পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উমর ফারুক আলহাদী : রাজধানীর ফুট ওভারব্রিজগুলো অপরাধীদের দখলে রয়েছে। ব্যবহার করতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশের নজরদারির অভাব ও অপরাধীদের অবাধ বিচরণের কারণে অধিকাংশ ফুট ওভারব্রিজই ছিনতাইকারী, মাদকসেবী, পতিতা ও ভাসমান অপরাধীদের দখলে রয়েছে। দিনে ভাসমান দোকানদার এবং রাতে এসব অপরাধীরা দখলে নিয়ে মাদক সেবন, কেনা-বেচা ও পতিতাদের নিয়ে অনৈতিক আড্ডায় মেতে ওঠে। দিনেও কম নয়। বিশেষ করে পকেট মার আর হকারদের কারণে এসব ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের উপায় নেই বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে না পেরে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং জেল-জরিমানার ভয় উপেক্ষা করেও বাধ্য হয়েই ফুট ওভার ব্রিজের নীচ দিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন দিনে-রাতে। গত এক সপ্তাহ ধরে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, নানা সমস্যার কারণে পথচারীরা ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে পারছেন না। বিশেষ করে রাজধানীর নিউ মার্কেট, ফার্মগেইট, বনানী, শাহবাগ মোড়, মিরপুর, উত্তরা এলাকার ফুট ওভারব্রিজগুলো পথচারীরা অবাধে চলাচল করেত পারছেন না।
নিউ মার্কেটের ওভারব্রিজে গিয়ে দেখা যায়, ফুট ওভার ব্রিজটির দুই পাশ হকাররা তাদের পসরা সাজিয়ে দখল নিয়ে নিয়ে নির্বিঘেœ ব্যবসা করছে। ফলে হাঁটা-চলার রাস্তা ছোট হয়ে গেছে। ছোট রাস্তা দিয়েই ধাক্কাধাক্কি করে পথচারীদের চলাচল করতে হচ্ছে। আবার রাতেরবেলা ওই স্থানে বসে মাদক কেনা-বেচা ও মাদকসেবীদের জমজমাট আড্ডা। আছে পতিতা ও ছিনতাইকারীদের উৎপাত। রাতে নিউমার্কেটের ওভার ব্রিজটিতে চলাচল করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই হকার ও মাদকের জমজমাট ব্যবসার হাট বসে। সেই সাথে মাদকসেবীদের আড্ডাতো আছেই।
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী সাইদুর রহমানের অভিযোগ, রাতেরবেলা পুলিশের সামনেই মাদকসেবনকারীদের আড্ডা বসে। এসব মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের ওপর রয়েছে রাজনৈতিক দলের কিছু অসাধু নেতার সুনজর। ফলে এদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করতেও কেউ সাহস পায়নি। এছাড়া পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়ে হকার ও পতিতারা এখানে অবস্থান করে। অপর এক ব্যবসায়ী জানান, এলাকার ছাত্রলীগ নামধারী কিছু নেতা ফুট ওভারব্রিজটিকে কেন্দ্র করে নানা অপরাধের ফাঁদ তৈরি করেছে। এরা প্রায়ই নিরীহ পথচারীদের নাজেহাল করে পতিতাদের মাধ্যমে। তারপর আপোষ-মীমাংসার নামে হাতিয়ে নেয় টাকা-পয়সা। আসুদুজ্জামান নামের এক ভুক্তভোগী জানান, ঢাকা কলেজের নাম করে ছাত্রলীগের কিছু পাতি নেতা ওই ওভারব্রিজটি দখলে নিয়েছে। এখানে থানা পুলিশও অপারগ। আসাদুজ্জামান জানান, গত রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি ফুট ওভারব্রিজের ওপর দিয়ে নিউমার্কেটের দিকে যাচ্ছিলেন। এমন সময় ১৭/১৮ বছরের একটি মেয়ে আমার হাত ধরে চিৎকার করতে থাকে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৫/৬ জন যুবক তাকে ঘিরে ধরে। তিনি আরো জানান, এক পর্যায় ওই যুবকরা হাত ধরে টানাটানি করে ঢাকা কলেজের সামনে নিয়ে যায়। তারপর নারী নির্যাতন ও ইভটিজিংয়ের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। এসময় ওই মেয়েটিকে পাশে দাঁড় করিয়ে আপত্তিজনক অবস্থায় যুবকেরা ছবি তোলে। আসাদুজ্জামান আরো জানান, অবস্থা বেগতিক দেখে মানসম্মানের ভয়ে এক পর্যায় ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিতে রাজি হয়। পরবর্তীতে আজিমপুরের বাসা থেকে ছোট ভাই বিকাশের মাধ্যমে ওই যুবকদের একজনের মোবাইল নম্বরে ৭ হাজার টাকা দিয়ে রাত ১১টার দিকে তিনি ছাড়া পান। তিনি আরো জানান, শুধু রাতের বেলা নয়, দিনেও এ ধরনের ঘটনা ওই স্থানে ঘটছে। থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুফল হচ্ছে না। উল্টো অভিযোগকারীকেই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, নিউমার্কেট থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওসি আতিকুর আরো বলেন, ফুট ওভার ব্রিজে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে গিয়ে কোনো সমস্যায় পড়লে তা থানা পুলিশকে জানাতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, মাঝে-মধ্যে ওই স্থানটিতে মাদকসেবীরা একত্র হয়। তবে আমাদের টহল পুলিশের কারণে আড্ডা জমাতে পারে না।
থানার ডিউটি অফিসার সাব ইন্সপেক্টর আবুল হোসেন জানান, রাতের বেলা টহল টিম থাকে ওই এলাকায়। ওই ফুট ওভারব্রিজ থেকে প্রায়ই মাদক ব্যবসায়ী, পতিতা ও ছিনতাইকারী আটক করে আদালতে চালান করা হয়। পরবর্তীতে জামিন নিয়ে বের হয়ে এসে আবারো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ১২৯টি জায়গায় ফুটওভার ব্রিজ থাকার কথা থাকলেও মাত্র ৮৭টি স্থানে রয়েছে ফুটওভার ব্রিজ। আবার এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগেই হকার, ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের দখলে রয়েছে। আবার কিছু ওভারব্রিজ আবর্জনা, ধুলা, মলমূত্রে সয়লাব। ব্রিজ দিনের বেলা হকার, পকেটমার আর রাতের বেলা মাদকসেবী, ছিনতাইকারী ও পতিতাদের দখলে থাকে। এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পোস্টার সরকারি বিভিন্ন অফিসের ব্যানার পোস্টারে ঢেকে আছে গোটা ওভারব্রিজটি। ফলে এসব পোস্টার ব্যানারের আড়ালে চলে নানা অপরাধ। পতিতারাও এখানে দলবেঁধে অবস্থান নেয়। ছিনতাইকারী ও পতিতাদের ভয়ে অনেকেই ফুট ওভারব্রিজটি ব্যবহার করতে সাহস পান না। ফার্মগেট ওভারব্রিজের হকারদের পুলিশ কিছুদিন পর পর উচ্ছেদ করে। কিন্তু উচ্ছেদ করে ফিরে যাওয়ার পর ফের দখলে নেয় হকার। হকার বসার কারণে হাঁটাচলার রাস্তা সরু হয়ে যায়। পথচারীরা ধাক্কাধাক্কি করে ব্রিজ পার হয়। ভিড়ের মধ্যে পকেটমার নির্বিঘেœ তাদের পথচারীদের পকেট মেরে কেটে পড়ে। তবে রাতের অবস্থা আরো ভয়ঙ্কর। রাতে ছিনতাইকারী, মাদকসেবী ও পতিতাদের দখলে থাকে পুরো ব্রিজটি। নিরাপত্তার অভাবে অনেকেই এ ফুট ওভার ব্রিজটি এড়িয়ে চলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজের নিচ দিয়ে পথচারীরা রাস্তা পারাপার হন। ফার্মগেটের উত্তর পাশের ওভারব্রিজটি গিয়ে দেখা যায়, ওই ব্রিজটি দিয়ে মানুষ তেমন চলাচল করে না। ময়লা-আবর্জনা আর নোংরা। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ব্রিজটি অনেক উঁচু হওয়ায় মানুষ চলাচল কম। তবে প্রায় সময় এখানে কিছু মানুষকে শুয়ে থাকতে দেখা যায় আর মানুষ চলাচল কম থাকার কারণে মাদকসেবীরা নিরাপদে মাদক সেবন করে। এছাড়া কাওরান বাজারের ওভারব্রিজটির বেহাল দশা। রাতের বেলা বখাটেদের আড্ডা ও মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। অন্যদিকে বাংলামোটরের ব্রিজে কোনো হকার বসে না। তাই এই ব্রিজ দিয়ে সহজেই মানুষ চলাচল করতে পারে।
হাইকোর্ট থেকে বঙ্গবাজার যাওয়ার পথে একটি ওভারব্রিজ চোখে পড়ে। পথচারী চলাচল না থাকার কারণে ব্রিজটিতে সারাদিন কিছু মানুষ শুয়ে থাকে। আর দিনের বেশিরভাগ সময়ই মাদকসেবীদের আনাগোনা। শাহ্বাগ শিশুপার্কের কাছের ওভার ব্রিজটিতে সবসময় ময়লা আবর্জনা লেগেই থাকে। ভাঙা কাঠ, কাগজ, পলিথিনসহ সব ধরনের আবর্জনাই দেখা যায়। সেতুর নিচে ফুলের বাজার থাকার কারণে মালাগাঁথা, তোড়া বানানো হয় এখানে। এরপর অবশিষ্ট অংশ ফেলে রাখা হয় ব্রিজের সিঁড়িতে। জাদুঘরের সামনের ওভারব্রিজটিও নোংরা। সিগারেট, বিভিন্ন খাবারের মোড়ক, ধুলা-বালু নোংরা। পিজি হাসপাতাল ও বারডেম হাসপাতালের সামনের ব্রিজটিও প্রায় সময় হকারদের দখলে থাকে। ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কের ওভারব্রিজটি সব সময় বিভিন্ন পোস্টার-ব্যানারে ঢাকা থাকে। সেতুর ওপর মলমূত্রে সয়লাব। দুর্গন্ধে নাক চেপে হাঁটতে হয়।
এদিকে ফুট ওভার ব্রিজ না থাকায় বিমানবন্দর-কুড়িল বিশ্ব রোডের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এ সড়কে রাজধানী ও তার বাইরের বিভিন্ন বাস-গাড়ি সবসময় দ্রæত গতিতে চলাচল করে। কিন্তু এ সড়কে কোনো ফুটওভার ব্রিজ নেই। বিশেষ করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আসা রোগীদের প্রায়ই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনো কোনো ফুট ওভারব্রিজ এখন পুরোপুরি অপরাধীদের দখলে। গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় প্রেস ক্লাবসংলগ্ন ওভারব্রিজ এলাকায় দেখা যায় অন্তত ১০ মাদকাসক্ত অবস্থান করছে। ওভারব্রিজের ওপরে বসেই তারা মাদক সেবন করছে। নিচেই পুলিশের বুথ। ওই বুথের ভিতরে ও বাইরে ৭/৮ জন পুলিশকে অলসভাবে বসে থাকতে দেখা গেছে। পাশেই নিñিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীতে সচিবালয়। সন্ধ্যা হলেই ওভারব্রিজটি অপরাধীদের দখলে থাকে। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে। ভয়ে সন্ধ্যার পরে কেউ আর এই ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন না। ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে রাস্তা পার হতে হয়। মাদকাসক্তরা প্রায়ই এখানে ছিনতাই করছে বলে ওই পথচারী জানান।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে দেখা যায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের ওভারব্রিজের ওপরে-নিচে শুয়ে বসে আছে ২০/২২ জন মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে। পাশেই পুলিশের চেকপোস্ট। নিচে কয়েকটি চায়ের দোকান। চায়ের দোকানির সাথে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যা হলে ওভারব্রিজটি অপরাধীদের দখলে চলে যায়। ভয়ে কেউ ওভারব্রিজের ওপরে উঠেন না।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোনো ওভারব্রিজেই বৈদ্যুতিক বাতি নেই। যে কারণে রাতে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকারে পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হয়ে ওঠে। আবার ওভারব্রিজের ওপরেই মাদক কেনাবেচার দৃশ্য দেখা যায়। আন্ডারপাসগুলোরও একই অবস্থা। গুলিস্তান ও ফার্মগেট আন্ডারপাস এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সন্ধ্যা হলে ভয়ে কেউ তা ব্যবহার করেন না। একাধিক পথচারী বলেন, আন্ডারপাসের প্রবেশদ্বারেই দেখা যায় মাদকাসক্তরা অবস্থান করছে। তাদের চেহারা দেখে কেউ আর আন্ডারপাসের ভেতরে ঢুকতে চান না। বাধ্য হন ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হয় পথচারীদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।