Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘোড়াশালসহ বন্ধ ৬০টি স্টেশন চালু করলেন রেলমন্ত্রী

৬ মাসের মধ্যে সবগুলো রেল স্টেশন চালু হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম, ঘোড়াশাল (নরসিংদী) থেকে ফিরে : সারাদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৮৮টির মধ্যে ৬০টি রেল স্টেশন চালু হলো। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে জনবল সঙ্কট দেখিয়ে স্টেশনগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সে সময় প্রায় ১০ হাজার রেল কর্মচারীকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রেলমন্ত্রী মো: মুজিবুল হক নরসিংদীর পলাশ থানার ঘোড়াশাল স্টেশনে ফিতা কেটে ৬০টি স্টেশনের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে সারাদেশে বন্ধ হওয়া সবগুলো স্টেশন চালু করা হবে। রেলমন্ত্রী বলেন, রেল স্টেশনগুলো বন্ধ করা হয়েছিল খালেদা জিয়ার আমলে, শেখ হাসিনার আমলে আজ সেগুলো  আবার চালু হলো।
ঘোড়াশাল রেল স্টেশনে রেলওয়ের ৬০টি বন্ধ স্টেশন চালুকরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: ফিরোজ সালাহ উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন নরসিংদী-২ আসনের এমপি কামরুল আশরাফ খান, নরসিংদী-৩ আসনের এমপি আলহাজ সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, স্থানীয় সাবেক এমপি ডা. আনোয়ার আশরাফ খান, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো: আমজাদ হোসেন, পূর্বাঞ্চল (চট্টগ্রাম) রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল হাই প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, পলাশ পৌরসভা মেয়রসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। দুপুরে রেলমন্ত্রীসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ নবনির্মিত ঘোড়াশাল রেল স্টেশনে পৌঁছলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেলমন্ত্রী মো: মুজিবুল হক বলেন,  রেলপথে ভ্রমণ নিরাপদ, আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী। রেলভ্রমণ যাত্রীরা উপভোগ করে। এজন্য সাধারণ জনগণ রেলকে বেশি পছন্দ করে। এটা উপলব্ধি করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেল মন্ত্রণালয় গঠন করেন। তার লক্ষ্য জনগণকে সেবা দেয়া। সেই সেবার মান বাড়ানোর জন্যই তিনি একে একে রেলওয়ের উন্নয়ন করছেন। রেলমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমলে রেলের কোনো উন্নতি হয়নি। কোনো ইঞ্জিন, বগি কেনা হয়নি। রেললাইন সম্প্রসারণ, মেরামত, সংস্কার করা হয়নি। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে ১০ হাজার রেল কর্মচারীকে চাকরি থেকে বিদায় করে দিয়ে রেল স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায় এসে রেলের বাজেট ৫শ’ কোটি টাকা থেকে ১১ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা করেছেন। জনগণের সেবা করতে তিনি রেলকে গণমানুষের পরিবহন বানাতে একে একে উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর পর বাঙালি জাতির জন্য শেখ  হাসিনার মতো কোনো সফল, জনদরদী রাষ্ট্রনায়ক আসেনি। রেলওয়ের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে মুজিবুল হক বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে রেলের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল লাইন নির্মাণকাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকি আছে শুধু লাকসাম-আখাউড়া সেকশন। এটা শেষ হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে অনেক কম সময় লাগবে। তখন বেশি বেশি ট্রেন ও কন্টেইনার চলবে। এতে করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। মন্ত্রী বলেন, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ট্রেন যাবে। খুলনা থেকে মংলা, কাশিয়ানী থেকে গোপালগঞ্জ এবং ঈশ্বরদী থেকে পাবনা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণকাজ চলছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইনের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন হবে। আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, ঢাকার চতুর্দিকে সার্কুলার ট্রেন চালানো যায় কি না তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এটা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে ঢাকা শহরে যানজট বলে কিছু থাকবে না।  রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: ফিরোজ সালাহ উদ্দিন তার প্রথম চাকরি জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন,  উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে এই পলাশ থেকেই আমি চাকরি জীবন শুরু করেছিলাম। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ছিলাম। সেই ঘোড়াশালে বন্ধ স্টেশন চালকরণ অনুষ্ঠানে রেলসচিব হিসেবে নিজেক ধন্য মনে করছি। তিনি নরসিংদীর মানুষের সরলতা ও অতিথিপরায়ণতার প্রশংসা করেন। রেল সচিব বলেন, সে সময় ঘোড়াশাল একটি রেললাইনের ছোট্ট স্টেশন ছিল। সেই স্টেশনটিকেও সঙ্কুচিত করা হয়েছিল। এখন এই স্টেশনে ৬টি লাইন চলছে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক মো: আমজাদ হোসেন বলেন, জনগণের সেবা দিতে রেল এগিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে  রেলের আরো উন্নতি হবে, সেবার মানও বাড়বে। রেল হবে পরিবেশবান্ধব।
নরসিংদী-২ আসনের এমপি কামরুল আশরাফ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য রেলমন্ত্রীর মাধ্যমে রেলের উত্তরোত্তর উন্নতি হচ্ছে। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হককে ধন্যবাদ জানান। নরসিংদী-৩ আসনের এমপি ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য আলহাজ সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, প্রধানমন্ত্রী রেল মন্ত্রণালয় গঠন করে যোগাযোগের বিশাল উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। রেলের বাজেট ৫শ’ কোটি টাকা থেকে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। আগামীতে দেশের প্রতিটি জেলায় রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে আসবে। সাবেক এমপি ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান বলেন, ভিশন টোয়েন্টি ওয়ান বাস্তবায়নের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের দরকার। এর মধ্যে রেল উন্নয়ন অন্যতম। যেভাবে রেল তথা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে তাতে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে তাতে কোনো দ্বিধা নেই।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে রেলমন্ত্রী মো: মুজিবুল হক ফিতা কেটে ৬০টি বন্ধ স্টেশন চালু করেন। এর আগে তিনি নতুন চালু হওয়া ৬০টি স্টেশনের নাম ঘোষণা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ