বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মো: শামসুল আলম খান : ময়মনসিংহের ভালুকা বন বিভাগের হবিরবাড়ি মৌজার সিডস্টোর আমতলী এলাকায় প্রায় শত কোটি টাকার জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেছে স্থানীয় ভূমি খেকোরা। এ ঘটনায় অভিযোগ উঠার পরেও স্থানীয় বন বিভাগ রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে। এ দখলবাজির প্রেক্ষিতে ময়মনসিংহের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোবিন্দ রায় মামলা দায়ের হয়েছে এমন দাবি করলেও সংশ্লিষ্ট মডেল থানার ওসি মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, মামলা নয়, সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। তাদের পরস্পর বিরোধী এমন বক্তব্যে চলছে তোলপাড়। স্থানীয় এমপি অধ্যাপক ডা: এম.আমান উল্লাহ ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভালুকা রেঞ্জের হবিরবাড়ী মৌজার হবিরবাড়ী বাজার সংলগ্ন ১৫৪ নং দাগের ২০১ একর বনভূমি দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি ভূমিখেকো সিন্ডিকেট। তারা ৫ থেকে ৬ টি দোকান নির্মাণসহ সেখানকার পেছনের বিশালখালী জায়গাটিতে রিং কালভার্ট নির্মাণ কারখানা স্থাপন করছে। স্থানীয় এলাকাবাসী এ বিষয়টি সরকার দলীয় স্থানীয় এমপি ডা: এম.আমান উল্লাহ, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, ভালুকা বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক, রেঞ্জ কর্মকর্তা, বীট কর্মকর্তাগণকে অবহিত করলেও এখন পর্যন্ত বনের জমি দখলমুক্ত কিংবা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান হয়নি।
গত ২৫ ফেব্রুযারী একদল সাংবাদিক স্থানীয় হবিরবাড়ী এলাকায় গেলে কথা হয় ভালুকা বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক আব্দুল ওয়াদুদের সঙ্গে। তিনি জানান, ময়মনসিংহ বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন ভালুকা বনভিাগে ২৩ হাজার একর বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার একর বনভূমি সংরক্ষিত রয়েছে। অথচ বাকি ১৫ হাজার একর বনভূমি দখল হয়ে গেছে।
এ দখলকারী কারা এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত এসব বিষয়ে কৌশলী উত্তর দেন তিনি। বলেন, ‘আমরা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় থাকি। দখলবাজ ভূমিখেকোদের নিয়ে কথা বললে উল্টো বিপদে পড়তে হবে। আর এসব বিষয়ে পুলিশ আমাদের পাশে দাঁড়ায় না।’ তবে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ ভূমিখেকোদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীদের নিবিড় যোগসাজশ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ভালুকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, স্থানীয় বিএনপি নেতা শহীদুল ইসলাম শহীদই বনভূমি দখলকারী। এক যুগ আগেও তার এক শতাংশ ভূমিও ছিল না। কিন্তু এখন তিনি প্রায় ২ থেকে ৩’শ একর জমির মালিক হয়েছেন। বনের জমি দখল করে হয়েছেন শিল্পপতি। আর সেখানে অবৈধভাবে বাউন্ডারী নির্মাণ করে পেয়েছেন ভাউন্ডারী শহীদ উপাধি। শহীদের এসব দখলবাজির পেছনে থেকে শেল্টার দেন স্থানীয় হবিরবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোর্শেদ আলম।
ভালুকা পৌর মেয়র ও আওয়ামীলীগ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: একেএম মেজবাহ উদ্দিন বলেন, সরকারের শতশত কোটি টাকার সম্পদ বনবিভাগের অবহেলার কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ভালুকার সংরক্ষিত বনভূমি এখন বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে। বনবিভাগের সম্পত্তি উদ্বার করার জন্যে তিনি সংশ্লিষ্টদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম মানিক স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ১৫৪ দাগে ২৯৪ একর জমির মধ্যে ২০১ একর বনভূমি বনবিভাগের রযেছে। জেলা প্রশাসকের ১ নং খাস খতিয়ানে এসব জমি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দখলবাজ চক্রটি সকল জমি তাদের দখলে নিয়ে রাতারাতি কাগজ তৈরী করেছে। এ কাগজের ভিত্তিতেই তারা বনের জমি দখল করে নিয়ে নিজেদের মালিকানা দাবী করছে।
তিনি আরো জানান, বনের জমি দখলের ঘটনায় শত শত মামলা হয়। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারী স্থানীয় বীট কর্মকর্তা লোক দেখানো এমনই একটি মামলা করলেও গত ২৪ ফেব্রুয়ারী ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের পাশে আমতলী এলাকায় ভালুকা বনরেঞ্জ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে হবিরবাড়ী মৌজায় বনবিভাগের বনভূমি অবৈধভাবে বাউন্ডারী শহীদ দখল করে নেয়।
উপজেলার হবিরবাড়ি এলাকার কৃষক জুয়েল মিয়া জানান, বাউন্ডারী শহিদ বিএনপি করেন। কিন্তু বর্তমান আওযামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরেও তার প্রভাবে মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত। তার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করতে সাহস পায়না।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বাউন্ডারী শহীদ গোটা এলাকায় এক আতঙ্কের নাম। এক এগারো ও পরবর্তী সময়ে অস্ত্র আইনসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হলেও থামেনি তার বেপরোয়া দখলবাজি। তার জিরো থেকে হিরো হওয়া, রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ার ঘটনার খবর স্থানীয় জনসাধারণের মুখে মুখে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।