Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দাম কমছে ব্যান্ডউইথের

| প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গ্রাহক পর্যায়ে প্রভাব পড়বে না
ফারুক হোসাইন : আবারও কমানো হচ্ছে ব্যান্ডউইথের দাম। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ সরবরাহ শুরু হলেই নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি (বিএসসিসিএল)। বর্তমান মূল্যের ২০ শতাংশ পর্যন্তও কমানো হতে পারে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে ব্যান্ডউইথের দাম কমলেও তা গ্রাহক পর্যায় পর্যন্ত কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন ইন্টারনেট সেবাদানকারী (আইএসপি) প্রতিষ্ঠানগুলো। ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ব্যান্ডউইথের দাম কমালেও গ্রাহক পর্যায়ে তার কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে গতি আগের তুলনায় কিছুটা বাড়বে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পঞ্চম সাবমেরিন ক্যাবলে (বাংলাদেশের দ্বিতীয়) যুক্ত হওয়ায় নতুন করে আরও ১৫০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ পাবে। নতুন এই ব্যান্ডউইথ যুক্ত হলে বাংলাদেশে বাড়বে ইন্টারনেট সেবার মান এবং মূল্য অনেকাংশেই কমে যাবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও এর আগেও ইন্টারনেট সেবার খরচ কমাতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পর ব্যান্ডউইথের দাম কমিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে তা পৌঁছেনি। বরং ইন্টারনেট সেবার মূল্য ও গতি নিয়ে সব সময় অভিযোগ করে আসছেন গ্রাহকরা। কাক্সিক্ষত মূল্যে ইন্টারনেট সেবা এবং নির্দিষ্ট গতি না দেয়ার জন্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও অপারেটরদেরই দায়ী করে আসছেন তারা। এর আগে কয়েক দফা ব্যান্ডউইথের দাম কমালেও তা গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছেনি। এবারও তার পুনরাবৃত্তি হবে বলে মনে করছেন তারা। বিএসসিসিএল সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে প্রতি মেগা ব্যান্ডউইথ বিক্রি হতো ৭২ হাজার টাকায়, ২০০৯ সালে ১২ হাজার টাকা, ২০১১ সালে ১০ হাজার টাকা, ২০১২ সালে ৮ হাজার টাকা এবং বর্তমানে ৬২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ১০ বছরে প্রতি মেগা ব্যান্ডইউথে দাম কমেছে ৭১ হাজার ৩৭৫ টাকা। তবে ব্যান্ডউইথের এই মূল্য কমানোর সাথে সাথে ইন্টারনেটের মূল্য কমানো কিংবা উন্নতমানের সেবা দেবার ক্ষেত্রে ততটা অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে ব্যান্ডউইথের-এর দামের সঙ্গে ইন্টারনেটের দাম কমার সম্পর্ক খুবই কম। কারণ ব্যান্ডউইথ কিনতে তাদের যে টাকা খরচ হয় তা ইন্টারনেট সেবাদানের মোট খরচের মাত্র ৫ থেকে ৮ শতাংশ।
ফলে ব্যান্ডউইথ ফ্রি করে দিলেও তা ইন্টারনেটের দামের ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ আমদানি করতে অন্তত ১৬টি পক্ষ জড়িত থাকে। এদের মধ্যে রয়েছেÑ ইন্টারনেট ট্রানজিট (আইপি ক্লাউড), বিদেশি ডাটা সেন্টারের ভাড়া, দেশি-বিদেশি ব্যাকহল চার্জ, ল্যান্ডিং স্টেশন ভাড়া, কেন্দ্রীয় সার্ভারের পরিবহন খরচ, গেইটওয়ে ভাড়া, আইএসপি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা, এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক ভাড়া, ইন্টারনেট যন্ত্রাংশের ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ধার্য করা ভ্যাট ও শুল্ক, বিটিআরসির রাজস্ব ভাগাভাগি ইত্যাদি। শুধু ব্যান্ডউইথ নয়, এসব পক্ষগুলোর সেবাচার্জ আনুপাতিক হারে কমালেই কেবল ইন্টারনেটের দাম বর্তমানের চেয়ে আরও কমানো সম্ভব বলে তারা জানান। এদিকে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাতে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। প্রস্তাবিত ইন্টারনেটের মূল্যসীমা কার্যকর হলে ঢাকায় ইন্টারনেটের দাম না কমলেও গতি বাড়বে বলে জানানো হয়। একই সঙ্গে ঢাকার বাইরে গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও কমবে। ঢাকায় বর্তমানের চেয়ে গতি দ্বিগুণের বেশি বাড়তে পারে। আর ঢাকার বাইরে বর্তমানের অর্ধেক দামে মিলতে পারে ইন্টারনেট। আইএসপিএবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ও এনটিটিএনগুলোর ব্যান্ডউইথ, পরিবহন ও সেবাচার্জে সিলিং করে না দিলে গ্রাহকপর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমানো যাবে না। এ কারণে সংগঠনটি তাদের প্রস্তাবনায় আইআইজি ও এনটিটিএন-এর চার্জের ওপর সিলিং করার প্রস্তাব দিয়েছে। জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ঢাকায় ইন্টারনেটের যা দাম হওয়া উচিত তার চেয়ে কমই আছে। কারণ, ট্রান্সমিশন চার্জ (ব্যান্ডউইথের পরিবহন খরচ) বেশি। তাই শুধু ট্রান্সমিশন খরচ কমানো গেলেই ইন্টারনেটের দাম কমানো সম্ভব।’ আমিনুল হাকিম বলেন, ‘আমরা ব্যান্ডউইথ কিনতেই মোট ব্যয়ের ৫ ভাগ খরচ করি। বাকি ৯৫ ভাগ খরচ হয়, ট্রান্সমিশন, অফিস ভাড়া, কর্মীদের বেতন, বিটিআরসি’র রাজস্ব, বিদ্যুৎ বিল, এনটিটিএন খরচসহ বিভিন্ন ধরনের খরচ। ফলে ব্যান্ডউইথের দাম কমা মানেই কিন্তু ইন্টারনেটের দাম কমা নয়।’
জানতে চাইলে বিএসসিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যান্ডউইথের দাম পুনঃনির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ পাওয়ার পরপরই তা করা হবে। তবে ঠিক কি পরিমাণ দাম কমানো হবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বর্তমানে বিএসসিসিএলের একটি অফারের হিসেবে ১০ জিবিপিএস ভলিউমের একটি ব্যান্ডউইথের পাইকারি মূল্য প্রতি এমবিপিএস ৫৬২ টাকা। নতুন প্যাকেজগুলো অন্তত ১০ জিবিপিএস হবে বলে জানান মনোয়ার।
এর আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সাথে যুক্ত হওয়ার ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যান্ডউইথের দাম আরও একটু কম করা হবে। বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, খুলনা, যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ইন্টারনেট সেবা আরও স্বল্পমূল্যে দেয়া যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ