পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড : চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে দুইটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি আস্তানা থেকে নারীসহ দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে পিস্তল ও বোমা তৈরীর বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। অন্য আস্তানায় অভিযানকালে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। এতে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়। তবে সেখানে পুলিশ-র্যাব, ডিবির সাথে যোগ দিয়েছে প্রশিক্ষিত সোয়াত বাহিনীও। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে। ফলে এলাকায় চরম আতংকের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, চলতি মাসের শুরুতে সীতাকুন্ড পৌরসদরের পশ্চিম আমিরাবাদ গ্রামের সাধন বৈদ্যের মালিকানাধীন ‘সাধন কুঠির’ নামক দোতলা বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষ ভাড়া নেয় এক দম্পতি। তারা নিজেদের নাম জসীম উদ্দিন ও আকলিমা বলে জানায়। তাদের সাথে একটি শিশুপুত্রও রয়েছে। কয়েকদিন পর তাদের সাথে যোগ দেয় আরো দুই ব্যক্তি। কিন্তু তাদের চলাফেরা ছিলো সন্দেহজনক। এলাকার কয়েকজন তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক বলে জানায় মালিককে। গত মঙ্গলবারও এক প্রতিবেশী উক্ত ভাড়াটিয়াদের গতিবিধি সন্দেহজনক বলে মন্তব্য করার পর ভবন মালিক ভাড়াটিয়াদের কাছে গিয়ে তারা কি কাজ করেন জানতে চাইলে তারা জানান, বিভিন্ন মেশিনের সার্কিট তৈরী করে সাপ্লাই দেন তারা। সার্কিটগুলো দেখতে চাইলে তারা কয়েকটি নমুনা দেখান। সেগুলো নিয়ে ভবন মালিক স্থানীয় কয়েকজন টেকনিশিয়ানকে দেখালে তারা বলেন, এ ধরনের সার্কিট বোমা তৈরীতে ব্যবহার করা হতে পারে। এতে আতংকিত হয়ে যান মালিক ও তার পরিবারের সদস্যরা। গতকাল বুধবার তারা ভাড়াটিয়াদের পরিচয়পত্রগুলো যাচাই করে দেখেন সেগুলোও ভুয়া। এতে আরো ভয় পেয়ে মালিকের পুত্র সুরজ বৈদ্য, আরেক ভাড়াটিয়া লিটন উক্ত ভাড়াটিয়ার কাছে গিয়ে তাদেরকে বলেন, আপনাদের পরিচয়পত্র সঠিক নয়। আপনারা মিথ্যা কাগজপত্র দিয়েছেন। তাই আমরা ঘর ভাড়া দেব না। আজই বাড়ি ছেড়ে চলে যান আপনারা। একথা শুনে তারা ক্ষেপে গিয়ে তাদের উপর হামলা করার জন্য পিস্তল বের করে। একথা জানাজানি হলে আশপাশের লোকজন তাদেরকে ঘিরে ফেলে ধরার চেষ্টা করলে কয়েকজনের সাথে জঙ্গিদের ধস্তাধ্বস্তিও হয়। পরে খবর দেওয়া হয় পুলিশে। খবর পেয়ে সীতাকুন্ড থানার পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে বাড়িটি ঘিরে ফেলে। ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী ঐ এলাকার বাসিন্দা সুনন্দ ভট্টাচার্য্য সাগর এই প্রতিবেদককে বলেন, জঙ্গিরা অস্ত্র বের করার খবর পেয়ে আমরা তাদেরকে ধরতে গেলে আমার সাথেও তাদের ধস্তাধস্তি হয়। এতে আমার জামাও ছিঁড়ে গেছে। পরে তারা অস্ত্র দেখিয়ে ঘরে ঢুকে গেলে আমরা পুলিশে খবর দিই। বেলা ৩টার দিকে সেখানে পুলিশ পৌঁছায় এবং বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করে শেষে ঘরের ভেতর থেকে দুই জঙ্গিকে আটক করে। আটককৃত আকলিমা আক্তার ও জসিম উদ্দিন জানায়, তাদের বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায়। তবে পুলিশ তাদের তথ্য যাচাই বাছাই করছে। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড, অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম, পাওয়ার জেল, প্যাকেট কার্বন স্টিলবল, বিস্ফোরক সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। এদিকে সাধন কুটিরে আটক জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে এর আগে তারা সীতাকুন্ড পৌর সদরের প্রেমতলা এলাকায় ‘ছায়া নীড়’ নামক বাড়িতে ভাড়া থাকত। সেখানে এখনো তাদের সঙ্গী সাথী কয়েকজন বসবাস করছে। একথা জেনে পুলিশের একটি টিম প্রেমতলার ছাড়া নীড় নামক ওই ভবনের অভিযান চালাতে গেলে ভবনের ভিতরে থাকা জঙ্গিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গ্রেনেড চার্জ করে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। এসময় পুরো এলাকার মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক (ডিসি) সামশুল আরেফিন, জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম ভূইয়া, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রুহুল আমীন, সীতাকুন্ড থানার ওসি মোঃ ইফতেখার হাসানসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা।
সীতাকুন্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার হাসান বলেন, সীতাকুন্ড পৌর সদরের পশ্চিম আমিরাবাদ এলাকায় সাধন কুটির নামে একটি ভবনের জঙ্গিরা অবস্থান করছিলো। পুলিশ গিয়ে দুই জঙ্গিকে আটক করেছে। তাদের তথ্য তথ্যে প্রেম তলা এলাকায় অপর জঙ্গিদের ধরতে অভিযান চালাতে গেলে জঙ্গিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি গ্রেনেড বিষ্ফোরণ ঘটায়। এসময় সীতাকুন্ড মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোজাম্মেল হক আহত হয়েছেন। তবে সেখানে জঙ্গিদের সংখ্যা বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবং তারা বাহিরে অবস্থানরত পুলিশকে লক্ষ করে কিছুক্ষণ পরপর গুলি ছুঁড়ছে। পুলিশও পাল্টা জবাব দিচ্ছে। ফলে এলাকায় চরম আতংক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ, র্যাব, ডিবির সাথে অভিযানে যোগ দিয়েছে সোয়াতও। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা (রাত ৯টা) পর্যন্ত অভিযান শেষ হয়নি। ছায়ানীড়ে জঙ্গিরা ছাড়াও আরো সাধারণ ভাড়াটিয়া থাকায় অভিযানে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে যেকোন সময় জঙ্গিদের নির্মূলে অভিযান পরিচালিত হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।