Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হত্যার হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বাদীসহ পরিবার

প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (না’গঞ্জ) থেকে ঃ রূপগঞ্জে শিশু সাদমান হোসেন আপন হত্যাকা-ের এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও মামলার তেমন কোন অগ্রগতি নেই। মামলা তুলে না নেয়ায় আসামী পক্ষের লোকজনের অব্যাহত হত্যার হুমকির মুখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাদীসহ তার পরিবারের লোকজন। আর মামলা ঘুরছে এক দুয়ার থেকে আরেক দুয়ারে। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে মামলাটি এখন হিমাগারে। এদিকে, হত্যাকা-ের ঘটনায় আসামীরা জামিনে বেরিয়ে এসে প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়ানোতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসীর মাঝে।
নিহতের পারিবারিক ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, জমি-জমা বিক্রির লেনদেন নিয়ে বিরাব এলাকার ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে একই এলাকার আবু নাসের, মাসুদ ও আবু বাশারের বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধের জের ধরে ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী বিকেলে উল্লেখিত ব্যক্তিসহ তাদের লোকজন জাহিদুল ইসলামের ৫ বছর বয়সী ছেলে সাদমান হোসেন আপনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে অপহরণকারীরা ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলামের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণের ঘটনার তিন দিন পর শিশু সাদমান হোসেন আপনের পিতা জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
এর পর ওই রাতেই পুলিশের বিশেষ অভিযানে আবুল বাশার (৩৭) তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (৩০) ও মাসুদ  (২৪) নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মাসুদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিরাব এলাকা থেকে মাটিতে পুঁতে রাখা শিশু সাদমান মিয়া আপনের লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকারীরা অপহরণের দিন রাতেই শিশু সাদমান হোসেন আপনকে শ্বাসরোধে হত্যার পর বিরাব এলাকায় মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। পরে লাশ উদ্ধারের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। এদিকে গ্রেফতারকৃত মাসুদ হত্যাকান্ডের ঘটনা আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে। এছাড়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় মাজেদা বেগম, মাহাফুজ, বাবু, দুলাল, তামান্না আক্তার ইমু, লিনা আক্তার নামে আরো ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মাসুদ মিয়া জেল হাজতে রয়েছেন। বাকি আসামীরা জামিনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, মামলাটি তদন্ত করতে গত ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল রূপগঞ্জ থানা পুলিশ থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। ইতিপুর্বে শিশু সাদমান হোসেন আপনের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করেছেন।
মামলার বাদী ও শিশু সাদমান হোসেন আপনের পিতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আসামীরা জামিনে বের হয়ে এসে এই বলে হুমকি দেয় যে, একটি হত্যা করলেও ফাঁসি দশটি হত্যা করলেও ফাঁসি। যদি ফাঁসিই হয় তাহলে আরো দশটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটানো হবে। আসামী পক্ষের  এমন হত্যার হুমকির মুখে নিজ এলাকা বিরাব ছেড়ে বর্তমানে অন্যত্র বসবাস করতে হচ্ছে আমাদের। মামলার তদন্তের অগ্রগতির সম্পর্কে জানতে চাইতে গেলে আইও জানিয়ে দেন তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা যাবেনা। এখন বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। ছেলে হত্যার বিচার পাবো কিনা এখন সে অপেক্ষায় রয়েছি। এক মাসের মধ্যে মামলা তদন্ত শেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বললে এক বছরেও এর কোন কূল কিনারা পাওয়া যাচ্ছেনা। বর্তমানে মনে হচ্ছে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে মামলাটি এখন হিমাগারে।
মামলার পুর্বের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তছলিম উদ্দিন বলেন, মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা আমি ছিলাম। বর্তমানে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্তে রয়েছে। এ ব্যাপারে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে সেটা তারাই বলতে পারবে।
মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)-এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাযহারুল ইসলাম বলেন, তদন্ত স্বার্থে এ মামলার ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাবেনা।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) বলেন, যে কোন হত্যাকা-সহ বড় ধরনের ঘটনায় বাদী বা বিবাদী কোন একটি পক্ষ প্রভাবশালী হলে তারা নিজেদের বাঁচাতে ও মামলাটি হালকা করতে বিভিন্ন ভাবে তদবির করিয়ে থানা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বা সিআইডিতে হস্তান্তর করার ব্যবস্থা করে দেন। পরে বিভিন্ন ভাবে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে প্রকৃত অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যার হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বাদীসহ পরিবার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ