তাক মাঝি মোড়ের আমিন মোহাম্মদ হাউজিংয়ের শেখের জায়গা সড়কের মাঝামাঝি এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। যে এলাকায় ও ঘটনা ঘটেছে তার আশপাশে তেমন বসতি নেই। ঘটনাস্থলের কাছে শুধু একটি টিনের ঘর। আর রাস্তার পাশে র্যাবের একটি চেকপোস্ট রয়েছে। গুলিতে নিহত যুবকের শরীরে বাঁধা বন্ধনীতে কয়েকটি বোমা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র্যাব। র্যাব বলছে, যুবকের সঙ্গে থাকা ব্যাগের মধ্যে হাতে তৈরি বড় একটি বোমা পাওয়া গেছে। বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুই র্যাব সদস্যও আহত হয়েছেন। তাঁরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খিলগাঁও পুলিশ একটি পিকআপে যুবকের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে নিয়ে যায়।
গতকাল শনিবার আমিরন নেছা র্যাবের ব্যারাকে যান। সেখানে গিয়ে তিনি র্যাবের কাছে দাবি করেন, তাঁদের বাড়ি পিরোজপুরে। ঢাকায় রফিক চায়ের দোকানে কাজ করতেন। তিনি পাঁচ দিন আগে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ মেলেনি। যোগাযোগ করা হলে র্যাবের মুখপাত্র এবং আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘একজন নারী এসেছেন। তিনি নিহত ব্যক্তিকে নিজের ছেলে বলে দাবি করেছেন। আমরা যাচাই-বাছাই করছি। মুফতি মাহমুদ খান আরও বলেন, ওই নারী কোথাও নিহত ব্যক্তির ছবি দেখে এখানে এসেছেন। তিনি কোথায় ছবি দেখলেন, আমরা জানি না। কারণ, ওনার ছবি কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশযোগ্য নয় বলে মনে হয়।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।